একমাত্র এমআরআই যন্ত্র ঠিক করতে ৪২ বার চিঠি
Published: 26th, April 2025 GMT
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের লাখো রোগীর দুর্দশা কোনোভাবেই কাটছে না। চার বছর ধরে অচল পড়ে আছে অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাগনেটিক রিজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) যন্ত্রটি। এ যন্ত্রের রোগ সারাতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চার বছরে ৪২ বার চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতবার চিঠি দেওয়ার পরও ঘুম ভাঙেনি প্রশাসনের।
এদিকে বছরের পর বছর যন্ত্রটি নষ্ট থাকায় প্রতিদিন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক রোগী। সরকারিভাবে মাত্র ৩ হাজার টাকায় যে এমআরআই পরীক্ষা চমেকে করানো যায়, বেসরকারি হাসপাতালে সেটি করতে গুনতে হয় ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা, যা একজন স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে বহন করা অসম্ভব। এ পর্যন্ত একাধিক টিম যন্ত্রটি দেখে গেলেও হয়নি সমস্যার সমাধান। এখন এটি সচলে প্রয়োজন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ব্যাটারি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সেটি চীন থেকে এসেছে, এখন অপেক্ষা প্রতিস্থাপনের।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৭ সালে ১০ কোটি টাকা মূল্যের জাপানি হিটাচি ব্র্যান্ডের এমআরআই যন্ত্রটি চমেক হাসপাতালে বরাদ্দ দেয়। পরে ঢাকার মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড মেশিনটি সরবরাহ করে। ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিলে শুরু হয় এটির সেবা কার্যক্রম। তিন বছরের ওয়ারেন্টির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই এটি ২০২০ সালের অক্টোবরে অচল হয়ে পড়ে। প্রায় সাত মাস পর ২০২১ সালের মে মাসে এটি মেরামত করে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এর এক মাস না যেতেই ফের অকেজো হয়ে পড়ে যন্ত্রটি। সেই থেকে এখনও অচল পড়ে আছে। এর পর থেকে এমআরআই কক্ষে ঝুলছে তালা। তাই একাধিকবার গিয়েও পরীক্ষা না করে ফিরে যেতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনকে। আবার তাদের কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, যন্ত্রটি সচল করতে গত চার বছরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ নিমিউ অ্যান্ড টিসি, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক দপ্তরে ৪২ বার চিঠি পাঠানো হয়েছে। এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে ফাইল যেতে বিলম্ব হওয়া, অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নানা ছলচাতুরী, দায়িত্বশীলদের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে যন্ত্রটি এখনও সচল করা সম্ভব হয়নি।
হাসপাতালের পক্ষ থেকে পাঠানো একাধিক চিঠিতে ‘বিষয়টি অতীব জরুরি’ বলেও উল্লেখ করা হয়। যন্ত্রটি মেরামতে প্রায় ৭ কোটি টাকা প্রয়োজন।
এই অঞ্চলের কয়েক লাখ রোগীর একমাত্র ভরসার ২ হাজার ২০০ শয্যার চমেক হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় চার হাজার। প্রতিদিন শুধু বহির্বিভাগেই চিকিৎসা নেন আরও তিন হাজার রোগী। এর মধ্যে প্রতিদিন দুই শতাধিকের বেশি রোগীকে এমআরআই পরীক্ষার জন্য রেফার করেন বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকরা।
মায়ের এমআরআই করাতে আসা ছেলে বখতিয়ার হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পাওয়ায় চিকিৎসক মায়ের এমআরআই পরীক্ষার পরামর্শ দেন। পরীক্ষাটি করাতে গিয়ে একাধিকবার ফিরে আসতে হয়েছে। যন্ত্রটি কখন সচল হবে, সেটিও নিশ্চিত করতে পারছে না কেউ। আমার মতো অনেক রোগীর পক্ষে বাড়তি খরচে বেসরকারিতে পরীক্ষা করানো অসম্ভব।
চিকিৎসকদের মতে, মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্নায়ু, টিউমার, স্ট্রোক, মেরুদণ্ড, লিগামেন্টসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের সূক্ষ্ম রোগ নির্ণয়ের জন্য এমআরআই পরীক্ষা জরুরি। এটির রিপোর্ট পাওয়া সাপেক্ষেই মুমূর্ষু রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিমিউ অ্যান্ড টিসি বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এটি সচলে আর্থিক, প্রশাসনিক অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একাধিকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নানাভাবে গড়িমসি করা হয়েছে। এ কারণেই সারানো সম্ভব হয়নি।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন সমকালকে বলেন, কয়েকদিন আগে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি এসেছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা যন্ত্রটি সচলে এরই মধ্যে যাবতীয় কাজ শুরু করেছেন। তারা পরীক্ষামূলকভাবে কিছুদিন এটির কার্যক্রম তদারকি করবেন। তাদের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পাওয়া সাপেক্ষে তা রোগীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। নতুন ব্যাটারির পাশাপাশি এমআরআই যন্ত্রটিতে আরও বেশ কিছু যন্ত্রপাতি সংযোজনের প্রয়োজন হচ্ছে। টানা কয়েক বছর এটি বন্ধ থাকায় পুরোপুরি সচলে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করছি সপ্তাহের মধ্যে এটি আবারও সচল হবে। এটি যত তাড়াতাড়ি সচল হবে, তা রোগী-স্বজনদের মতো আমাদের মাঝেও স্বস্তি ফিরবে।
জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সভাপতি ডা.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ র বছর সরবর হ এক ধ ক
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।