চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী, তাঁর স্ত্রী রিজিয়া রেজা, শ্যালক রুহুল্লাহ চৌধুরীসহ ২৪ জনের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানে দল গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ রোববার এই দল গঠন করা হয়।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নদভী, তাঁর স্ত্রী, শ্যালকসহ ২৪ জনের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানের জন্য দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এমরান হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, লোহাগাড়া থানার সাবেক ওসি মোহাম্মদ শাহজাহান ও মোহাম্মদ রাশেদ, লোহাগাড়া উপজেলা সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু নছর মুহম্মদ হাছান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ছাত্রলীগ লোহাগাড়া উপজেলা সভাপতি এইচ এম গণি, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হকসহ ২৪ জন।

আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি ওই পদ হারান। এরপর নদভী ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টের অধিভুক্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ‘আইআইইউসি টাওয়ারের’ ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। দুদক সেই অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে। গত জানুয়ারিতে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নদভীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। এরপর গত ১২ মার্চ অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদক উপপরিচালক সুবেল আহমেদ কারাবন্দী নদভীকে আদালতের অনুমতিতে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার উত্তরা এলাকা থেকে নদভীকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সেখানে ঢাকার একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামে হওয়া মামলায় নদভীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে হামলা: সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাছারিবাড়িতে দর্শনার্থীকে মারধর এবং হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাটি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। 

শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়ে মন্ত্রণালয় বলেছে, হামলায় ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের বাইরে কোনো সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। এ ঘটনায় রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত কোনো নিদর্শন নষ্ট হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দুটি কমিটি গঠন করেছে। শুক্রবার থেকে কাছারিবাড়ি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাছারিবাড়িতে দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আজ এটি খুলে দেওয়া হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে এক দর্শনার্থীর হাতে প্রবেশ টোকেন তুলে দেন।

এ সময় নজরুল ইসলাম বলেন, রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে কোনো ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেনি। এটি সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে। হামলা হয়েছে মূলত কাছারিবাড়ির পাশে রবীন্দ্র অডিটোরিয়ামে। সেটাও কাছারিবাড়িকে লক্ষ্য করে নয়, বরং প্রবেশ টোকেন নিয়ে এক প্রবাসী দর্শনার্থীর সঙ্গে কাছারিবাড়ির স্টাফদের ব্যক্তিগত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে। কোনো মৌলবাদ বা রাজনৈতিক কারণে এ ঘটনা ঘটেনি।

এদিন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কাছারিবাড়ি পরিদর্শন করেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) শেখ কামাল হোসেন, সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের পরিচালক সাইফুর রহমান প্রমুখ।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ কামাল হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তদন্ত প্রতিবেদন দেখে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন জানান, রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই। হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত জুবায়ের, আশিকুর রহমান, সজীব, রিমন, তানভীর, সারদুল, আব্দুস সালামসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ৮ জুন মোটরসাইকেল পার্কিংকে কেন্দ্র করে কাছারিবাড়িতে এক দর্শনার্থীকে আটকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দর্শনার্থী মো. শাহনেওয়াজ কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমানসহ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাহজাদপুর থানায় ওই দিন রাতেই লিখিত অভিযোগ দেন। ঘটনার দু’দিন পরও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়রা মঙ্গলবার শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। পরে উত্তেজিত জনতা কাছারিবাড়িতে ঢুকে অডিটোরিয়ামের দরজা-জানালা ভাঙচুর করে।

এ ঘটনায় কাস্টোডিয়ান হাবিবুর বাদী হয়ে ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় ১০ জনের নামে বুধবার থানায় মামলা করেন। মামলার পর দুই দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আট জনকে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে সমকালকে জানিয়েছেন শাহজাদপুর থানার ওসি মোহাম্মদ আসলাম আলী।

এদিকে কাছারিবাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানিয়েছে ভারত। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, এমন ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সে জন্য কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কাছারিবাড়িতে হামলার ঘটনাকে জঘন্য উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানান জয়সোয়াল।

এ ছাড়া কাছারিবাড়িতে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাটির নিন্দা জানিয়ে মোদিকে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে হামলা: সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়