কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসেও ছুটি কাটাতে পারেননি প্রান্তিক শ্রমিকরা। প্রতিদিনের মতো গত বৃহস্পতিবারও নিজ নিজ কাজে ছুটেছেন তারা। এসব  শ্রমিকের ভাষ্য, গরিব মানুষের কোনো দিবস নেই। খেতে হলে প্রতিদিন কাজ করতে হবে।

‘কাজ করেই প্যাট (পেট) চলে না। না করে কী করব? এক বস্তা চাল ভরে ওই অটোমিলে নিয়ে যাব। তার পর পাব ১৪ টাকা। ভোরদিন ভোরে খুব বেশি হলেও ৫০-৬০ বস্তা চাল ভরি। টাকা পেলে চাল কিনব, নুন (লবণ) কিনব। কিনে নিয়ে যাইয়া বউ ছোয়ালপাল মিলে খাব। আমার প্যাট চলে না, দিবস দিয়ে কী হবি।’ কথাগুলো বলছিলেন কুমারখারীর নন্দলালপুর ইউনিয়নের বাঁশআড়া এলাকার বাসিন্দা মুকুল শেখ (৪৩)। 

কুমারখালী পৌরসভার এলংগী এলাকার একটি চালকলের শ্রমিক মুকুল শেখ জানান, শ্রমিক দিবস তো ছুটির দিন। বসে থাকার কথা। কিন্তু প্যাট চলে না বলে কাজ করছেন। সারাদিন চাল ভরে ৫০০-৬০০ টাকা পান। এতে তাঁর ৭ জনের সংসার চলে না। রাতে ভ্যান চালাতে হয়। ভ্যান চালিয়ে প্রতিদিন  ১৫০-২০০ টাকা আয় করেন। 
এলংগী এলাকার একটি চালকলে সাত বছর ধরে কাজ করছেন মো.

হাবিব (৩৫) ও তাঁর স্ত্রী কাকলী খাতুন। শ্রমিক দিবসে কাজ করা প্রসঙ্গে হাবিব বলেন, চুক্তিভিত্তিক কাজ করে প্রতিদিন ২২০-২৪০ টাকা আর দেড় কেজি চাল পান তিনি। এ দিয়েই কোনোমতে চলে যাচ্ছে। তাঁর ভাষ্য, ‘গরিব মানুষের শ্রমিক দিবস নাই। খাতি (খাওয়া) লাগলি কাম করাই লাগবি।’ 
শ্রমিক দিবস কী জানেন না উপজেলার বাঁখই মহব্বতপুর গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক আব্দুল মমিন। তিনি বলেন, ‘একজন ডাক দিলেই কাজে যাওয়া লাগে। সংসারে চার-পাঁচটা লোক খানেওয়ালা। প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় করি। তবুও একদিন কামে না গেলে পেট চলে না।’
প্রায় ৩০ বছর ধরে কুমারখালী পৌরসভার শেরকান্দি এলাকায় সুতায় রং লাগানোর ভ্যাটে কাজ করছেন নন্দলালপুর ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমান মজুরিতে সংসার চলে না। সরকারও নজর দেয় না। তাই শ্রমিক দিবস জেনেও কাজ করছেন তিনি। 

একজন সরকারি কর্মকর্তা ছুটির সঙ্গে বেতনও ভোগ করেন। কিন্তু প্রান্তিক শ্রমিকরা কাজে না গেলে মজুরি পান না জানিয়ে  কুমারখালী জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য কে এম আর শাহিন বলেন, শ্রমিক দিবস জেনেও পেটের দায়ে কাজ করছেন শ্রমিকরা। তাদের জন্য অন্তত এক দিনের ভাতা চালু করা হলে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস অর্থবহ হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের গাগলাইল এলাকায় গিয়ে কথা হয় ধান কাটায় ব্যস্ত কয়েকজন কৃষি শ্রমিকের সঙ্গে। তারা বললেন, আজকে কী দিবস তারা জানেন না। মে দিবসের কথা বলতেই কয়েকজন বললেন, এমন একটি দিবসের কথা শুনেছেন। তবে ছুটির বিষয়টি জানেন না। মে দিবসের ছুটির কথা বলতেই তাদের সরল উত্তর, ‘আমরার কোনো ছুডি নাই। ছুডি লইলে খায়াম (খাবো) কী’। 
কৃষি শ্রমিক শওকত আলী, ইদ্রিছ আলী, মাসুদ মিয়া, দীন ইসলাম ও আইয়ুব আলী জানালেন, তারা শ্রমিক দিবস সম্পর্কে কিছু জানেন না। ছুটির কথাও জানেন না। তাদের ভাষ্য, সামনে কাজ থাকলেই কাজ করতে হয়। ছুটি নিলে খাবেন কী, পরিবার চলবে কী করে!
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক জ করছ ন ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

নিয়োগবিধির প্রজ্ঞাপন : প্রধান শিক্ষক পদে ৮০ শতাংশ নিয়োগ পদোন্নতিতে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগে নতুন বিধিমালা, ২০২৫–এ পরিবর্তন এনেছে সরকার। নতুন সংশোধন অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা ও বয়সসীমায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শক্রমে এই সংশোধনী জারি করা হয়েছে গতকাল রোববার (২ নভেম্বর)।

নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক পদে ৮০ শতাংশ নিয়োগ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ২০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে হবে। পদোন্নতির জন্য প্রার্থীকে সহকারী শিক্ষক পদে অন্তত ১২ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং মৌলিক প্রশিক্ষণ ও চাকরি স্থায়ীকরণ সম্পন্ন করতে হবে।

আরও পড়ুনইউরোপে পাইলটদের বেতন কোন দেশে কত ৪ ঘণ্টা আগে

সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক—উভয় পদেই প্রার্থীদের কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্তত দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি থাকতে হবে। শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ বা সমমানের ফলাফল গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ছাড়া তফসিল–২ অনুযায়ী গৃহীত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক উভয় পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনকুয়েতে ডেপুটেশনে নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বেতন ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা০২ নভেম্বর ২০২৫

নতুন বিধিমালার মাধ্যমে ‘অন্যান্য বিষয়ে’ শব্দের পরিবর্তে ‘বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ে অন্যূন’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে বিজ্ঞান বিষয়ের প্রার্থীরাও সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংশোধিত বিধিমালার ফলে শিক্ষক নিয়োগের মান আরও উন্নত হবে এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় দক্ষ প্রার্থীরা সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে সরকার প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগে নতুন ধারা আনতে চায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ