যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Published: 29th, May 2025 GMT
ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কিছু পরিবর্তন চাপিয়ে দিতে চাইছে। সে কারণে প্রশাসন বিশ্বজুড়ে নতুন বিদেশি শিক্ষার্থীদের মার্কিন ভিসা দেওয়া আপাতত বন্ধ রেখেছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এতে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিয়ের ওপর নির্ভরশীল, শুধু সেগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না; বরং এটি স্থানীয় ও অঙ্গরাজ্যের অর্থনীতিতেও বাজে প্রভাব ফেলবে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষকদের অলাভজনক সংগঠন এনএএফএসএ-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১১ লাখের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছেন। এ সময় তাঁরা দেশটির অর্থনীতিতে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার যোগ করেছেন। এর মধ্যে আলাস্কার অর্থনীতিতে ১ কোটি ডলার থেকে শুরু করে ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে ৬০০ কোটি ডলারের বেশি এনে দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি ৩ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করেছেন।
যেসব অঙ্গরাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বেশি, সেসব অঙ্গরাজ্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক অবদান থেকে বিশেষভাবে সুবিধা পায়।লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক নিকোলাস বার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা শুধু টিউশন ফি-ই পরিশোধ করেন না, বাড়ি ভাড়ার অর্থ দেন, খাওয়াদাওয়া করতে রেস্তোরাঁয় যান ও ভ্রমণ করেন।’
যেসব অঙ্গরাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বেশি, সেসব অঙ্গরাজ্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক অবদান থেকে বিশেষভাবে সুবিধা পায়।
এনএএফএসএ–এর তথ্য অনুযায়ী, গত শিক্ষাবর্ষে (২০২৩-২৪) টেক্সাসের ২৫০টির বেশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রায় ৯০ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী স্থানীয় অর্থনীতিতে ২৫০ কোটি ডলার অবদান রেখেছেন।
অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়তো কোর্সের সংখ্যা বা আর্থিক সহায়তা কমিয়ে দিতে বাধ্য হবে।কনস্টান্টিন ইয়ানেলিস, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপকম্যাসাচুসেটসে অধ্যয়নরত ৮২ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী আনুমানিক ৩৯০ কোটি ডলার অবদান রেখেছেন। সবচেয়ে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী থাকা ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজার শিক্ষার্থী ৬৪০ কোটি ডলার যোগ করেছেন।
নিকোলাস বার বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক চাহিদা কর্মসংস্থান তৈরি করে–চাই তা স্থানীয় পানশালা ও দোকানে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ হোক বা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি শিক্ষার্থী সামলাতে অতিরিক্ত কর্মী দরকার হোক।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক কনস্টান্টিন ইয়ানেলিস বলেন, শিক্ষার্থী ভিসা স্থগিত করা ‘আবাসন খাত থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ, এমনকি যেকোনো ভোক্তাভিত্তিক ব্যবসা—সবকিছুতে প্রভাব ফেলতে পারে।’
কনস্টান্টিন ইয়ানেলিস আরও বলেন, ‘স্থানীয় আবাসন খাত শিক্ষার্থীদের ভাড়ার ওপর নির্ভর করে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেলে আবাসন খাতে বড় প্রভাব পড়বে। স্থানীয় অনেক ব্যবসা, সিনেমা হল, পানশালার চাহিদা কমে যাবে।’
এই অধ্যাপক বলেন, বেশি স্থানীয় শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক অবদানের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না। কারণ, বিদেশি শিক্ষার্থীদের সাধারণত মার্কিন শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হয়। স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ টিউশন ও বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সহায়তা পাওয়ার সুযোগ থাকে।
আরও পড়ুনচীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র৩ ঘণ্টা আগেকনস্টান্টিন ইয়ানেলিস পূর্বাভাস দিয়েছেন যে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়তো কোর্স সংখ্যা বা আর্থিক সহায়তা কমিয়ে দিতে বাধ্য হবে।
বিদেশি শিক্ষার্থীসংখ্যা কমে যাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সহজে পরিমাপ করা যায় না বলে উল্লেখ করেছেন কনস্টান্টিন ইয়ানেলিস। তিনি ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছের একটি এলাকায় বেড়ে উঠেছেন। বড় হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থী শাহিদ খানের সাফল্যের গল্প শুনে। তিনি (শাহেদ খান) একজন ব্যবসায়ী ও মার্কিন ফুটবল দল জ্যাকসনভিল জাগুয়ার্সের মালিক।
পাকিস্তান থেকে বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন শাহিদ খান। এরপর ‘বাম্পারওয়ার্কস’ নামের একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পরে ফ্লেক্স-এন-গেট নামের একটি অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করেন। ইয়ানেলিস বলেন, শাহিদ ওই এলাকায় নিজের ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। ফলে সেখানে স্থানীয় লোকজনের জন্য বহু চাকরি ও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ইয়ানেলিস আরও বলেন, ‘আমি দীর্ঘমেয়াদি পরিণাম নিয়ে চিন্তিত। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক উদ্যোক্তাই বিদেশি। তাঁদের অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।’
আরও পড়ুনবিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসার আবেদন কেন স্থগিত করল ট্রাম্প প্রশাসন১৬ ঘণ্টা আগেযদিও নতুন বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসাপ্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে, তবে তা সাময়িক। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থী ভিসা আবেদনকারীদের সামাজিকমাধ্যম অ্যাকাউন্ট আরও জোরালভাবে যাচাইয়ের নির্দেশনা দেওয়ার কথা ভাবছে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক পদক্ষেপ নিয়েই ইতিমধ্যে আদালতে আপত্তি উঠেছে, যেমন একজন ফেডারেল বিচারক হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে আটকে দিয়েছেন। তবে অধ্যাপক কনস্টান্টিনের মতে, যা ক্ষতি হওয়ার তা এরই মধ্যে হয়ে গেছে।
আরও পড়ুনছেলে ব্যারনকে ভর্তি করায়নি বলেই কি হার্ভার্ডের ওপর এমন ক্ষিপ্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প১৮ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবদ ন র কর ছ ন র ওপর ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।