পপকর্নের ফেরিওয়ালা হোসাইন আবার স্কুলে ফিরতে চায়
Published: 27th, April 2025 GMT
মাথায় ছেঁড়া ক্যাপ, পরনে ধূসর-কালো হাফপ্যান্টের ওপর হালকা ক্রিম রঙের জামা। দুই হাতে তারের রিংয়ে ঝুলছে পপকর্ন, চানাচুর আর বাদামের ছোট ছোট প্যাকেট। সাড়ে ৮ বয়সী শিশুটি নিজের সমবয়সী ও স্কুলড্রেস পরা শিশুদের উদ্দেশে হাঁক দিচ্ছিল, ‘এই পাপন (পপকর্ন) লাগবে, পাপন?’
শিশুটির নাম হোসাইন সরদার। সম্প্রতি এক দুপুরে তার দেখা মেলে খুলনা নগরের নিরালা এলাকার এক স্কুলের সামনে। পরনে স্কুলড্রেস আর কাঁধে বইভর্তি ব্যাগ থাকার কথা থাকলেও এই বয়সে কাঁধে তুলে নিয়েছে সংসারের কঠিন দায়িত্ব। তার কাছে এটাই ‘ব্যবসা’, যা শিখিয়েছে তার ভ্যানচালক বাবা কামরুল সরদার।
স্কুল ছুটির পর সমবয়সী শিশুরা যখন বাবা-মায়ের হাত ধরে বাড়ি ফেরে, হোসাইন তখন ব্যস্ত ক্রেতা সামলাতে। কথায় কথায় জানা গেল, হোসাইনের গ্রামের বাড়ি কয়রা উপজেলায়। জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে কয়েক বছর আগে সপরিবার খুলনায় এসেছে। থাকছে নগরের সবুজবাগ এলাকায়।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে হোসাইন সবার ছোট। বড় ভাই রহিম বাদশা (১৬) শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে–ও হোসাইনের মতো আরেকটি স্কুলের সামনে এসব পণ্য বিক্রি করে। আর বোনটি মেজো। একমাত্র সে-ই পড়াশোনা করছে। প্রতিদিন প্রায় ৩০০ টাকার মতো বিক্রি হয় হোসাইনের। এর প্রায় সবটাই তুলে দেয় বাবার হাতে। হোসাইনের মতে, ‘যদি স্কুল শেষ করি কাজে নামতি পাততাম, তালি ভালো হইত।’
আত্মবিশ্বাসে ভরা হোসাইনের কথা বলার ভঙ্গি মুগ্ধ করার মতো। কঠিন প্রশ্নেরও চটজলদি উত্তর দেয় সে, চোখেমুখে সব সময় লেগে থাকে একরাশ সরল হাসি। একই রকম পর্যবেক্ষণ তার মায়েরও। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘ওর ব্রেন ভালো।’ পাল্টা প্রশ্নে জানতে চাওয়া হলো, তাহলে পড়ালেখা না করিয়ে কাজে পাঠিয়েছেন কেন? জবাব এল, ‘দুই ভাই–বুনির খরচ দিয়ে পারতিছি নে, তাই কলাম মেয়েডারে একটু শিখাই। এর জন্য ওরে (হোসাইন) আর পড়াশুনো করাইনি।’
কথার এ পর্যায়ে স্কুলটির গেটে বাড়ি ফেরা শিশুদের ভিড় বাড়ে। আবার কাজে মন দেয় হোসাইন। পেছন থেকে ভেসে আসে চেনা শিশুকণ্ঠ, ‘পাপন লাগবে, পাপন?’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ স ইন র
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় গোলের থ্রিলারে জমজমাট ড্র বার্সেলোনা-ইন্টারের
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল মানেই উত্তেজনার পারদ চড়া—আর বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলান মিলে সেটিকে নিয়ে গেল অন্য উচ্চতায়। কাতালানদের ঘরের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে দর্শকরা উপভোগ করলেন এক দুর্দান্ত গোলবন্যার ম্যাচ। ম্যাচ শেষে ফল—৩-৩ গোলে ড্র।
মৌসুমের রেকর্ড ৫০ হাজার ৩১৪ দর্শকের সামনে ইউরোপীয় ফুটবলের এই মহারণে উভয় দলই তুলে ধরেছে আক্রমণাত্মক ফুটবল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের ইতিহাসে ১৯৯৯ সালের পর এটিই প্রথম ম্যাচ যেখানে ছয়টি গোল হয়েছে এবং শেষ হয়েছে ড্রয়ে।
ম্যাচ শুরু হতে না হতেই চমকে দেয় ইন্টার মিলান। ম্যাচের মাত্র প্রথম মিনিটেই ডেনজেল ডামফ্রিজের ব্যাকহিল গোল দলকে এগিয়ে দেন মার্কাস থুরাম। এরপর ২১ মিনিটে আবারও দিমারকোর কর্নার থেকে ফ্রান্সেসকো আকেরবির সহায়তায় শ্বাসরুদ্ধকর অ্যাক্রোব্যাটিকে ব্যবধান বাড়ান ডামফ্রিজ।
তবে ঘুরে দাঁড়াতে দেরি করেনি বার্সা। দুই মিনিট পরই ইয়ামাল ডান দিক থেকে একক নৈপুণ্যে দুর্দান্ত গোল করে ব্যবধান কমান। প্রথমার্ধ শেষের আগে পেদ্রির ফ্লিকে রাফিনিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং তাতে ফেরান তোরেসের শটে গোল করে ২-২ সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা।
দ্বিতীয়ার্ধে লাউতারো মার্টিনেজের ইনজুরির পর মাঠে নামেন মেহেদি তারেমি। ৬০ মিনিটে কর্নার থেকে হেড করে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ডামফ্রিজ। কিন্তু দ্রুতই গোল শোধ করে বার্সা—ছোট কর্নার থেকে রাফিনিয়ার শট লাগে পোস্টে, সেখান থেকে গোলরক্ষক সোমারের পিঠে লেগে ঢুকে পড়ে জালে—ফলাফল ৩-৩। ৭৫ মিনিটে হেনরিখ মিখিতারিয়ান গোল করে ইন্টারকে আবারও এগিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ভিএআরের চোখে পড়ে সামান্য অফসাইড, বাতিল হয় সেই গোল।
এখন সবকিছু নির্ভর করছে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের ওপর, যা হবে ৬ মে, মঙ্গলবার, ইন্টারের ঘরের মাঠ জিউসেপ্পে মিয়াজ্জায়। ওই ম্যাচেই জানা যাবে ফাইনালে কারা প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ও আর্সেনালের মধ্যকার বিজয়ীর মুখোমুখি হবে।