পুনর্বহালের দাবি জানালেন অপসারিত কাউন্সিলররা
Published: 27th, April 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নিয়োগ দেওয়া প্রশাসকদের এক নোটিশে অপসারণ করলেও তাঁরা সবাই নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে করেননি। অপর দিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হলেও স্বপদে বহাল আছেন।
বাংলাদেশ সিটি ও পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশন আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটরিয়ামে কাউন্সিলর সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে বক্তারা এসব অভিযোগ করেন। এ সময় বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অপসারিত কাউন্সিলররা সরকারের কাছে তাঁদের স্বপদে পুনর্বহালের দাবি জানান।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন ও ৩২৩টি পৌরসভার সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের অপসারণ করে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। পরে কাউন্সিলরদের স্থলে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার।
এই প্রশাসকদের বিষয়ে বক্তারা বলেন, দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নিয়োগ দেওয়া প্রশাসকদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগ দেওয়া এসব প্রশাসক আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিলেন। জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে সরকার সাধারণ মানুষদের বঞ্চিত করছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও স্বপদে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে কাউন্সিলররা এই সমাবেশের আয়োজন করেন।
সমাবেশে ঝিনাইদহের একটি পৌরসভার সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বুলবুলি ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু এখন সেবা দিতে পারছি না। পৌরসভার যেসব কর্মকর্তাদের প্রশাসক পদে বসানো হয়েছে। তাঁরা মাসে এক দিন অফিসে আসেন। অথচ তাঁরাই ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগী ছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমার স্বামী-সন্তান সবাই মামলা হামলার শিকার হয়েছিল। আওয়ামী–সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে গিয়ে তারা বাড়িতে ঘুমাতেও পারত না।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল হাসান বাচ্চু বলেন, ‘১৫ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। অথচ সব কাউন্সিলরকে এক পাল্লায় নিয়ে অপসারণ করা হলো। যাঁরা অভিযুক্ত ছিলেন, আইনি পক্রিয়ায় তাঁদের অপসারণ করলে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না।’
এই সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান, তিনি ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর ১৮–দলীয় ঐক্যজোটের ব্যানারে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে হরতাল পালন করতে গিয়ে র্যাবের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। রাজশাহীর কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা মামলায় এখনো আসামি হিসেবে আছেন বলেও জানান তিনি।
সমাবেশে অংশ নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাছের খান বলেন, ‘কলমের খোঁচায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ দুঃখজনক। এটার সঙ্গে আমলারা জড়িত। প্রশাসক হয়ে তাঁরা এখন রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাচ্ছেন।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অর্থ দিয়ে ভোট কেনাবেচার অভিযোগ তুলে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি বলেন, দ্রুত সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি লাঘব করতে হবে। পাশাপাশি ছাত্রজনতার আন্দোলনে হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, হয় স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে হবে, অন্যথায় ফ্যাসিবাদবিরোধী কাউন্সিলরদের স্বপদে পুনর্বহাল করতে হবে। প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করে জনগণের মতামত জানতে হবে।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণের কারণে প্রান্তিক জনগণ ভোগান্তিতে রয়েছেন উল্লেখ করে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, যাচাই-বাছাই করে তাঁদের স্বপদে পুনর্বহাল করা উচিত। এ সিদ্ধান্তের জন্য সাত থেকে আট মাস সময় ব্যয় করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
সমাবেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী কাউন্সিলরদের দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বপদে পুনর্বহালের সময় বেঁধে দেন বাংলাদেশ সিটি ও পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘ন্যথায় আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করতে বাধ্য হব।’
বাংলাদেশ সিটি ও পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আকন, দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কাউন্সিলররা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দুই শতাধিক সাবেক কাউন্সিলর।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র প রসভ র সরক র র জনগণ র ইসল ম স বপদ
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপগঞ্জে লিফলেট বিতরণ
আওয়ামীলীগ দেশের মানুষের অধিকার হনন করেছে। তাই, দেশে এক গণবিপ্লবের সৃষ্টি হয়েছে। ২৪এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ এ দেশ থেকে বিতারিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও রূপগঞ্জ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মোহাম্মদ দুলাল হোসেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভোলাব ইউনিয়নের আতলাপুর বাজার এলাকায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণকালে মোহাম্মদ দুলাল হোসেন এসব কথা বলেন।
লিফলেট বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ, বিএনপি-যুবদলসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মোহাম্মদ দুলাল হোসেন আরও বলেন, “গত ১৭ বছর ধরে এ দেশের জনগণ একদলীয় শাসন ও ফ্যাসিবাদের শিকার হয়ে জিম্মি হয়ে ছিল। মানুষের বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের গণজাগরণের মধ্য দিয়ে জনগণ আবারও তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। এখন সময় এসেছে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার, একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার।”
তিনি আরও বলেন, “তারেক রহমানের ৩১ দফা দেশের পুনর্গঠনের পথনির্দেশনা। এই দফাগুলোতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।”
এসময় স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদল নেতৃবৃন্দও লিফলেট বিতরণে অংশগ্রহণ করেন। তারা সাধারণ মানুষকে বিএনপির পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করেন যে, দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে তারা রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত এবং জনগণের পাশে থাকবে।
স্থানীয়রা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার। একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা এবং নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা করছেন তারা। এ ধরনের লিফলেট বিতরণ কার্যক্রমে জনগণ আরও বেশি সচেতন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
প্রসঙ্গত, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চলতি বছরের শুরুতে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন, যেখানে রাষ্ট্র সংস্কার ও জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্য তুলে ধরা হয়।