বগুড়া পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ডের সীমানা অক্ষুণ্ন রেখে সিটি করপোরেশন ঘোষণার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিটি করপোরেশন-২ শাখার নির্দেশনা অনুযায়ী বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা আজ রোববার বিকেলে এ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন।

গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) প্রতিষ্ঠা বিধিমালা–২০১০–এর বিধি-৫–এর উপবিধি(২) অনুসারে বিদ্যমান বগুড়া পৌর এলাকার মৌজাসমূহের অন্তর্ভুক্ত এলাকা নিয়ে বগুড়া সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হলো। এ বিষয়ে কারও কোনো মতামত বা আপত্তি থাকলে তা একই বিধিমালার বিধি ৫–এর উপবিধি(৪) মোতাবেক গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে হবে। ওই সময়ের পর মতামত বা আপত্তি গ্রহণ হবে না।’

বগুড়ার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও বগুড়া পৌরসভার প্রশাসক মাসুম আলী বেগ প্রথম আলোকে বলেন, বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কোনো আপত্তি বা মতামত প্রদানে ইচ্ছুক হলে তা আগামী এক মাসের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লিখিতভাবে জানাতে হবে। ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামত ও আপত্তি নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হবে। এরপর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।

আরও পড়ুনবগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার উদ্যোগ১১ এপ্রিল ২০২৫

এর আগে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিটি করপোরেশন-২ শাখা থেকে ১০ এপ্রিল জারি করা এক চিঠিতে বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার জন্য গণবিজ্ঞাপ্তি জারি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামত ও আপত্তি নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়।

বগুড়া পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নিজ জেলা বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রচেষ্টায় ২০০৫-০৬ সালে কার্যক্রম শুরু হয়। তখন সিটি করপোরেশন ঘোষণার জন্য পৌরসভার সীমানা সম্প্রসারণ করে ২১টি ওয়ার্ডে উন্নীত করা হয়। কিন্তু বগুড়ার প্রতি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক বিদ্বেষের কারণে সিটি করপোরেশন ঘোষণার উদ্যোগ এত দিন আলোর মুখ দেখেনি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার জন্য গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ বগুড়াকে সিটি করপোরেশন ঘোষণার আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র ব ভ গ প রসভ র প রসভ ক র জন য আপত ত মত মত

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ