নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন হত্যা একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। যখন নারায়ণগঞ্জে এই ঘটনাটি ঘটেছিল তখন গডফাদারদের রাজত্ব ছিল। সেই সময় নারায়ণগঞ্জে আইনের কোন শাসন ছিল না।

সেদিন প্রকাশ্য দিবালোকে তাঁতকালীন সাংসদ গডফাদার শামীম ওসমান ও তার দোসর নূর হোসেন বাংলাদেশের একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীকে টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে আইনজীবী চন্দন সরকার ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭জনকে হাজার হাজার মানুষের সামনে তাদেরকে অপহরণ করেছে।

সেই সময় আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলাম যখন আমি শুনেছি তখনই আমি আইনজীবীদের নিয়ে তৎকালীন এসপি নুরুল ইসলামের অফিস ঘেরাও করে তাদেরকে উদ্ধারের জন্য আমরা আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম। 

আমরা র‌্যাব অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম, থানায় যোগাযোগ করেছিলাম এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করেছিলাম। আমরা ফ্যাসিস শেখ হাসিনার মন্ত্রিপরিষদের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। সে সময় তারা উল্টো আমাদেরকে দোষারোপ করেছিল যে আমরা নাকি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছি। কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম এই সাতটি তাজা মানুষকে জীবন্ত উদ্ধার করার জন্য। 

কিন্তু এর তিনদিন পর আমরা কি দেখলাম ওই শীতলক্ষা নদীতে এদের লাশ ভেসে উঠলো। তাদের প্রত্যেকটির পিঠের মধ্যে ২৪টি করে ইট বাধা ছিল। তাদের লাশের বিব্রত চিত্র দেখে শুধু নারায়ণগঞ্জ না সারা বিশ্বের মানুষ কেঁদেছিল এবং শোকাহত হয়েছিল। 

সেদিন সারা বাংলাদেশসহ নারায়ণগঞ্জের মানুষ ও আইনজীবীরা প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছিল। নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরা টানা ৫৮ দিন আদালত বর্জন করেছিল। তারপর আওয়ামী সরকার মামলাটিকে অন্য ক্ষেত্রে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল। 

আলোচিত সাত খুনের মামলা রায় অবিলম্বে কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে নারায়ণগঞ্জ আদালত পাড়ায় আইনজীবী সমাজ, নিহতের পরিবার ও নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্যোগে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।  

এ সময় তিনি আরও বলেন, আমি নিজে বাদী হয়ে ও এডভোকেট চন্দন সরকারের জামাতা বাদী হয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিডিকশন দায়ের করি। সেই রিটপটিশন আমাদের পক্ষে আসে এরপর আসামিদেরকে একে একে গ্রেপ্তার করা হয় এবং আদালতে তারা তাদের দোষ স্বীকার করে তাদেরকে কিভাবে গুম ও খুন করা হয়েছিল।

এই নারায়ণগঞ্জের আদালতে সেদিন আমরা সুবিচার পেয়েছিলাম। এরপর তারা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। সেই আপিলে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে এবং ১১জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। এবং অন্যান্যদেরকে বিভিন্ন কারাদন্ডে দন্ডিত করেছিল। 

তিনি বলেন, আপনারা জানেন এ আসামিরা অন্তত প্রভাবশালী। ওই তারেক সাইদ হলো মোফাজ্জল হোসেন মায়ার মেয়ের জামাতা। এবং অন্য অন্যরা আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট ছিল। তারা উচ্চ আদালতে মামলাকে ভিন্ন খেতে প্রবাহিত করে । 

আজকে ৫-৬ বছর হয়ে গেল এই মামলার এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আপিল অ্যাপিলেশনে সে মামলাটি দীর্ঘস্থায়ী করা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই ৫ই আগস্ট এর মাধ্যমে ওই ফ্যাসিদের পতন হয়েছে। ছাত্র- জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে যে অন্তবর্তী সরকার গঠন হয়েছে সেই সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আপিল অ্যাপিলেশন ডিভিশনের মাধ্যমে আপনারা মামলাটিকে দ্রুত নিষ্পত্তি করুন। 

আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শুনানীর মাধ্যমে এ রায় কার্যকরের ব্যবস্থা করবেন। এই কার্যকরের মাধ্যমে নিহতদের পরিবারদের যে দাবি তা পূর্ণ করবেন। এই ঘটনার যদি বিচার হয় তাহলে এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে আর পুনরাবৃত্তি হবে না।  নারায়ণগঞ্জের ত্বকীসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানাচ্ছি। 

মানবন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড.

সরকার হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান, জেলা আইনজীবী সমিতিরসাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. জাকির হোসেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এড. আবুল কালাম আজাদ জাকির, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি এড. খোরশেদ আলম মোল্লা, সিনিয়র আইনজীবী এড. মাহবুবুর রহমান মাসুম, এড. আলাদা হোসেন, নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটিসহ নিহতদের পরিবার ও আইনজীবীসহ সাধারণ জনগণ। 

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ ভেসে ওঠে। সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল দুটি মামলা দায়ের করেন।

হত্যাকাণ্ডের ১১ মাস পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ দুটি মামলার অভিন্ন চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি চার্জশিটভুক্ত আসামি নাসিক ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি নুর হোসেন, র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ, সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার মাসুদ রানাসহ ৩৫ জনকে দণ্ড প্রদান করেন নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত। এর মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

উচ্চ আদালতে ২৬ জনের মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। বাকী ৯ জনকে দেওয়া কারাদণ্ডের রায় উচ্চ আদালত বহাল রাখেন। মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন বলে জানা গেছে।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ আইনজ ব য গ য গ কর ছ ল ম ন র য়ণগঞ জ জ ল ন র য়ণগঞ জ র নজর ল ইসল ম র ল ইসল ম সরক র র আইনজ ব আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

বরগুনায় বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের মামলা প্রত্যাহারের আবেদন আদালতে নাকচ

বরগুনা জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন নাকচ করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার বরগুনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান এই আদেশ দেন।

এদিকে আদালতের নথি কাটাছেঁড়ার অভিযোগে মামলার বাদী শহিদুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

এর আগে ২৩ জুলাই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য শহিদুল ইসলাম ২৩১ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। মামলার পর আদালত বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৩০ মে বরগুনা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল চলাকালে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, ছেনি, চায়নিজ কুড়ালসহ কার্যালয় ঘিরে ফেলেন। এরপর তাঁরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও ত্রাস সৃষ্টি করেন। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মারধর ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

গত রোববার বরগুনা জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এক বৈঠকে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ফোরামের সদস্যসচিব আবদুল ওয়াসি মতিন বলেন, ‘তিনি (শহিদুল ইসলাম) আমাদের সদস্য। তিনি মামলা করেছেন, তা আমরা জানতাম না। তাই তাঁকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

একই দিনে শহিদুল ইসলামের দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি জানি না কার নামে মামলা হয়েছে, নেতারাই আমাকে দিয়ে মামলা করিয়েছেন।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা প্রথম আলোকে বলেন, এটি দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। যিনি মামলা করেছেন, তিনি ব্যক্তিস্বার্থে করেছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

আদালতের পেশকার নাদিরা পারভীন বলেন, মামলার আদেশ হওয়ার পর বাদী আদালতের নথিতে কাটাছেঁড়া করেছেন। তাই আদালত তাঁকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

মামলা প্রসঙ্গে শহিদুল ইসলাম বলেন, কিছু আসামির নাম-ঠিকানা ভুল ছিল, সে কারণে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলাম।

উল্লেখ্য, একই ঘটনায় বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত এস এম নজরুল ইসলামের ছেলে এস এম নইমুল ইসলাম ৩০ এপ্রিল একটি মামলা করেন। ওই মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের পাশাপাশি বিস্ফোরক আইনের ধারা সংযোজন করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারায়ণগঞ্জে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথ আইনজীবীদের
  • শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জেলা আইনজীবী ফোরামের পদযাত্রা
  • সুরাইয়া মতিনের মৃত্যুতে ফতুল্লা প্রেসক্লাবের শোক
  • ‎আবু সাঈদ হত্যা: ৬ আগস্ট অভিযোগ গঠনের আদেশ 
  • আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ৬ আগস্ট
  • শিক্ষকের মুক্তি চেয়ে শিক্ষার্থীদের আদালত চত্বরে অবস্থান, সড়ক অব
  • কিশোরগঞ্জে আইনজীবীর বাড়িতে ডাকাতি, ২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট
  • আবু সাঈদ হত্যা: ‘ঘটনাস্থলে ছিলেন না’ দাবি করে দুই আসামির অব্যাহতির আবেদন
  • দুদকের মামলায় রাজশাহীর সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার কারাগারে
  • বরগুনায় বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের মামলা প্রত্যাহারের আবেদন আদালতে নাকচ