অস্ত্র দিয়ে ডাকাত তকমা, উদ্ধার করল নৌবাহিনী
Published: 29th, April 2025 GMT
নোয়াখালীর হাতিয়ায় ডাকাত তকমা দিয়ে দু’জনকে পিটিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় দেশীয় অস্ত্র। ছবি তুলে ও ভিডিও করে ছেড়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। উত্তেজিত জনতা তাদের ঘিরে রাখে। যদিও অনেকেই জানতেন না, ঘটনাটি সাজানো। খবর পেয়ে নৌবাহিনীর একটি দল আহত দু’জনকে উদ্ধার করে। সোমবার রাতে উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের আমতলী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। রাতেই তাদের হাতিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।
উদ্ধার দু’জন হলেন জাহাজমারা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড চরহেয়ার এলাকার মজিবুল হকের ছেলে আরিফ হোসেন এবং একই ইউনিয়নের মোল্লাবাজার এলাকার মো.
স্থানীয়রা জানান, জাহাজমারা আমতলী বাজারের পশ্চিম পাশে রাস্তার চর দখল নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন জহির চেরাং, অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দেন কাউসার। কাউসারপক্ষ অনেক দিন থেকে চরটির দখল নিয়ে আছে। ঘটনার দিন সোমবার বিকেলে জহির চেরাংয়ের লোকজন চরটির দখল নেওয়ার জন্য সংঘবদ্ধ হয়। পরে প্রতিপক্ষের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে গেলেও দু’জনকে ধরে তারা বাজারে নিয়ে আসে। পরে ওই দু’জনকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পরিকল্পিতভাবে ডাকাত নাটক সাজানো হয়।
ছবি তুলে ও ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ায় সেখানে উৎসুক জনতা ভিড় করে। খবর পেয়ে নৌবাহিনীর একটি দল অবরুদ্ধ দু’জনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে নৌবাহিনী ও পুলিশের দুটি গোয়েন্দা দলের তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে।
আসিফের বাবা আশরাফ জানান, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত নেই। অথচ তাঁকে ডাকাত বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তাঁর ছেলে নিরপরাধ দাবি করেন তিনি।
আমতলী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. লিটন জানান, চরের আধিপত্য নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়। পরে নৌবাহিনী এসে তাদের নিয়ে যায়। তারা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত কিনা, তাঁর জানা নেই।
হাতিয়া থানার ওসি একেএম আজমল হুদা বলেন, উদ্ধার দু’জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতার সমর্থকদের
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী শহীদ মিনার এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দেন। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করার খবর পাওয়া গেছে। রাত সাড়ে আটটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে মিছিল করছিলেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী।
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আসলাম চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে দেন। এ সময় তাঁরা ‘দুর্দিনের আসলাম ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’ ‘আসলাম ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এমন স্লোগান দেওয়া হয়।
বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, আসলাম চৌধুরী দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছেন। তিনি দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে কারাবন্দী হন। দীর্ঘ সময় তিনি জেল-জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। অথচ এখন সুসময়ে দল তাঁকে বঞ্চিত করছে। তাঁরা দলের এ সিদ্ধান্ত মানেন না। তাই প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তাঁরা।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মো. মোরসালীন প্রথম আলোকে বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তাঁরা যে যাঁর জায়গা থেকে মহাসড়কে উঠে প্রতিবাদ শুরু করেন। তাঁরা অন্তত সীতাকুণ্ডের ৩০টি স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
ঘোষিত প্রার্থী কাজী মুহাম্মদ সালাউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছোট ভাই। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম তাঁকে যোগ্য মনে করেছেন বিধায় তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করতে চান। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন।
ফৌজদারহাট পুলিশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের মাথা, ফৌজদারহাট, জলিল গেইট, ভাটিয়ারী, মাদামবিবিরহাট, কদমরসুল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ রয়েছে। ফলে উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ। পুলিশ বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।