পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খলের ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধি এখন বিশ্বব্যাপী ব্যবসা–বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়। পরিবর্তনশীল বাণিজ্যনীতি, উচ্চ শুল্ক, পণ্য পরিবহনে বিলম্ব ও কাঁচামাল–সংকটের কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ বাড়ছে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন খাতের কোম্পানির আয়ও কমে যাচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ের ৫ হাজার ৭০০ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের গড় আয় ১৮ শতাংশ কমে যাবে। বাংলাদেশে এই হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের ২৫০টি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈশ্বিক গড় আয়ের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি হারে তাঁদের আয় কমবে।

সম্প্রতি বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসির ‘বৈশ্বিক ট্রেড পালস’ জরিপে অংশ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা এই আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন। সম্প্রতি এই জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্যাংকটি। এইচএসবিসি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জরিপে উঠে আসা বিভিন্ন তথ্যের কথা জানানো হয়। এইচএসবিসি জানিয়েছে, চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত জরিপটি পরিচালনা করা হয়। এতে বিশ্বের ১৩টি দেশের ৫ হাজার ৭০০টি কোম্পানির থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৫০টি।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, পণ্য পরিবহনে দেরি বা সরবরাহব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি হলে তাতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি ক্ষতির (আয় কমার) আশঙ্কায় রয়েছে। যদিও পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো নিজেদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল পুনর্গঠন করছে।

এইচএসবিসির জরিপে উঠে এসেছে, শুল্ক–কর ও বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তার কারণে আয় ও ব্যয় উভয় দিক থেকেই চাপে রয়েছে কোম্পানিগুলো। জরিপে অংশ নেওয়া দুই-তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে শুল্ক ও বাণিজ্য অনিশ্চয়তার কারণে ব্যয় বৃদ্ধির সম্মুখীন হয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ কোম্পানি জানিয়েছে, খরচের এই চাপ নিকট ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

মাহবুব উর রহমান বলেন, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি মানিয়ে নিচ্ছেন। এ বিষয়ে তাঁদের আশাবাদী মনোভাবই জরিপে প্রতিফলিত হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এইচএসব স কর মকর ত ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল

সাইপ্রাসে গত সপ্তাহে উন্নতমানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করেছে ইসরায়েল। গত ডিসেম্বর থেকে এ ধরনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার তৃতীয় চালান এটি। তুরস্কের সঙ্গে ক্রমে উত্তেজনা বেড়ে চলার মধ্যে সাইপ্রাসকে এ ব্যবস্থায় সজ্জিত করল ইসরায়েল। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত একাধিক সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, লিমাসলের বন্দর দিয়ে একটি ট্রাক ‘বারাক এমএক্স’ ব্যবস্থার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে যাচ্ছে। এ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ১৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

সাইপ্রাসের সংবাদমাধ্যম রিপোর্টার জানিয়েছে, বারাক এমএক্স ব্যবস্থার সরবরাহ এখন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরই এটি আকাশ প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) বহিঃসম্পর্ক বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়। বারাক এমএক্স তৈরি করেছে ইসরায়েলি সংস্থাটি।

আরও পড়ুনইসরায়েলের আগ্রাসন কীভাবে মোকাবিলা করবে তুরস্ক৩০ আগস্ট ২০২৫

গাল লিখেছিলেন, ‘ইসরায়েলকে গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে সমন্বয় করে এ দ্বীপের উত্তর অংশ মুক্ত করার বিকল্প পরিকল্পনা করতে হবে। এতে তুরস্কের পুনরায় সেনা পাঠানোর পথ বন্ধ হবে, উত্তর সাইপ্রাসের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হবে, গোয়েন্দা ও কমান্ড সেন্টারগুলো গুঁড়িয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত তুর্কি বাহিনী সরে যাবে। এর মাধ্যমে সাইপ্রাসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

গ্রিসের সঙ্গে একীভূত করার লক্ষ্য নিয়ে সাইপ্রাসে এক অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে সেখানে আক্রমণ চালায় তুরস্ক। সেই থেকে দ্বীপটি দুই ভাগে বিভক্ত—দক্ষিণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র ও উত্তরে তুরস্ক-সমর্থিত উত্তর সাইপ্রাস, যা শুধু আঙ্কারার স্বীকৃত।

এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়।

এখন পর্যন্ত আঙ্কারা নতুন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বারাক এমএক্সে রয়েছে উন্নত নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা। এর থ্রিডি রাডার সর্বোচ্চ ৪৬০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত কার্যকর, যা দক্ষিণ তুরস্কের একটি বড় অংশের আকাশসীমা আয়ত্তে আনতে পারে।

আরও পড়ুনইসরায়েল ও তুরস্ক কখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে?২৪ জানুয়ারি ২০২৫

১৯৯৭ সালে দক্ষিণ সাইপ্রাস রাশিয়ার তৈরি দুটি এস–৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার চেষ্টা করলে তুরস্কের সঙ্গে তার যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়। সে সময় আঙ্কারা পুরোদমে সামরিক জবাব দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে সে সংকট মেটে গ্রিস ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিজেদের ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে ও সাইপ্রাস বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে শুরু করলে।

এ ব্যবস্থা এস-৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস-৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।আরদা মেভলুতোগলু, তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক

তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরদা মেভলুতোগলু বলেন, এই ব্যবস্থা এস–৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস–৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।

ইসরায়েলের আশদোদে আইএআই বারাক এমএক্স বিমান প্রতিরক্ষা লঞ্চার। ১২ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে মুখ থুবড়ে পড়েছে ২৪ কোটি টাকার পানি প্রকল্প
  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে