ঝটিকা মিছিল: যশোরের তিনজনসহ ঢাকায় গ্রেপ্তার ৭
Published: 27th, April 2025 GMT
রাজধানীতে ঝটিকা মিছিলবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
রবিবার (২৭ এপিল) দুপুরে ডিএমপি গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের পরিচয় জানিয়েছে। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মধ্যে যশোরের ঝিকরগাছার তিনজন রয়েছেন।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন কাফরুল থানার কৃষিবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি শেখ হাবিবুর রহমান, তুরাগ থানার জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.
আরো পড়ুন:
বরগুনায় দুই শিশুকে কুপিয়ে হত্যায় যুবকের মৃত্যুদণ্ড
মাগুরার শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় ৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মধ্যে বাকি চারজনের তিনজন যশোরের ঝিকরগাছার। তারা হলেন- ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ ইমরানুর রশীদ, ঝিকরগাছা পৌর যুবলীগের সাবেক সভাপতি, পৌর কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মো. আমিরুল ইসলাম রাজা এবং ঝিকরগাছা পৌর যুবলীগের সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী রফিকুল ইসলামের সহযোগী জাফিরুল হক।
গ্রেপ্তার হওয়া সাতজনের মধ্যে আরেকজন হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের সদস্য এবং সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের আস্থাভাজন মো. আজিম (বাচা)।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে পোস্তগোলা এলাকা থেকে শেখ হাবিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ডিবির একটি টিম। অন্যদিকে ডিবি-উত্তরা বিভাগের একটি আভিযানিক দল রাজধানীর তুরাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে রাতে মো. ফরহাদ হাসানকে গ্রেপ্তার করে। ডিবি-মিরপুর বিভাগের একটি টিম রাজধানীর পান্থপথ এলাকা থেকে একই রাতে গোলাম মাওলা, সৈয়দ ইমরানুর রশীদ, মো. আমিরুল ইসলাম (রাজা) ও জাফিরুল হককে গ্রেপ্তার করে।
ডিবি-লালবাগ বিভাগের একটি দল যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে মো. আজিমকে গ্রেপ্তার করে।
ঢাকার গোয়েন্দারা বলেছেন, গ্রেপ্তার হওয়া সবার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন।
ঢাকা/এমআর/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ গ র প ত র কর ঝ করগ ছ সদস য র একট
এছাড়াও পড়ুন:
হাড়ভাঙা পরিশ্রমে পুরুষের অর্ধেকের কম বেতন নারীর
লিমা আক্তার কাজ করতেন ময়মনসিংহ নগরীর একটি রেস্তোরাঁয়। প্রতিদিন তাঁর ডিউটি শুরু হতো বেলা ১১টায়, শেষ হতো রাত ১২টায়। তাঁর কাজ ছিল বাবুর্চির রান্নার কাজে সহায়তা করা। প্রতিদিন ১৩ ঘণ্টা কাজ করেও তাঁর দৈনিক মজুরি ২৫০ টাকা। অথচ মূল বাবুর্চির দৈনিক বেতন এক হাজার টাকা। সংসার সামলে স্বল্প বেতনে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় কাজ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বাধ্য হয়েই চাকরি ছাড়েন তিনি।
একই চিত্র দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেলায়। সরেজমিন দেখা যায়, রাত ১০টার পর থেকে বিপণিবিতানগুলো বন্ধ হলে কাজ শুরু হয় তাদের। এ কাজে পুরুষের চেয়ে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। তাদের অভিযোগ, রাত ১১টা থেকে কাজ শুরু হলে শেষ হয় রাত ২-৩টায়। এত রাতে কাজ শেষ করে নিরাপদে বাসায় যাতে পারেন না। এ কাজে মজুরিও অনেক কম।
সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, নগরীতে নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। তারা মাসিক বেতন পান ৭ হাজার ৮০০ টাকা। নারী অধিকারকর্মীরা জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানেও নারীর প্রতি বৈষম্য মেনে নেওয়ার মতো না। তাদের দাবি– বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম মজুরি সরকারি প্রজ্ঞাপনে ধরা আছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাচ্ছেন মাত্র ২০০-২৫০ টাকা।
সুলেখা নামে এক নারী কর্মীর ভাষ্য, এত অল্প আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আবার রাত-বিরাতেও কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হয়।
ময়মনসিংহের ইটভাটাগুলোতে কাজ করেন শতাধিক নারী কর্মী। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করলেও পুরুষের চেয়ে অর্ধেক বেতন জোটে। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তারা মজুরি পান ২৫০-৩০০ টাকা। যেখানে একজন পুরুষ একই কাজ করে মজুরি পান ৬০০-৭০০ টাকা। একই অবস্থা চালকলগুলোতে। শতাধিক চালকলে কাজ করেন কয়েক হাজার নারী শ্রমিক। নারীর তুলনায় এখানে দ্বিগুণ বেতন পান পুরুষ।
ময়মনসিংহ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সূত্রমতে, জেলার ইটভাটাগুলোতে ৮০ শতাংশ পুরুষের সঙ্গে কাজ করেন ২০ শতাংশ নারী। তবে ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন পোশাক কারখানা ও স্পিনিং মিলগুলোতে কাজ করেন ৬৫-৭০ শতাংশ নারী শ্রমিক। সরকারি প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস হলেও এসব কারখানায় খুব একটা ছুটি মেলে না। তাদের অভিযোগ, অধিকাংশ নারীকেই অন্তঃসত্ত্বা হলে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। পরে আবার নতুন চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়।
ট্রেড ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, নারীদের সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কাজ না করানোর নির্দেশনা থাকলেও নিয়ম মানছে না অধিকাংশ কারখানা। রাত ১২টা থেকে ১টায় অনেক কারখানা ছুটি হলে ঘরে ফিরতে অনিরাপদ বোধ করেন নারী কর্মীরা। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে ও রাস্তায় যৌন হেনস্তার শিকার হন অনেকে। এসব বিষয়ে ‘অ্যান্টি হেরেজমেন্ট কমিটি’ থাকলেও বাস্তবে সুফল পাচ্ছেন না শ্রমিকরা।
ট্রেড ইউনিয়নের নারী নেত্রী নওশীন বৃষ্টি জানান, মাঝে মাঝেই খবর আসে অফিস বা কর্মস্থলেই সন্তান প্রসব করেন নারী শ্রমিকরা। যা একইভাবে নিয়োগ কর্তার গাফিলতি ও শ্রমিকের অসচেতনার ইঙ্গিত দেয়। নিয়োগ কর্তা বা মালিক পক্ষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ছুটি দিতে চান না। তার ওপর আবার বেতনসহ ছুটি দেওয়া তো আকাশ ছোঁয়ার মতো ব্যাপার।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন সমকালকে বলেন, ময়মনসিংহে হোটেল রেস্টুরেন্টে সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার নারী শ্রমিক কাজ করেন। তাদের দিয়ে পুরুষের তুলনায় অনেক কম বেতনে কাজ করানো হয়। তাঁর মতে, নারীরা সমাজে পুরুষের সমকক্ষ হওয়ার জন্য দেশে প্রচলিত বিভিন্ন রকম শ্রমশোষণ ও বিভাজন ভেঙে ফেলতে হবে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ময়মনসিংহের শ্রম পরিদর্শক (সেফটি) তুহিনুর রহমান জানান, কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে শ্রমিকদের প্রতি মাসে ৫০-৬০টি অভিযোগ আসে। ১২৪-এর ক ধারায় ত্রিপক্ষীয় সালিশের মাধ্যমে এগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। এ ছাড়া ১৬৩৫৭ নম্বরে ট্যুল ফ্রি ফোন করে অভিযোগ জানালে বিষয়গুলো বিবেচনা করে শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় কাজ করে অধিদপ্তর।