‘আমরার কোনো ছুডি নাই ছুডি লইলে খায়াম কী’
Published: 2nd, May 2025 GMT
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসেও ছুটি কাটাতে পারেননি প্রান্তিক শ্রমিকরা। প্রতিদিনের মতো গত বৃহস্পতিবারও নিজ নিজ কাজে ছুটেছেন তারা। এসব শ্রমিকের ভাষ্য, গরিব মানুষের কোনো দিবস নেই। খেতে হলে প্রতিদিন কাজ করতে হবে।
‘কাজ করেই প্যাট (পেট) চলে না। না করে কী করব? এক বস্তা চাল ভরে ওই অটোমিলে নিয়ে যাব। তার পর পাব ১৪ টাকা। ভোরদিন ভোরে খুব বেশি হলেও ৫০-৬০ বস্তা চাল ভরি। টাকা পেলে চাল কিনব, নুন (লবণ) কিনব। কিনে নিয়ে যাইয়া বউ ছোয়ালপাল মিলে খাব। আমার প্যাট চলে না, দিবস দিয়ে কী হবি।’ কথাগুলো বলছিলেন কুমারখারীর নন্দলালপুর ইউনিয়নের বাঁশআড়া এলাকার বাসিন্দা মুকুল শেখ (৪৩)।
কুমারখালী পৌরসভার এলংগী এলাকার একটি চালকলের শ্রমিক মুকুল শেখ জানান, শ্রমিক দিবস তো ছুটির দিন। বসে থাকার কথা। কিন্তু প্যাট চলে না বলে কাজ করছেন। সারাদিন চাল ভরে ৫০০-৬০০ টাকা পান। এতে তাঁর ৭ জনের সংসার চলে না। রাতে ভ্যান চালাতে হয়। ভ্যান চালিয়ে প্রতিদিন ১৫০-২০০ টাকা আয় করেন।
এলংগী এলাকার একটি চালকলে সাত বছর ধরে কাজ করছেন মো.
শ্রমিক দিবস কী জানেন না উপজেলার বাঁখই মহব্বতপুর গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক আব্দুল মমিন। তিনি বলেন, ‘একজন ডাক দিলেই কাজে যাওয়া লাগে। সংসারে চার-পাঁচটা লোক খানেওয়ালা। প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় করি। তবুও একদিন কামে না গেলে পেট চলে না।’
প্রায় ৩০ বছর ধরে কুমারখালী পৌরসভার শেরকান্দি এলাকায় সুতায় রং লাগানোর ভ্যাটে কাজ করছেন নন্দলালপুর ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমান মজুরিতে সংসার চলে না। সরকারও নজর দেয় না। তাই শ্রমিক দিবস জেনেও কাজ করছেন তিনি।
একজন সরকারি কর্মকর্তা ছুটির সঙ্গে বেতনও ভোগ করেন। কিন্তু প্রান্তিক শ্রমিকরা কাজে না গেলে মজুরি পান না জানিয়ে কুমারখালী জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য কে এম আর শাহিন বলেন, শ্রমিক দিবস জেনেও পেটের দায়ে কাজ করছেন শ্রমিকরা। তাদের জন্য অন্তত এক দিনের ভাতা চালু করা হলে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস অর্থবহ হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের গাগলাইল এলাকায় গিয়ে কথা হয় ধান কাটায় ব্যস্ত কয়েকজন কৃষি শ্রমিকের সঙ্গে। তারা বললেন, আজকে কী দিবস তারা জানেন না। মে দিবসের কথা বলতেই কয়েকজন বললেন, এমন একটি দিবসের কথা শুনেছেন। তবে ছুটির বিষয়টি জানেন না। মে দিবসের ছুটির কথা বলতেই তাদের সরল উত্তর, ‘আমরার কোনো ছুডি নাই। ছুডি লইলে খায়াম (খাবো) কী’।
কৃষি শ্রমিক শওকত আলী, ইদ্রিছ আলী, মাসুদ মিয়া, দীন ইসলাম ও আইয়ুব আলী জানালেন, তারা শ্রমিক দিবস সম্পর্কে কিছু জানেন না। ছুটির কথাও জানেন না। তাদের ভাষ্য, সামনে কাজ থাকলেই কাজ করতে হয়। ছুটি নিলে খাবেন কী, পরিবার চলবে কী করে!
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হত্যা মামলায় দেবিদ্বারের সাবেক পৌর মেয়র কারাগারে
কুমিল্লার দেবিদ্বারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আমিনুল ইসলাম সাব্বির (১৭) হত্যা মামলায় দেবিদ্বার পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইফুল ইসলাম শামীমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে শামীম কুমিল্লা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. মাহাবুবুর রহমান জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। শামীম একই উপজেলার জাফরগঞ্জ মীর আব্দুল ডিগ্রি কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক পদে কর্মরত।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সাবেক পৌর মেয়র শামীম এ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। সম্প্রতি তিনি উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে তাকে দায়রা জজ আদালতে হাজির হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. শহিদুল্লাহ ও মো. জসিম উদ্দিন আবাদ বলেন, ‘ঘটনার সময় সাবেক মেয়র শামীম পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ছিলেন। কক্সবাজার থেকে কোনো আসামি সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন না। আমরা তার কক্সবাজারে অবস্থানের সংশ্লিষ্ট প্রমাণও আদালতে উপস্থাপন করেছিলাম। এখন জামিনের জন্য আবারও উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর উল্লসিত জনতা দেবিদ্বার থানা ঘেরাওকালে সাব্বির মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। ঢাকার একটি হাসপাতালে এক মাসেরও বেশি চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি। এ ঘটনায় তার মামা নাজমুল হাসান বাদী হয়ে দেবিদ্বারের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ও পৌর মেয়র শামীমসহ ৯৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামস উদ্দিন মুহাম্মদ ইলিয়াস জানান, এ হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ৩১ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।