১০ বছরে বিকাশের আয় বেড়ে ৯ গুণ, মুনাফা ১৭ গুণ
Published: 2nd, May 2025 GMT
মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা বা এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের জন্য ২০২৪ সালটি ছিল রেকর্ডের বছর। এ বছর প্রতিষ্ঠানটির আয় প্রথমবারের মতো পাঁচ হাজার কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো মুনাফা ছাড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকার ঘর। সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশের গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদন থেকে বিকাশের রেকর্ড আয় ও মুনাফার এই তথ্য পাওয়া গেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শেষে বিকাশের আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৮ কোটি টাকায়। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিকাশের আয় ৮৬৭ কোটি টাকা বা ২১ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি গত বছর শেষে প্রতিষ্ঠানটির প্রথমবারের মতো ৩১৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৯৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিকাশের মুনাফা বেড়েছে ২১৭ কোটি টাকা বা ২১৯ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিকাশ এত মুনাফা ও আয় করেনি। ২০১১ সালে যাত্রা শুরুর পর বিকাশের সর্বোচ্চ মুনাফা ছিল ২০২৩ সালে, ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি ৯৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। গত বছর একলাফে তা ৩০০ কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়ে যায়। বিকাশের এই মুনাফার ওপর ভর করে ব্র্যাক ব্যাংকও সমন্বিতভাবে ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা করেছে। কারণ, বিকাশের সিংহভাগ মালিকানা ব্র্যাক ব্যাংকের হাতে রয়েছে।
এদিকে বিকাশের গত ১০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১০ বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির আয় বা ব্যবসা বেড়ে হয়েছে ৯ গুণ। আর একই সময়ের ব্যবধানে মুনাফা বেড়ে ১৭ গুণ হয়েছে। ১০ বছর আগে ২০১৪ সালে বিকাশের আয় ছিল ৫৭৩ কোটি টাকা। আর ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করেছিল ১৯ কোটি টাকা। দুটোই এখন বেড়ে বিকাশকে বড় অঙ্কের লাভজনক এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।
তিন বছর ধরে বিকাশের মুনাফা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১১৭ কোটি টাকা লোকসান করেছিল। এরপর ২০২২ সালে ১৮ কোটি এবং ২০২৩ সালে ৯৯ কোটি টাকা মুনাফা করে বিকাশ। তবে ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবছরই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা বা আয় বেড়েছে। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে মুনাফায় ছেদ পড়ে। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিকাশের মুনাফা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছিল। ২০১৮ সালে এসে তা কমে যায়। এরপর ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছর বিকাশ লোকসানে ছিল। গত বছর শেষে মুনাফায় বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটে।
জানতে চাইলে বিকাশের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা বা সিএফও মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ রাহগীর প্রথম আলোকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকাশ সব সময় ব্যবসা টেকসই করতে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যকে সামনে রেখেছে। ক্যাশলেস দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে বিকাশ এক দশক ধরে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিষেবা অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও গ্রাহকসহ অংশীজনদের ডিজিটাল শিক্ষা বাড়াতে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করেছে। এই কৌশলগত উদ্যোগ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে স্থিতিশীলতা এনেছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথকে সুগম করেছে।
২০১১ সালে এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করা বিকাশের এখন গ্রাহক প্রায় ৮ কোটি। দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার এজেন্ট ও সাড়ে ৫ লাখ মার্চেন্ট পয়েন্ট। আর্থিক লেনদেন ছাড়াও বিকাশে রয়েছে বিভিন্ন পরিষেবা বিল পরিশোধ, ন্যানো ঋণ ও ডিপোজিট সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার সঙ্গে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানি ইন মোশন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন বা আইএফসি, গেটস ফাউন্ডেশন, অ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল ও সফটব্যাংক।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ১৮৯ কোটি টাকা সরকারকে কর দিয়েছে। আর ওই বছর ব্যাংক থেকে সুদ বাবদ প্রতিষ্ঠানটি আয় করেছে ১৯০ কোটি টাকা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ক শ র আয় র ব যবধ ন ২০২৩ স ল গত বছর ১০ বছর বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও দেড় শ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থার উপপরিচালক মো. আজিজুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান নূরের নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকা। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।
২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একে একে মামলা ও গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।