ঢেউয়ের আঘাতে মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত
Published: 1st, May 2025 GMT
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের সর্বশেষ অংশে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুদিনে বঙ্গোপসাগরের অমাবস্যার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উচ্চতায় মেরিন ড্রাইভে আঘাত হানছে। এতে টেকনাফের সাবরাং অংশের আড়াই কিলোমিটারজুড়ে সাত–আটটি অংশে ভাঙন ধরেছে। ভাঙন প্রতিরোধে দেওয়া জিও টিউব ব্যাগের ফুটো হয়ে ক্রমেই বিলীন হচ্ছে।
এর আগে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে পূর্ণিমার জোয়ারের ধাক্কায় মেরিন ড্রাইভের একই অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। তখন সেনাবাহিনীর ইসিবি (ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন) জিও টিউব ব্যাগের মাধ্যমে মাটির বাঁধ দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধ করেছিল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, জোয়ারের ধাক্কায় মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন অংশ প্লাবিত হচ্ছে। ধসে পড়ছে জিও টিউব বাঁধ। সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ সলিম প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার বেলা ১১টার দিকে মেরিন ড্রাইভের জিরো পয়েন্টে (বাহারছড়া ঘাট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত) আড়াই কিলোমিটারের কয়েকটি অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন তীব্র হচ্ছে। সড়কের পশ্চিম পাশে বসানো জিও ব্যাগের বাঁধ বিলীন হচ্ছে। চলতি মে মাসে সাগরে বেশ কয়েকটি নিম্নচাপ-লঘুচাপ সৃষ্টির কথা রয়েছে। তখন পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে মেরিন ড্রাইভে আঘাত হানতে পারে। তখন মেরিন ড্রাইভ বিলীন হয়ে পূর্ব পাশের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিসহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হতে পারে। ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, ওই এলাকায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক গড়ে ওঠায় জমির কদর বাড়ছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মেরিন ড্রাইভের পূর্ব পাশের বিপুল জমি কিনে হোটেল–মোটেল তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিছু প্রভাবশালী অবৈধভাবে সমুদ্রের বালু তুলে জমি ভরাট করছেন। সৈকত থেকে অবাধে বালু তোলায় মেরিন ড্রাইভের গোড়ার অংশ নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এখন জোয়ারের ধাক্কায় নড়বড়ে অংশের মেরিন ড্রাইভে ভাঙন দেখা দিচ্ছে।
আরও পড়ুনমেরিন ড্রাইভের ভাঙন ঠেকাতে বালুর বাঁধ০৫ আগস্ট ২০২৩আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও অমাবস্যার জোয়ারের প্রভাবে গত সোমবার থেকে সাগরে ঢেউয়ের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ মিটার বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ঢেউয়ের উচ্চতা থাকে ৩ মিটার। শুক্রবার থেকে উচ্চতা কমে আসতে পারে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ–প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার বিশ্বাস বলেন, ৮০ কিলোমিটারের মেরিন ড্রাইভ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইসিবি তত্ত্বাবধান করে। সড়কের টেকনাফ অংশের বিভিন্ন স্থানে জোয়ারের ধাক্কায় ভেঙে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে ইসিবি।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মেরিন ড্রাইভের রক্ষণাবেক্ষণ করে সেনাবাহিনী। ঢেউয়ের আঘাতে মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুনবড় হচ্ছে মেরিন ড্রাইভ সড়কের ভাঙন, ঝুঁকিতে প্রায় দুই হাজার পরিবার০৪ আগস্ট ২০২৩.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।
পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।