শহীদ বাবার পাশেই কলেজছাত্রীকে দাফনের প্রস্তুতি, কবর খুঁড়ছেন বৃদ্ধ দাদা
Published: 27th, April 2025 GMT
জুলাই আন্দোলনে এক শহীদের কলেজছাত্রী মেয়ের (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের পর তাকে দাফনের প্রস্তুতি চলছে। পটুয়াখালীর দুমকিতে গ্রামের বাড়িতে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে। বাড়ির আঙিনায় তার বৃদ্ধ দাদা একাই কবর খুঁড়ছেন।
এর আগে গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার বাসা থেকে ওই কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে গত ১৮ মার্চ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। আজ রোববার রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ইতিমধ্যে মরদেহ নিয়ে স্বজনেরা পটুয়াখালীর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
কলেজছাত্রীর বৃদ্ধ দাদা বলেন, গতকাল সকালে তার সঙ্গে নাতনির (কলেজছাত্রী) কথা হয়। জেলা প্রশাসক সহায়তার দুই লাখ টাকা আনতে তাঁকে ফোন করেছেন, সেটা নাতনিকে জানান। জবাবে নাতনি জানায়, জেলা প্রশাসক তাকে সোমবার যেতে বলেছেন। কিন্তু রাত ১০টার দিকে তাঁর ছেলে (কলেজছাত্রীর চাচা) তাঁকে ফোন করে বলেন, ‘একটি দুর্ঘটনা হয়েছে।’ এরপর ছেলে বিস্তারিত খুলে বলেন। কিন্তু কী কারণে নাতনি ‘আত্মহত্যা’ করেছে, তিনি জানতে পারেননি।
দাদা আরও বলেন, ‘গত জুলাই আন্দোলনে ছেলেকে হারালাম। এরপর ১৮ মার্চ নাতনি ধর্ষণের শিকার হয়। আসামিরাও ধরা পড়ে জেলহাজতে রয়েছে। ভাবছিলাম যা হয়েছে, নাতনি তো বেঁচে থাকবে। অথচ গতকাল শনিবার নাতনিটা আমাদের ছেড়ে চলে গেল।’
কলেজছাত্রীর চাচা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত ১১টার দিকে তাঁর ভাতিজি আত্মহত্যা করে। এরপর তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আজ দুপুর ১২টার দিকে মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে থাকা গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উচ্চতর পরিষদের সদস্য কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম জানান, ‘১২টার দিকে আমরা মরদেহ নিয়ে রওনা হয়েছি। পরিবারের লোকজন সঙ্গে আছে। পৌঁছাতে বিকেল হবে।’
কলেজছাত্রীর মা জানিয়েছিলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে তাঁর স্বামী গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর শহীদ স্বামীকে দুমকিতে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় তাঁর মেয়ে। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলে। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ থানায় গিয়ে অভিযোগ করে। সন্ধ্যায় মামলা নথিভুক্ত করার পর মেডিকেল পরীক্ষার জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মেয়েটিকে। পরে মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনজুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার১৩ ঘণ্টা আগেমামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলা হওয়ার দিন রাতে এজাহারভুক্ত ১৭ বছর বয়সী কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ২১ মার্চ অন্য আসামিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাদের যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র গতক ল মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।