একটা সময় ছিল, যখন তাঁর একটুখানি হাসি, চোখের দৃষ্টি কিংবা নিঃশব্দে ঘুরে যাওয়া চুলের ভঙ্গিমাও মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিত। নাম তাঁর মৌসুমী। ‘প্রিয়দর্শিনী’– এ নামটা যেন তাঁর জন্যই সৃষ্টি। শুধু অভিনয় দিয়ে নয়; নিজের ব্যক্তিত্ব, সৌন্দর্য এবং কোমল আচরণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন কোটি ভক্তের হৃদয়ের রানী।
মৌসুমী এখন আছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। দুই বছর ধরে সেখানেই। মায়ের অসুস্থতা আর মেয়ের পড়াশোনার কারণে পরিবারকে সময় দিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে পর্দায় দেখা মিলছে না তাঁর। ফলে ক্যামেরার ঝলক, শুটিং সেটের কোলাহল কিংবা মেকআপ রুমের আয়নায় প্রতিফলিত হয় না প্রিয়দর্শিনীর মুখ। তিনি আছেন শুধুই আপনজনের সঙ্গে– নীরবে, নিশ্চুপে। ওমর সানী– যিনি একসময় ছিলেন পর্দার নায়ক, বাস্তবে আছেন তাঁর জীবনসঙ্গী হয়ে। সম্প্রতি তিনি বললেন এক গভীর বিষাদের কথা, ‘মৌসুমী ভুলে যেতে চাইছে, সে কখনও মৌসুমী ছিল।’
ওমর সানীর এই কথায় আছে তীব্র এক নীরবতা। যে অভিনেত্রী একসময় সিনেমা হলের অন্ধকার ভেঙে আলো হয়ে উঠতেন, তিনিই আজ নিজেকে পেছনে সরিয়ে রাখছেন সময়ের গহ্বরে। সিনেমাকে ভালোবেসে এক জীবন কাটিয়ে দেওয়া সেই মৌসুমী কি তবে বিদায় নিতে চাইছেন? কারণ? একটা সময় আসে, যখন মানুষ নিজেকেই প্রশ্ন করে– আর কতদূর? কী পেলাম? আর কী চাই? মেয়ের পড়াশোনা, অসুস্থ মা, পরিবার– এসব হয়তো ‘উত্তর’ নয়, তবে ব্যাখ্যা।
তবু প্রশ্ন থাকে, এত সহজে কি বিদায় বলা যায়? একজন মৌসুমী কি হারিয়ে যেতে পারেন? তিনি তো শুধু একজন অভিনেত্রী নন; একসময়ের আবেগ, এক প্রজন্মের ভালোবাসা। নতুন প্রজন্ম হয়তো তাঁর নাম জানে, ছবিগুলো চেনে, কিন্তু অনুভব করে না তাঁর পর্দার উপস্থিতি। সেই সৌজন্যবোধ, সেই মায়া– সব যেন ধীরে ধীরে আটকে যাচ্ছে সময়ের ফ্রেমে। একজন বলেছিলেন, ‘যদি কোনো অভিনেতা তাঁর চরিত্রের চেয়েও বড় হয়ে ওঠেন, তবে সে-ই সত্যিকারের কিংবদন্তি।’ মৌসুমী ঠিক তেমনই একজন। ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে যাঁর যাত্রা শুরু, তা থেমে থেমে নয়; বরং গানে, গল্পে, কান্নায় আর ভালোবাসায় ছিল পূর্ণ। সেই সিনেমায় সালমান শাহর পাশে দাঁড়িয়ে তিনি এক নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন।
এখন প্রশ্ন মৌসুমী কি কখনও চলে যেতে পারেন? তিনি তো আমাদের স্বপ্নের মতো সুন্দর। যারা মৌসুমীর সিনেমা দেখে বড় হয়েছেন, যারা আজও তাঁর পুরোনো ছবির গান শুনে একা রাতে জানালার বাইরে মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাদের জন্য খবরটা যেন হারিয়ে যাওয়ার গল্প– একটা সময়ের, একটা আবেগের, একটা ভালোবাসার।
হয়তো এ বিরতিটা তাঁর প্রয়োজন ছিল। হয়তো তিনি আর ফিরবেন না। অথবা একদিন, হঠাৎ করেই আবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে বলে উঠবেন– ‘আমি ফিরেছি।’ যদি না-ই ফেরেন, তাহলেও মৌসুমী ঠিক যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। স্মৃতির মণিকোঠায়, আলো-ছায়ার কল্পনায় আর কোটি ভক্তের ভালোবাসায়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে