ওয়াসিম আকরামকে ক্রিকেটবিশ্ব চেনে ‘সুলতান অফ সুইং’ নামে। পাকিস্তানের এই সাবেক অধিনায়ক ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখে খেলে গেছেন পরবর্তী দুই দশক। ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জেতা আকরাম ওয়ানডে ও টেস্ট মিলিয়ে ৯০০-রও বেশি উইকেট নিয়েছেন। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার বিবেচনা করা হয় তাঁকে।  ২০২২ সালে প্রকাশিত আকরামের আত্মজীবনী ‘সুলতান: এ মেমোয়র’ শুধু খেলার মাঠের সাফল্যের গল্প নয়, বরং একজন মানুষ হিসেবে আকরামের আলো-আঁধারির জীবনের খোলা জানালা। সাংবাদিক গিডিওন হাইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা এই বইটি পাঠককে নিয়ে যায় তার খেলোয়াড়ি জীবন, পারিবারিক সম্পর্ক, জনপ্রিয়তা, এবং সবচেয়ে জটিল অধ্যায়—নেশা ও বেদনার মধ্য দিয়ে। বইয়ের ‘ব্যাটলিং মাই ডেমোনস’ অংশে আকরাম নিজের অন্ধকার সময়ের বিবরণ দেন অকপটে—একজন স্বামী, বাবা, তারকা ও নেশাগ্রস্ত মানুষ হিসেবে নিজের ভেতরের দ্বন্দ্ব ও অপরাধবোধের নিখুঁত অনুবাদ যেন এই অধ্যায়। এখানেই উঠে আসে তার স্ত্রী হুমা মুফতির সঙ্গে সম্পর্ক, তার মৃত্যুর করুণ কাহিনি, এবং আকরামের একাকিত্বের বিরুদ্ধে তার ভেতরের লড়াইয়ের কথা। কী লিখেছেন ওয়াসিম আকরাম

অনেক পাঠক এই বইটি পড়বেন বল টেম্পারিং, ম্যাচ-ফিক্সিং এবং থ্রোয়িংয়ের মতো বিতর্কগুলির দিকে নজর রেখে। কিছু ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা আমার জন্য সহজ, কারণ আমার লুকানোর কিছুই নেই। আমার গল্পের যে অংশটি বলা সবচেয়ে কঠিন, তার সাথে ক্রিকেটের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু যদি আমি সৎ থাকতে চাই, তবে আমাকে তা বলতে হবে।

দীর্ঘ সময় ধরে আমি হুমা'র জন্য ভালো স্বামী ছিলাম না, তেমনি তাহমুর ও আকবরের জন্য ভালো বাবাও ছিলাম না। আমি ছিলাম পাঞ্জাবি পুরুষ অভিভাবকের মতো; মাঝে মাঝে উপহার নিয়ে হাজির হতাম, কিন্তু সন্তান লালন-পালনের পুরো দায়িত্ব স্ত্রীর উপর ছেড়ে দিতাম। সত্যি বলতে, ছেলেরা সম্ভবত আমাদের পারিবারিক সাহায্যকারী মুহাম্মদ আব্বাসকে আমার চেয়ে বেশি দেখত।

আমি সত্যিই জানতাম না কী করতে হবে, তার সাথে যোগ হয়েছিল খেলোয়াড়দের মধ্যে থাকা স্বার্থপরতা এবং অলসতার বৈশিষ্ট্য। যারা সবকিছু নিজেদের জন্য করিয়ে নিতে অভ্যস্ত, যারা প্রতিটি ঘরে নিজেদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত। আমি নিজেকে প্রশ্রয় দিতে পছন্দ করতাম, পার্টি করতে ভালোবাসতাম।

হুমা ক্রিকেট–তামাশা কখনোই উপভোগ করত না। খেলা দেখতে পছন্দ করত না। সে ছিল স্মার্ট, সাহসী, স্বাধীন মহিলা। শুধু ভালোবাসার টানে আমার সঙ্গে সফরে যেত। এখন সে ছেলেদের ভালোবাসার টানে বাড়িতে থাকে। আমার সন্দেহ হয়, তার স্বামীর উপর ক্রিকেটের প্রভাব দেখে সে ছেলেদের খেলা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। আসলে তাদের কখনোই ক্রিকেটের প্রতি কোনো আগ্রহ জন্মায়নি, যা নিয়ে আমি অখুশিও নই।

এতে করে আমি ক্রমশ একা হয়ে পড়ছিলাম। আমি প্রচুর ভ্রমণ করতাম, টক শোতে অংশ নিতাম, বিজ্ঞাপন করতাম। এমনকি আমি ভারতের একটি রিয়েলিটি ডান্স প্রতিযোগিতা ‘এক খিলাড়ি এক হাসিনা’-তেও বিচারক ছিলাম।  

দক্ষিণ এশিয়ায় খ্যাতির সংস্কৃতি এক অদ্ভুত মোহ। এটি গ্রাস করে নেয়, প্রলোভন দেখায় আর ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। এক রাতে দশটা পার্টিতে যাওয়া যায়, আর কেউ কেউ সেটাই করে। এই জীবনযাত্রা আমাকেও ক্লান্ত করে তুলেছিল। আমার সহজ অভ্যাসগুলো ক্রমে বদভ্যাসে পরিণত হলো। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো, আমি কোকেনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েলাম।

শুরুটা হয়েছিল ইংল্যান্ডের এক পার্টিতে, কেউ সামান্য একটু (এক লাইন) দিয়েছিল, সেটাই প্রথম। কিন্তু ধীরে ধীরে আমার আসক্তি বাড়তে লাগল। একটা পর্যায়ে এমন হল যে মনে হতো, স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতেও আমাকে এটা নিতেই হবে। কোকেন আমাকে অস্থির করে তুলেছিল। আমাকে মিথ্যাবাদী বানিয়েছিল।

আমি জানি হুমা এই সময় ম্যানচেস্টার এবং লাহোরে প্রায়শই একা থাকত। সে করাচিতে তার বাবা-মা এবং ভাইবোনদের কাছে যাওয়ার ইচ্ছার কথা বলত। আমি দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। আংশিক কারণ ছিল আমার একা করাচি যেতে ভালো লাগত। অজুহাত দিতাম কাজের, কিন্তু আসল কাজ ছিল পার্টি করা। যা দিনের পর দিন ধরে হয়েছে। 

এখন এটি স্বীকার করতে যতটা খারাপ লাগছে, তখন এটি স্বীকার করা আরও কঠিন ছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না হুমা এক পর্যায়ে আমাকে ধরে ফেলেছিল। আমার ওয়ালেটে কোকেনের একটি প্যাকেট খুঁজে পায় সে। স্ত্রী এবং মা হিসেবে যেমন প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা তেমনই দেখিয়েছিল, তবে একজন ক্লিনিক্যাল কর্মী হিসেবেও। সে বললি ‘আমি জানি তুমি মাদক নিচ্ছ, তোমার সাহায্য দরকার।’

আমি রাজি হলাম। কারণ ওটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। প্রথমে ছিল সামান্য একটু, এরপর বাড়তে বাড়তে এক গ্রাম, দুই গ্রামে পৌছে গিয়েছিল। আমি ঘুমাতে পারতাম না। খেতে পারতাম না। ডায়াবেটিস ছিল, সে দিকে অমনোযোগী হয়ে পড়েছিলাম। আমি একটি পুনর্বাসন প্রোগ্রামে ভর্তি হতে রাজি হলাম। 

স্রষ্টা জানেন, আমি সেরে ওঠার চেষ্টা করছিলাম। সিনেমায় রিহ্যাব বোঝাতে একটি যত্নশীল, লালনপালনের পরিবেশ দেখানো হয়। কিন্তু লাহোরের এই রিহ্যাবটি খুব বাজে। পাঁচটি কক্ষ, একটি মিটিং রুম এবং একটি রান্নাঘর সহ একটি খালি ভবন। ডাক্তার একজন ‍প্রতারক, যিনি রোগীর চিকিৎসার পরিবর্তে মূলত পরিবারকে নিয়ন্ত্রণ করেন, ব্যবহারকারীদের মাদক থেকে আলাদা করার পরিবর্তে স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেন। সপ্তাহে ২ লাখ রুপির বেশি চার্জ করেন।

আমাকে প্রথমে জানানো হয়েছিল যে আমি এক মাসের জন্য সেখানে থাকব। দু'দিন পর এই বাধ্যতামূলক ন্যূনতম থাকার সময় তিন মাস বাড়ানো হয়। চিকিৎসা বলতে অবশ করা, সকালে ও সন্ধ্যায় মুঠো মুঠো ট্যাবলেট খাওয়া, সাথে বক্তৃতা এবং প্রার্থনা। আমি অলস বোধ করি। ওজন বেড়ে গিয়েছিল। দিনে এক ঘণ্টা আমি আমাদের ছোট ব্যায়ামাগারের চারপাশে জম্বির মতো ঘুরে বেড়ােই। সেখান থেকে আমার বাবার অফিস দেখা যায়, যদিও তিনি জানতেন না আমি কোথায় আছি। এ সবের বাইরে আমার করার কিছুই নেই, শুধু মন খারাপ করে বসে থাকা ছাড়া।

এক মাস আমি হুমা, তাহমুর ও আকবরকে দেখিনি। যখন তারা দেখা করতে এল, আমি আমার স্ত্রীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বললাম, ‘আমাকে এখান থেকে বের হতে হবে। আমাকে কাজ করতে হবে। আমাকে আমার বসকে ফোন করতে হবে। নইলে তারা আমাকে বরখাস্ত করবে!’

ডাক্তার বিজয়ীর মতো দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বেশ আত্মতৃপ্তির সঙ্গে হুমাকে বললেন, ‘‘আমি তো আগেই বলেছিলাম সে এটা করবে!’

আমি আমার দিক থেকে পুরো মেয়াদ থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আরও সাত সপ্তাহ পর হুমা যখন বুঝল ডাক্তার একজন ধোঁকাবাজ, তখন বের করে নিয়ে আসল। 

বের হওয়ার পর আমি শান্ত থাকার চেষ্টা করি, স্থিতিশীল হওয়ার চেষ্টা করি। এমন সময়ে শাহরুখ খান আমাকে কলকাতা নাইট রাইডার্সে বোলিং কোচের একটি আকর্ষণীয় চাকরি প্রস্তাব করে। এটি ছিল কোনো সিনিয়র দলে আমার প্রথম কোচিং। কয়েক মাস পর যখন আহসান এলো, হুমা তাকে বলল, ‘ওয়াসিমকে আগের চেয়ে ভালো মনে হচ্ছে, তবে আমি নিশ্চিত নই।’

সে ঠিকই বলেছিল| যতই চেষ্টা করি না কেন, আমার ভেতরে একটা অংশ তখনও ধিকধিক করে জ্বলছিল সেই অপমানের জন্য, যেটা আমাকে সহ্য করতে হয়েছিল। আমার আত্মমর্যাদায় আঘাত লেগেছিল, আর আগের জীবনের মোহ তখনও পুরোপুরি কাটেনি। এক পর্যায়ে আমি বিয়ে বিচ্ছেদের কথাও ভাবছিলাম। শেষমেশ ঠিক করলাম, ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে চলে যাব। সেখানেই হুমার নিয়মিত নজরদারির বাইরে গিয়ে আমি আবার কোকেন ব্যবহার শুরু করলাম।

আমি যখন পুরোনো জীবনের স্বাদ নিতে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছি, তখন লাহোরে হুমা, তাহমূর আর আকবরের গলা খারাপ হয়ে গেল। আজও ঠিক জানি না কেন এমন হলো। ঘটনার শুরু হুমার দাঁতের ডাক্তারি পরীক্ষার পর, সম্ভবত সেখানেই কোনও সংক্রমণ হয়েছিল। যাই হোক, ছেলেরা ধীরে ধীরে সেরে উঠলো, কিন্তু হুমার অবস্থার উন্নতি হলো না। আমি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে চলে গেলাম গুরুগাঁওয়ে কেকেআর বোলারদের ক্যাম্পে যোগ দিতে। কিন্তু আমি সেখানে থাকতেই হুমার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে থাকল।

অবশেষে ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর হুমাকে ন্যাশনাল ডিফেন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে তার সংক্রামক এন্ডোকার্ডাইটিস ধরা পড়ে।

কথা বলে যা বুঝলাম, হুমার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম লাহোরে ফিরে যাব। 

লাহোরে পৌঁছে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম, হুমার শারীরিক অবস্থা এতটা খারাপ হয়ে গেছে ভাবতেও পারিনি। আর বিস্ময় লাগল যখন দেখলাম যে ডাক্তাররা একটি সরল প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিতে পারছেন না। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো তাকে ডক্টরস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হবে, যদি তার হার্ট ভাল্ব প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। আমাকে জানানো হয় চিকিৎসা বিল শেষ পর্যন্ত দুই লাখ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

অবস্থার উন্নতির কোনো লক্ষণই দেখছিলাম না। মনে হচ্ছিল ডাক্তাররা সবকিছুতে অমনোযোগী, শুধু নিশ্চিত করছিলেন যে আমাদের কি কি বিল করা করা হচ্ছে। আমি উদ্বেগ বাড়ছে, হুমারও। মনে আছে তার বিছানার পাশে বসে আছি, সে আমার নতুন গজানো দাড়ি ধরে আদর করছিল। আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, ‘যদি আমার কিছু হয়, ছেলেদের কী হবে?’ 

আমি সান্ত্বনা দিয়ে উত্তর দিলাম, ‘জান, তোমার কিছুই হবে না। আর আমি ছেলেদের দেখাশোনা করার জন্য এখানে আছি।’ সে শুধু হেসেছিল কারণ সে জানত যে আমার মতো পাঞ্জাবি-বাবার দ্বারা কখনও ছেলেদের দেখাশোনা করা সম্ভব নয়।

আমরা তখনো পাকিস্তানে। কিন্তু অন্য কোথাও যাওয়ার দরকার ছিল। সিঙ্গাপুরের এক বন্ধু আমাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সেখানে, বিশেষ করে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করল। খরচ আকাশছোঁয়া, ১ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি। কিন্তু মনে হচ্ছিল চিকিৎসকদের মনোযোগ পাওয়ার এটাই একমাত্র উপায়। ২০ অক্টোবর আমার শ্যালকসহ হুমাকে নিয়ে বিমানবন্দরে রওনা হওয়ার সময় পরীক্ষা করার জন্য একজন ডাক্তারও পাওয়া যায়নি। আমাদের হোপ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রায় আধা ঘণ্টার মতো উড়েছে, এমন সময়ে হুমা হঠাৎ বলে উঠল, ‘আমার স্বামী কোথায়?’

আমি তার হাত ধরে বললাম, ‘আমি এখানেই আছি।’ 

এই কথা বলার সাথে সাথে হুমা চোখ বন্ধ করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই অস্থিরতা এবং কষ্ট পেতে শুরু করল। প্লেনে থাকা ইমারজেন্সি মেডিকেল টিম তাকে ইন্ট্রাভেনাস ডায়াজেপাম দেয়, আর তখনই তার হৃদযন্ত্র থেমে যায়—কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।

ডাক্তাররা সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করেন, আধা ঘণ্টা ধরে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত হালকা একটা স্পন্দন ফিরে আসে। এরপর আমরা উড়ে গেলাম চেন্নাইয়ের দিকে, সেখানে অ্যাপোলো হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমি এতটাই ভয় আর দুশ্চিন্তায় ছিলাম যে বন্ধুবান্ধবদের ফোন করে কাঁপা কণ্ঠে বলছিলাম—হুমা হয়তো আর বাঁচবে না। হার্ভে পরে বলেছিল, আমি তাকে ফোন করেছিলাম ঠিকই, কিন্তু কী বলছিলাম, সে কিছুই বুঝতে পারেনি।

চেন্নাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যখন আমরা নামি, তখন আমাদের প্রয়োজনীয় কোনো অনুমতিই ছিল না, আমাদের ভিসাও ছিল না। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেসব নিয়ম ছাড় দিয়েছিল। অ্যাপোলো হাসপাতালও কোনো বিল চায়নি। ওদের সেই সহানুভূতির কথা আমি কখনো ভুলব না।

কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হলো। হুমার ব্রেন-স্টেমে মারাত্মক আঘাত লেগেছিল। নিজে থেকে শ্বাস নিতে পারছিল না, মেশিনের সাহায্যে শ্বাস চলছিল। হুমা প্রাণপণে বাঁচার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। আমিও তাকে ধরে রাখার জন্য সমস্ত শক্তি দিয়ে লড়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ২৬ অক্টোবর সে চলে গেল। তার বয়স ছিল মাত্র বিয়াল্লিশ বছর।

পাঠকের জন্য তথ্যহুমা মুফতির মৃত্যুর কয়েক বছর পর ২০১৩ সালে ওয়াসিম আকরাম দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন অস্ট্রেলিয়ার শানিয়ারা থম্পসনকে। তারা এখন করাচি এবং সিডনি দু জায়গাতে থাকেন। তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। হুমার ঘরের দুই ছেলের একজন অস্ট্রেলিয়ায়, অন্যজন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ক্রিকেটের বাইরে আকরাম নিয়মিত টেলিভিশনে বিশ্লেষক হিসেবে উপস্থিত হন এবং বিভিন্ন লিগে কোচ ও পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। সেইসঙ্গে তিনি ডায়াবেটিস ও মাদকাসক্তি থেকে উত্তরণসহ বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক প্রচারণায় অংশ নিয়ে থাকেন। বইটি প্রকাশের পর ওয়াসিম আকরামের সাহসিকতা প্রশংসিত হয়। বিশেষ করে মাদকাসক্তি ও পারিবারিক সংকটের মতো স্পর্শকাতর বিষয় প্রকাশ্যে আনায় ‘কিং অব সুইং’য়ের বইটি বিশেষভাবে আলোচিত। .

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আকর ম র র জন য আম র স জ বন র আম দ র অবস থ করছ ল প রথম র একট

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে