পর্তুগাল ও স্পেনে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয়, পর্যুদস্তু জনজীবন
Published: 29th, April 2025 GMT
অপেক্ষাকৃত ঠান্ডার দেশ পর্তুগাল ও স্পেনে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে। বিদ্যুৎনির্ভর দেশ দুটির নাগরিকরা স্মরণকালের ইতিহাসে এমন বিপর্যয় আর দেখেনি। নাগরিক জীবনের সব কিছু থমকে গেছে। মেট্রো স্টেশন থেকে সেলুন পর্যন্ত বিদ্যুতের অভাবে ধুকছে।
বিবিসি লিখেছে, এমন বিদ্যুৎবিপর্যয়ের কারণ কী, তা এখনো উদঘাটন করতে পারেনি স্পেন ও পর্তুগালের সরকার। তবে জনজীবনে ভোগান্তি কমাতে কাজ করছে তারা। কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরেছে; তবে তাও আংশিক। সন্ধ্যা নামতেই দেশ দুটির বেশিরভাগ অঞ্চলে ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়।
পশ্চিম ইউরোপের স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ এপ্রিল) বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে মাদ্রিদ ও লিসবনসহ দুই দেশের শত শত শহর বিদ্যুৎ বিছিন্ন হয়ে যায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের তথ্য ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে।
আরো পড়ুন:
ডাচদের বিপক্ষে হার এড়াল স্পেন
স্পেনে বাড়ি কিনতে দিতে হবে ১০০ শতাংশ কর
স্পেন ও পর্তুগালে বহু শপিং মল, মেট্রো, ফিলিং স্টেশন, রেস্টুরেন্ট ও ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। লোকজন খোলা স্থানে দোকানপাট ও পার্কে অপেক্ষা করছেন, কখন বিদ্যুৎ আসবে। মেট্রো স্টেশনগুলোতে ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ট্রাম-ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠতে দেখা গেছে লোকজনকে।
স্পেন ও পর্তুগালের বহু ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেছে। এটিএম বুথগুলোর সামনে সারি ধরে লোকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। রাতে ঠান্ডা বাড়লে ভোগান্তি কী মাত্রায় পৌঁছাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই নাগরিকদের।
মোবাইল নেটওয়ার্কেও বড় বিভ্রাট হয়েছে। ফলে যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে কমিউনিটি রেডিও।
ধারণা করা হচ্ছিল, সাইবার হামলার কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে। বিবিসি বলছে, তবে দেশ দুটির সরকার অবশ্য এখনো কারণ খুঁজে বের করতে পারেনি।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ও পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টেনেগ্রো বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় সাইবার হামলার কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন। তারা নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউরোপের দুই উন্নত রাষ্ট্রে এই ধরনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও।
বিবিসি লিখেছে, মন্টেনেগ্রো ও সানচেজের মতো ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট অ্যান্টোনিও কস্টাও বলেছেন, দুই দেশের জাতীয় গ্রিডের সরবরাহ ব্যবস্থায় সাইবার হামলার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
অপ্রত্যাশিত বাস্তবতার মধ্য দিয়ে কাটছে স্পেন ও পর্তুগালের মানুষের জীবন। এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস না থাকায় পদে পদে বিপাকে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের। কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত পথ হেঁটে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা।
অকল্পনীয় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের দিনটিতে দুই দেশে দুর্বিষহ ঘটনাপ্রবাহের জন্ম দিয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে, নাগরিকদের সর্বশেষ তথ্য সরবরাহ করে দ্রুত সংকট কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে।
স্পেনের পরিস্থিতি
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী সানচেজ বিদ্যুৎ পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে নাগরিকদের কম ভ্রমণ করতে এবং বিভ্রাটের কারণ নিয়ে দুশ্চিন্তা বা জল্পনায় গা না ভাসাতে পরামর্শ দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এসে সানচেজ তার দেশের নাগরিকদের সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে এই পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি মোবাইল ফোন দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে নাগরিক জীবনে ‘ভয়াবহ’ প্রভাবের কথা স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী সানচেজ। তবে আশ্বাসও দিয়েছেন, সরকার যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার সমাধানে কাজ করছে।
আন্দালুসিয়া, এক্সত্রেমাদুরা ও মাদ্রিদের তিনটি অঞ্চলে সরকার সিভিল প্রোটেকশন আইনের আওতায় অতিরিক্ত জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করবে বলে সানচেজ তার নাগরিকদের জানিয়েছেন।
সানচেজ বলেছেন, ফ্রান্স ও মরক্কোর সঙ্গে সংযুক্ত ইন্টারকানেক্টর এবং দেশীয় শক্তির উৎস থেকে দেশজুড়ে বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা শিগগির কাজ আসবে।
তিনি বলেছেন, “ইউরোপীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় একটি ভয়াবহ প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা এই বিদ্যুৎবিছিন্নতার কারণে সামনে এসেছে। তবে এখন পর্যন্ত ‘সুনির্দিষ্ট কারণ’ সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।”
স্পষ্টভাবে কারণ নিয়ে অনুমান করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে সানচেজ বলেছেন, “আমরা কোনো সম্ভাবনাই বাতিল করছি না, তবে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোনিবেশ করতে হবে— আমাদের ঘরবাড়িতে দ্রুত বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনতে হবে।”
তিনি নাগরিকদের আশ্বাস্ত করেছেন যে, হাসপাতাল ব্যবস্থা বিদ্যমান সমস্যার মধ্যেও জেনারেটরের সাহায্যে সচল রয়েছে এবং এটিএমগুলোতে সমস্যা হলেও ব্যাংকিং সিস্টেম স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে।
ট্রেন ও বিমান চলাচল স্বাভাবিক করার কাজ দ্রুতগতিতে চলছে বলে জানিয়েছেন সানচেজ।
কয়েকটি কাজের বিষয়ে নাগকিদের সকর্ত করেছেন পেদ্রো সানচেজ। তার মধ্যে রয়েছে, কম ভ্রমণ করা, যাচাই না হওয়া তথ্য ছড়িয়ে না দেওয়া, মোবাইলে সংক্ষিপ্ত কথা বলা, যেমন- কল সংক্ষিপ্ত রাখা এবং শুধু জরুরি প্রয়োজনে ১১২ নম্বরে ফোন করা।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজনে নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে আরো বৈঠক করবেন।
স্পেনের পারমাণিক চুল্লিগুলো নিরাপদ রয়েছে
স্পেনের পারমাণবিক চুল্লিগুলো নিরাপদ অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির পারমাণবিক নিরাপত্তা পরিষদ। তাদের তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পর চুল্লিগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ বন্ধ করে দেয়, তবে জরুরি জেনারেটরগুলো চালু হয়ে যায়।
নিরাপত্তা পরিষদ আরো জানিয়েছে, অপ্রত্যাশিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো কী ধরনের আচরণ করবে, সেটি বিবেচনায় নিয়েই তৈরির সময় পারমাণবিক চুল্লিগুলোর নকশা করা হয়েছিল। এই শাটডাউনের সময় তার ফল পাওয়া গেছে; নকশার বাইরে আচরণ করেনি কেন্দ্রগুলো।
অর্থাৎ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়লেও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে কোনো বিপর্যয় হয়নি; বরং সেগুলো ডিজাইন অনুযায়ী নিরাপদ রয়েছে।
পর্তুগালের পরিস্থিতি
পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টেনেগ্রো বলেছেন, পর্তুগাল ও স্পেনের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পেছনে সাইবার হামলার কোনো ইঙ্গিত নেই।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ এখনো অজানা, তবে এটি স্পষ্ট যে, বিভ্রাটের উৎপত্তি পর্তুগালে হয়নি।
আশার বার্তা দিয়ে মন্টেনোগ্রো বলেন, ‘আসন্ন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পর্তুগালে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার হবে।”
মন্টেনেগ্রো এই ঘটনার বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে সাময়িক বিরতি নিয়ে সরাসরি পর্তুগিজ বিদ্যুৎ সংস্থা ‘রেন’-এ গিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পেনে ‘চরম তাপমাত্রার পরিবর্তন’ সেদেশে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ হয়েছে বলে মনে করেন দেশটির গ্রিড অপারেটর। তবে এ বিষয়ে পতুগির্জ কর্মকর্তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
গ্রিড অপারেটর বলছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ ‘ধীরে ধীরে’ পুনরুদ্ধার হবে
স্পেনের গ্রিড অপারেটর রেড ইলেকট্রিকার নতুন বিবৃতিতে বলেছে, পুরো আইবেরীয় উপদ্বীপজুড়ে বিদ্যুৎ ‘ধীরে ধীরে’ পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, কিছু এলাকায় ইতোমধ্যে ভোল্টেজ পুনরুদ্ধার হয়েছে এবং ভোক্তারা শিগগির বিদ্যুৎ সরবরাহ ফিরে আসতে দেখবে।
মালাগার পরিস্থিতি কিছুটা ভালো
স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ৩টার দিকে স্পেনের মালাগা শহরের একজন বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, তিনি বর্তমানে মালাগায় একটি অ্যাপার্টমেন্টে আছেন— সেখানে কিছু বার ও রেস্তোরাঁ দুর্দান্ত আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে খোলা রয়েছে।
ওই ব্যক্তি বলেন, “স্থানীয় সময় বিকালে অ্যাপার্টমেন্টের ওভেন এবং ওয়াশিং মেশিন হঠাৎ শব্দ করতে শুরু করে, আর নিচের রাস্তায় এক ব্যক্তি আনন্দের চিৎকার করে ওঠে। মনে হচ্ছে, মালাগায় বিদ্যুৎ ফিরে এসেছে।”
বিবিসিকে তিনি বলেন, “প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আমার ফোন সার্ভিসে ছিল না বা ইন্টারনেট ছিল না— ফলে আমি পুরোপুরি বিশ্বের সাথে সংযোগহীন হয়ে পড়েছিলাম; যা এক রৌদ্রোজ্জ্বল ও শান্ত দিনে আমার জন্য কিছুটা অস্বস্তি এনে দিয়েছিল।”
“এখানে এখন আশা করা হচ্ছে যে, আলো আর নিভবে না,” বলেন ওই ব্যক্তি।
স্পেনে বিদ্যুৎ সরবরাহে সহায়তা করছে ফ্রান্সের অপারেটর
ফরাসি গ্রিড অপারেটর আরটিই জানিয়েছে, তারা স্পেনের বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক সচল করতে সহায়তা করছে।
আরটিই জানায়, তারা ইতোমধ্যে স্পেনের ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহে সাহায্য করেছে এবং আইবেরীয় গ্রিড আরো বিদ্যুৎ গ্রহণ করতে পারলে এই সহায়তা বৃদ্ধি করা হবে।
কোম্পানিটি আরো বলেছে, বর্তমানে ফ্রান্সে এর কোনো প্রভাব পড়েনি এবং দিনের শুরুতে যেসব ফরাসি অঞ্চলের বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না, সেখানে এখন বিদ্যুৎ সম্পূর্ণরূপে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রী জার্মান গালুশচেনকো বলেছেন, তার দেশ ইউরোপের জ্বালানি নেটওয়ার্কের স্থিতিশীল কার্যক্রম পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে প্রস্তুত এবং ‘জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা’ বিনিময় করে নিতে আগ্রহী।
ভোগান্তির চিত্র
স্পেনের এক নাগরিক বিবিসিকে বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় তিনি মাদ্রিদের চামার্তিন স্টেশনে ট্রেনে ছিলেন, যেটি শহরের প্রধান স্টেশনগুলোর একটি।
একজন কর্মী ট্রেনে এসে তাদের ট্রেন থেকে নেমে স্টেশন খালি করতে বলেন। তখন স্টেশনের বাইরে বিশাল ভিড় দেখতে পান তিনি।
ওই ব্যক্তি বিবিসিকে বলেন, “আমরা জানি দেশের অন্যান্য রেল পরিষেবাও প্রভাবিত হয়েছে— বিশেষ করে আন্ডারগ্রাউন্ড রেলগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রাফিক সিগন্যালগুলো প্রভাবিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে, ফলে পুরো পরিস্থিতিতে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।“
ওই স্টেশনে মানুষজন মরিয়া হয়ে জানতে চাইছে তারা কি আবার ট্রেনে উঠতে পারবে, আজকের মধ্যে কোনো পরিষেবা চালু হবে নাকি পুরো পরিবেশে এখন শুধু অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
৩১ বছর বয়সি টম ম্যাকগিলওয়ে লিসবনে ছুটিতে রয়েছেন। সেখানে তিনি তার সঙ্গীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। তাদের সোমবার রাতেই লন্ডনে ফিরে যাওয়ার কথা, তবে নিশ্চিত নন যে, তাদের ফ্লাইটে কোনো প্রভাব পড়বে কি না।
সোমবার দুপুরে বিবিসিকে বলেন, “এটা অদ্ভুত অনুভূতি, কারণ সবাই জানে যে বিশৃঙ্খলা চলছে এবং আপনি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন না, কেউ জানে না বিমানবন্দরে কী ঘটছে।”
“অনেক রেস্তোরাঁ এবং দোকান পেমেন্ট নিতে পারছে না। ফলে অনেকে ওইসব জায়গা থেকে বেরিয়ে পপ-আপ বিক্রেতার কাছে চলে যান।”
তিনি আরো বলেন, “আপাতত মানুষজন খাবার ও পানীয় নিচ্ছে। কিন্তু বিক্রেতারা তাদের জানিয়ে দিচ্ছেন, তারা শুধু ততক্ষণই কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের পেমেন্ট টার্মিনালের ব্যাটারি শেষ না হয়।”
“যদি প্লেন বাতিল হয় এবং আমাকে হোটেল বুক করতে হয়, আমি কীভাবে সেটি করব যদি পেমেন্ট সিস্টেম কাজই না করে?” যোগ করেন তিনি।
বিমান কোম্পানি ইজিজেট এক বিবৃতিতে জানায়, পর্তুগাল ও স্পেনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট কিছু বিমানবন্দরের প্রবেশাধিকার ও কার্যক্রমে প্রভাব ফেলছে; যার মধ্যে লিসবন, মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা অন্তর্ভুক্ত।
বিবিৃতিতে বলা হয়, “সব এয়ারলাইনসের মতো আমরা আমাদের ফ্লাইং প্রোগ্রামে কিছু বিঘ্ন অনুভব করছি, যার ফলে লিসবন ও মাদ্রিদ থেকে কিছু রিটার্ন ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি।”
“পোর্তো ও ফারো বিমানবন্দরে আমাদের ফ্লাইং প্রোগ্রাম পরিকল্পনা অনুযায়ী চলমান রয়েছে,”বরা হয় বিবৃতিতে।
ফ্লাইট অপারেটররা তাদের যাত্রীদের স্থানীয় ভ্রমণ পরামর্শ এবং তাদের ফ্লাইট ট্র্যাকার চেক করার জন্য বলে দিয়েছে।
যারা স্পেন বা পর্তুগালে ভ্রমণ করতে পারেনি, তাদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিনামূল্যে ট্রান্সফার অথবা ফ্লাইট ভাউচার দেওয়া হয়েছে।
‘সেলুনে চুল কাটা অসমাপ্ত রেখেই চলে যেতে হয়েছে’
উইল ডেভিড, ৪০ বছর বয়সি এক ব্রিটিশ নাগরিক; যিনি লিসবনে বসবাস করেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, লিসবনের একটি সেলুনের বেসমেন্টে চুল ও দাড়ি কাটাচ্ছিলেন তিনি। তখন হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়।
উইল বলেন, “যেসব গ্রাহকের ইলেকট্রিক রেজার লাগত, চুল ও দাড়ি কাটা অসমাপ্ত রেখে তাদের চলে যেতে দেখা যায়।”
তিনি জানান, সেলুনের নরসুন্দর রিটা দয়াপরবশত তাকে ওপরের তলায় জানালার পাশে একটি জায়গায় নিয়ে বসান, যাতে কাঁচি দিয়ে চুল কেটে কাজ শেষ করা যায়।
২৯ বছর বয়সি কার্টিস গ্লাডেন মূলত লিভারপুলের বাসিন্দা। তবে সম্প্রতি তিনি ভ্যালেন্সিয়া থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরের লা ভাল দ’উক্সিওতে চলে এসেছেন।
তিনি বিবিসিকে জানান, তার ফোনের সংকেত প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে কাজ করছিল না, যা তার কাছে ‘ভীতিকর’ মনে হয়। কারণ, কী ঘটছে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাচ্ছিলেন না তিনি।
‘আমি অন্ধকারে পড়াচ্ছি’
এমিলি থোরোগুড, যিনি ব্রিস্টলের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে লিসবনের একটি আন্তর্জাতিক স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। বিবিসিকে তিনি জানান, স্থানীয় সময় দুপুর নাগাদ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর তিনি অন্ধকারে পড়াতে থাকেন।
তিনি বলেন, অনেক অভিভাবক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তাদের সন্তানদের স্কুল থেকে নিয়ে যান। অনেকক্ষণ ধরে বিদ্যুৎ থাকছিল না; কখনো যাচ্ছিল, একটু আসছিল। পরে একেবারে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়।
মাদ্রিদ ওপেনের দিন ও রাতের সেশন বাতিল
মাদ্রিদ ওপেন টেনিস টুর্নামেন্টের আয়োজকরা জানান, সাধারণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সোমবার ২৮ এপ্রিল স্পেনে যে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে, তার ফলে মুতুয়া মাদ্রিদ ওপেনের দিনের এবং রাতের উভয় সেশন বাতিল করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কোস্টা বলেন, তিনি স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেস এবং পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টেনেগ্রোর সঙ্গে যোগাযোগে আছেন এবং দুই দেশের গ্রিড অপারেটররা কারণ খুঁজে বের করার এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছে।
যোগাযোগ রাখছে ইউরোপিয়ান কমিশন
ইউরোপিয়ান কমিশন জানিয়েছে, স্পেন ও পর্তুগালে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ‘মূলে থাকা কারণ’ বোঝার জন্য স্পেন ও পর্তুগালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে তারা।
ইইউর নির্বাহী শাখার একজন মুখপাত্র বলেন, “কমিশন পরিস্থিতির ওপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবে এবং তথ্য বিনিময় নির্বিঘ্ন করতে নিশ্চিয়তা দেবে।”
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন দেয়ার লায়েনও স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লায়েন লিখেছেন, “ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ সব প্রচেষ্টার মধ্যে সমন্বয় করবে এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে তথ্য শেয়ার করে নেবে।”
পর্তুগালে বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধারে ‘এক সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে’
পর্তুগালের বিদ্যুৎ সংস্থা আরইএন-এর কিছু চূড়ান্ত মন্তব্য এসেছে, যেখানে তারা বলেছে, “ঘটনার জটিলতা এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহ পুনঃসামঞ্জস্য করার প্রয়োজনীয়তার কারণে নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।”
এর আগে, স্পেনের বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের প্রধান বলেছিলেন যে, বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধারে ছয় থেকে দশ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
‘স্পেনে তাপমাত্রার চরম পরিবর্তন’ বিদ্যু বিভ্রাটে ভূমিকা রেখেছে
পর্তুগালের গ্রিড কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ হিসেবে প্রথমে বলেছিলেন, তাপমাত্রার চরম পরির্বতন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ভূমিকা রেখেছে।
তারা বলেন, স্পেনের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে তাপমাত্রার চরম পরিবর্তনের কারণে ৪০০ কেভি উচ্চ ভোল্টেজ লাইনে অস্বাভাবিক দোলনের সৃষ্টি হয়, যা ‘প্ররোচিত বায়ুমণ্ডলীয় কম্পন’ নামে পরিচিত একটি ঘটনা। এই দোলনগুলো বিদ্যুৎ ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যার ফলে আন্তঃসংযুক্ত ইউরোপীয় নেটওয়ার্কে ধারাবাহিক বিঘ্ন ঘটে।
তবে পর্তুগিজ কর্মকর্তাদের এই ধরনের মন্তব্যের বিষয়ে স্পেনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তেমন কিছু জানা যায়নি।
পর্তুগাল বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য ‘স্পেনের গ্রিডের ত্রুটি’ দায়ী
পর্তুগালের গ্রিড অপারেটর আরইএন দাবি করে, তাদের দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার কারণ ‘স্পেনের বিদ্যুৎ গ্রিডের ত্রুটি।’
তারা বলেছে, এই ত্রুটি ‘দুর্লভ বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনাবলির’ সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে তারা এর অর্থ স্পষ্ট করেনি।
পর্তুগির্জ কর্মকর্তাদের ওই দাবির বিষয়ে স্পেন অবশ্য কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ত গ ল স প ন ও পর ত গ ল র পর ত গ ল ও স প ন ব দ য ৎ ব যবস থ ব দ য ৎ সরবর হ পর ত গ ল র প ইউর প য় ন ক মন ট ন গ র র পর স থ ত কর মকর ত ক জ করছ ফ ল ইট আম দ র কর ছ ন স মব র বল ছ ন মন ত র র জন য সহ য ত সরক র ধরন র ভ রমণ ল সবন
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।
বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।
বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।
জ্বালানি তেলবিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।
কৃষিপণ্যবিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।
খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।
২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।
দেশে কেন দাম বেশিবিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।
আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।
দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।