নাব্য সংকটে ধুঁকতে থাকা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে ২০১৯ সালে খনন শুরু করেছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ছয় বছরের খননে পানিপ্রবাহ তো বাড়ানো যায়নি, উল্টো অন্তত তিন স্থানে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে নদের গতিপথ। কোথাও অপরিকল্পিতভাবে নদের মধ্যেই ড্রেজিংয়ের বালু ফেলে, আবার কোথাও জমি দখল করার জন্য মূল প্রবাহ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে নদীভাঙনে বাড়িঘর ও ফসলি জমি হারিয়েছে শত শত মানুষ।

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত ব্রহ্মপুত্রের সাবেক ধারাটি গাইবান্ধা, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ হয়ে ভৈরবে মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। উজানে এটি সংযুক্ত যমুনা নদীর সঙ্গে। বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের ২২৭ কিলোমিটার এলাকাই খননের দায়িত্বে রয়েছে তারা। প্রকল্প এলাকায় দুই থেকে তিন কিলোমিটার পরপর বসানো হয়েছে ৯৬টি ড্রেজার মেশিন। বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলায় ৯০ কিলোমিটার এলাকায় খনন চলছে। ২ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো। দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোয় প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৭ সালে। 

তবে অভিযোগ উঠেছে, নদের সর্বনাশের পাশাপাশি প্রকল্পটির নামে চলছে সরকারি অর্থ লুটপাটের মচ্ছব। যত্রতত্র বালু উত্তোলন করায় বিভিন্ন স্থানে বর্ষায় দেখা দিচ্ছে নদীভাঙন। এ ছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় চলছে বালু লুটপাট।
সরেজমিন দেখা যায়, গত ছয় বছরে নদের খনন করা স্থানের অনেকটিতে ফের চর জেগেছে। বর্ষা মৌসুম ছাড়া সব স্থান দিয়ে নৌকা চলে না। পানির প্রবাহ না বাড়ায় ড্রেজিংয়ের পর অনেক স্থানে নদীটি পরিণত হয়েছে সরু খালে। গৃহপালিত পশুর পাশাপাশি মানুষও হেঁটে পারাপার হচ্ছে। এ ছাড়া খনন করা বালু ফেলা হচ্ছে নদের ধারেই। এতে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদেই ফেরত যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকার বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করলেও তারা সুফল পাচ্ছেন না। 
অথচ প্রকল্পটি নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, খনন শেষ হলে নদে শুষ্ক মৌসুমেও ১০ মিটার পানির প্রবাহ থাকবে। প্রশস্ত হবে ৩০০ মিটার। চলবে জাহাজ। আন্তর্জাতিক নৌরুট হিসেবেও এটি ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া উন্নয়ন ঘটবে মৎস্যসম্পদের। এতে বদলে যাবে নদের দুই পাড়ের মানুষের জীবনধারা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোটি কোটি টাকায় বছরের পর বছর খনন চললেও নাব্য সংকট কাটেনি। উল্টো পুরোনো গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়ায় নদীতে গেছে অনেকের বাড়িঘর ও ফসলি জমি।
জামালপুর শহরের মেডিকেল রোড এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের মূলধারা ইউ প্যাটার্নে প্রায় দেড় কিলোমিটার ঘুরিয়ে দিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী নেতা মির্জা আজম। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পাঁচবারের এ সংসদ সদস্য এরপর ভরাট করা স্থানে তৈরি করেছেন শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
গফরগাঁও উপজেলায় মূল নদ ভরাট করে প্রায় দুই কিলোমিটার দূর দিয়ে নতুন গতিপথ তৈরি করিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রতাপশালী সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল। এখানেও উদ্দেশ্য ছিল একটিই– জমি দখল। মূলধারা সরিয়ে দেওয়ায় এ এলাকায়ও কয়েকশ মানুষ হারিয়েছে বাড়িঘর। নদীতে গেছে বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি। 

স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব আবদুস সাত্তার বলেন, এখনকার নদের জায়গায় আগে আমরা ফসল ফলাতাম। এখন নদে সরে সেই জমি নেই হয়ে গেছে। এতে আমাদের আয়-রোজগার কমে গেছে।
এ ছাড়া ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলা নামাপাড়ায় মূল গতিপথে বালু ভরাট করায় তিনটি উপধারা তৈরি হয়েছে। প্রবাহ প্রায় ছয় কিলোমিটার সরে উচাখিলা, নামাপাড়া ও মরিচার চর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শতাধিক বাড়িঘর নদে বিলীন হওয়ার পাশাপাশি ফসলি মাঠ হারিয়েছেন অনেকে।

এদিকে, ময়মনসিংহ শহরের ভেতর দিয়ে অনেক স্থানে ব্রহ্মপুত্র প্রশস্ত ছিল এক কিলোমিটার পর্যন্ত। অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ে প্রশস্ততা কমে ৫০ থেকে ১০০ মিটারের সরু খালে পরিণত হয়েছে। আবার খননের বালু নদের ধারে রাখার কারণে অনেক খাল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন স্থানে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।
ময়মনসিংহ নগরীর কাচারিঘাট এলাকায় প্রায় ৪০ বছর ধরে নৌকা চালান আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ড্রেজিংয়ের নামে তামাশা করছে সরকার। এক জায়গায় সারাবছর মেশিন বসিয়ে তারা বালু বিক্রি করে। অথচ নদীর অন্য অংশে নৌকা চালানো যায় না। হেঁটেই নদ পারাপার হয় সবাই। 
গৌরীপুর উপজেলার বাসিন্দা সগীর আলী বলেন, আমাদের বাপদাদারা এই নদকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। একসময় অনেক বড় মাছ ধরা পড়ত। ছোটবেলায় শুনেছি, বড় বড় নৌকা ও ট্রলার চলত। এখন বর্ষাকাল ছাড়া পানিই পাওয়া যায় না। 

ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, খননের নামে ব্রহ্মপুত্রসহ নির্ভরশীল শত শত নদী ও খালকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের একাধিক ধারা বন্ধ করা হয়েছে। 
ময়মনসিংহের ডিসি মুফিদুল আলম বলেন, বিভিন্ন জায়গায় উত্তোলিত বালু সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। এতে কিছু অসাধু চক্র চুরি করে বালু নিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আর বিআইডব্লিউটিএর খনন ঠিকভাবে চলছে কিনা, এটি তাদের প্রকৌশলীরা ভালো বলতে পারবেন।
বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, এ প্রকল্পের অধীন চারটি নদীর খনন করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। কর্তৃপক্ষের দাবি, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের সংযোগমুখে ড্রেজিং করতে না পারায় প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ওই স্থানে ৩৬টি ড্রেজার মেশিন থাকলেও স্থানীয়দের বাধায় কার্যক্রম চালাতে পারছে না তারা। নদীভাঙনের অভিযোগ তুলে একাধিক ড্রেজার মেশিন পুড়িয়েও দিয়েছে তারা।

বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মহসিন মিয়া বলেন, করোনা মহামারিতে লকডাউন, অর্থপ্রাপ্তিতে ধীরগতি, নদের সীমানা নিয়ে জটিলতা, বালু রাখা নিয়ে সমস্যা, যমুনায় সংযোগমুখে খননকাজে স্থানীয়দের বাধা– এসব কারণে প্রকল্পটির কাজ ধীরগতিতে চলছে। আর বিআইডব্লিউটিএর কাজ শুধু ড্রেজিং করা। বালু বিক্রির দায়িত্ব জেলা কমিটির। এ নিয়ে ডিসির নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মেসবাহুল আলম বলেন, নদের গতিপথ পরিবর্তন হলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ প রকল প এল ক য় প রব হ নদ র স র খনন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জিল হোসেন মারা গেছেন, আদালতে তাঁর লড়াই শেষ হবে কবে

জিল হোসেনের ৭২ বছরের জীবনের ৪৭ বছরই কেটেছে আইনি লড়াইয়ে। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা পাসের সনদ পেতে, এরপর ক্ষতিপূরণের দাবিতে তাঁর এই দীর্ঘ লড়াই। লড়াই এখনো শেষ হয়নি। এর মধ্যেই মারা গেছেন জিল হোসেন।

জিল হোসেনের মৃত্যুর পর তিন বছর ধরে লড়াইটা করে যাচ্ছেন স্ত্রী ও তাঁর সন্তানেরা। কিন্তু পরিবারটির বিচারের অপেক্ষা শেষ হয়নি।

পরিবার ও মামলার নথিতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, জিল হোসেনের জন্ম ১৯৫০ সালের ৭ জানুয়ারি। ১৯৭১-৭২ শিক্ষাবর্ষে তিনি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের (কৃষি) পরীক্ষার্থী ছিলেন। এই পরীক্ষা হয় ১৯৭৩ সালে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার ফলাফলে তাঁকে অকৃতকার্য ঘোষণা করে। ফলাফল পুনর্বিবেচনা চেয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আবেদন করেন জিল হোসেন। কিন্তু সেই আবেদনে কাজ হয়নি।

১৯৭৫ সালে জিল হোসেন আবার পরীক্ষায় অংশ নেন, কিন্তু তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এসবের প্রতিকার চেয়ে ১৯৭৫ সালের ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহের প্রথম মুনসেফ আদালতে তিনি মামলা করেন। মামলায় তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর প্রাপ্ত নম্বরের (১৯৭৩ সালে দেওয়া পরীক্ষায়) সঙ্গে ভগ্নাংশ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নম্বরের সঙ্গে ভগ্নাংশ যোগ না করে তাঁকে অকৃতকার্য ঘোষণা করে।

সেই আইনি লড়াইয়ের শুরু। নিম্ন আদালত পেরিয়ে বছরের পর বছর উচ্চ আদালতেও ছুটেছেন তিনি। সিরাজগঞ্জ সদরের চিলগাছা গ্রামে পরিবার নিয়ে থাকতেন জিল হোসেন। ছোটখাটো ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। সংসারে স্ত্রী এবং চার ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। আইনি লড়াই নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মারা যান জিল হোসেন। এর পর থেকে মামলায় পক্ষ হয়ে তাঁর স্ত্রীসহ উত্তরাধিকারীরা লড়াই করে যাচ্ছেন।

বাবা উচ্চ আদালতের রায় দেখে যেতে পারেননি। বাবা নেই, বুকে চাপা কষ্ট হয়। বাবার কাছে শুনেছি, মামলা চালাতে গিয়ে জমিসহ অনেক কিছুই হারাতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে বাবার জীবন ধ্বংস হয়েছে, আমাদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।নূর হোসেন, বাদী জিল হোসেনের ছোট ছেলে

জিল হোসেনের ছোট সন্তান নূর হোসেন গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা উচ্চ আদালতের রায় দেখে যেতে পারেননি। বাবা নেই, বুকে চাপা কষ্ট হয়। বাবার কাছে শুনেছি, মামলা চালাতে গিয়ে জমিসহ অনেক কিছুই হারাতে হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে বাবার জীবন ধ্বংস হয়েছে, আমাদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

আরও পড়ুনশিক্ষাসনদ নিয়ে ৪৮ বছরের আইনি লড়াই: ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রায় বাস্তবায়নে বাধা নেই০৮ অক্টোবর ২০২৩

নূর হোসেন আরও বলেন, ‘মা এবং ভাইবোনেরা এখন মামলা চালাচ্ছি। মায়ের বয়স ৬৯ বছর। তিনিও নানা রোগে ভুগছেন। তিনিও চূড়ান্ত রায় দেখে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভ টু আপিল এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আছে। বাবা মারা যাওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো অনুশোচনা নেই, এটা কষ্টের।’

আইনি লড়াই

জিল হোসেন যখন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (কৃষি) দ্বিতীয় পর্বের চতুর্থ বর্ষের পুরোনো পাঠ্যক্রমের চূড়ান্ত পরীক্ষার্থী ছিলেন, তখন তাঁর বয়স ২৩ বছর। ময়মনসিংহের মুনসেফ আদালতে করা মামলায় জয়ী হন তিনি। আদালত ১৯৭৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ভগ্নাংশ নম্বর যোগ না করে তাঁকে অকৃতকার্য করাকেও বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

তবে জিল হোসেনের লড়াই তখনো বাকি। ওই রায়ের বিরুদ্ধে জজ আদালতে যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালের ৩১ জানুয়ারি এই আদালতের দেওয়া রায়েও জিল হোসেনের বহিষ্কারাদেশ বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

একই বছর হাইকোর্টে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হাইকোর্ট ১৯৭৬ সালের ২৪ আগস্ট মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য প্রথম মুনসেফ আদালতে পাঠান। এরপর ১৯৭৮ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রথম মুনসেফ আদালত ভগ্নাংশ নম্বর যোগ করে ৩০ দিনের মধ্যে জিল হোসেনের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুনসেবাদাতা বা গ্রহীতাদের সন্তুষ্টির মূল্যায়ন হয়নি২৮ এপ্রিল ২০২২

এর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবার জেলা জজ আদালতে আপিল করে, যা নামঞ্জুর হয়। পরে হাইকোর্টে আপিল করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর ওপর ১৯৮৩ সালের ১৬ জানুয়ারি রায় দেওয়া হয়। এ রায়ে বিচারিক আদালতের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।

অতঃপর সনদ, ক্ষতিপূরণ মামলা

পরিবার ও মামলাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাইকোর্টের রায়ের পর ১৯৮৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জিল হোসেনের একটি আবেদন গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে তাঁকে পাস নম্বর দিয়ে ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর নম্বরপত্রের সনদ দেওয়া হয়। তখন জিল হোসেনের বয়স ৪৭ বছর। তখন তাঁর সরকারি চাকরির বয়সসীমা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।

লিভ টু আপিল বিচারাধীন উল্লেখ করে একের পর এক সময় নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টর স্থগিতাদেশ না থাকায় মামলা চলতে আইনগত বাধা নেই। অথচ মামলাটি চলছে না, যা জিল হোসেনের পরিবারের জন্য ভোগান্তির।চঞ্চল কুমার বিশ্বাস, বাদীপক্ষের আইনজীবী

এরপর ২০০০ সালের ১৮ অক্টোবর ক্ষতিপূরণ দাবি করে অধস্তন আদালতে মামলা করেন জিল হোসেন। মামলায় অভিযোগ করেন, হাইকোর্টের রায় ১৪ বছর ৯ মাস পরে কার্যকর করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কাজে তাঁর জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে সরকারি চাকরির সম্ভাবনাও।

ক্ষতিপূরণের এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৬ আগস্ট রায় দেন ময়মনসিংহের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে জিল হোসেনকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২ কোটি টাকা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

১৪ বছর পর নিষ্পত্তি

বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৪ জুন হাইকোর্ট শর্ত সাপেক্ষে ময়মনসিংহের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ স্থগিত করেন। শর্ত হিসেবে ২ কোটি টাকার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ২৫ লাখ টাকা ৩ মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বলা হয়। এতে ব্যর্থ হলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়ে যাবে বলেও ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবী জানান, জিল হোসেন মারা যাওয়ার পর আপিল শুনানির জন্য উঠলে ১৩ বছর আগে হাইকোর্ট ২ কোটি টাকার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা সামনে আসে। এ অবস্থায় হাইকোর্ট আপিলকারী পক্ষকে ২৫ লাখ টাকা জমা দিয়ে আসতে বলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালে ৪ নভেম্বর ওই অর্থ জমা দেয়।

বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন। বিচারাধীন থাকলে নিম্ন আদালতে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী কার্যক্রম স্থগিত থাকে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তও আছে। আমরা শুনানির জন্য প্রস্তুত আছি।এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে নিয়োগ দেওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের করা আপিল খারিজ করে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট। ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় সংশোধন সাপেক্ষে বহাল রাখেন হাইকোর্ট। রায়ের দিন থেকে ওই অর্থের বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে তারা (জিল হোসেনের পরিবার) লভ্যাংশ পাবেন বলেও জানানো হয়। অবশ্য এর আগে শর্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জমা করা ২৫ লাখ টাকা ওই অর্থ থেকে বাদ যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভ টু আপিল

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে লিভ টু আপিল করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনটি ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি নিয়ে সেদিন তৎকালীন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন। লিভ টু আপিল ক্রম অনুসারে শুনানি হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় লিভ টু আপিলটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের গত ৩১ আগস্টের কার্যতালিকায় ৫০৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

জিল হোসেনের পরিবারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি পরিচালনার জন্য ২০২৩ সালের ৯ মার্চ আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস নিয়োগ পান। তাঁকে নিয়োগ দেয় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। চঞ্চল কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিম্ন আদালতে অর্থ আদায়ে জারি মামলার (২০০৯ সালে করা) কার্যক্রম অগ্রসরের জন্য বাদীর উত্তারাধিকারীকারেরা আবেদন করেন।

আরও পড়ুনসনদ ও ক্ষতিপূরণের জন্য ৪৭ বছরের আইনি লড়াই ১৭ ডিসেম্বর ২০২২

চঞ্চল কুমার বিশ্বাস বলেন, লিভ টু আপিল বিচারাধীন উল্লেখ করে একের পর এক সময় নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ না থাকায় মামলা চলতে আইনগত বাধা নেই। অথচ মামলাটি চলছে না, যা জিল হোসেনের পরিবারের জন্য ভোগান্তির।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে নিয়োগ দেওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন। বিচারাধীন থাকলে নিম্ন আদালতে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী কার্যক্রম স্থগিত থাকে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তও আছে। আমরা শুনানির জন্য প্রস্তুত আছি।’

আরও পড়ুন৩৩ বছর কেটে গেছে, কাজল কথা রেখেছেন০৫ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চার মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৭ জনকে বেলার চিঠি, বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধের অনুরোধ
  • গাজীপুরে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মহাসড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ
  • ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ 
  • জিল হোসেন মারা গেছেন, আদালতে তাঁর লড়াই শেষ হবে কবে
  • ভাঙ্গায় আন্দোলন: দৌলতদিয়ায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি
  • দৌলতদিয়ায় ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে পন্টুনের কবজা, যানবাহন পারাপার ব্যাহত
  • ময়মনসিংহে সিলিন্ডার লিকেজে হোটেলে অগ্নিকাণ্ড 
  • অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড় ধসের শঙ্কা