আসন্ন ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশ উপলক্ষে টানা ১৭ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)।

আগামীকাল শুক্রবার (৩০ মে) থেকে শুরু হয়ে এ ছুটি চলবে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত। তবে এ ছুটি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ৫ মে থেকে ১৩ মে নয়দিন বন্ধ থাকবে।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আকতার হোসেন মজুমদার ছুটির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

আরো পড়ুন:

হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান

সড়ক দুর্ঘটনায় যবিপ্রবি শিক্ষার্থী নিহত

তিনি বলেন, “ঈদ ও গরমের ছুটি একসঙ্গে ১৭ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম আগামী ১৬ জুন থেকে পুনরায় শুরু হবে। হলগুলো ১৪ জুন, অফিস ১৫ জুন এবং ১৬ জুন থেকে ক্লাস শুরু হবে।”

এদিকে, ছুটিতে স্বায়ত্ত্বশাসিত অন্য তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খোলা থাকলেও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে রাবি প্রশাসন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, আগামী সোমবার (৫ জুন) থেকে মঙ্গলবার (১৩ জুন) পর্যন্ত আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকবে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য এই ছুটিতে বাড়ি ফেরা সবসময় সম্ভব হয় না। বিশেষ করে যারা চাকরিসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বা খণ্ডকালিন চাকরি করেন, তাদের জন্য হল বন্ধ থাকা বেশ ভোগান্তির কারণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেইসবুক গ্ৰুপগুলোর এক জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৭৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৭ শতাংশই ঈদের ছুটিতে হল বন্ধ রাখার বিপক্ষে।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, “গত ঈদে রাবির হল খোলা রাখা নিয়ে এত আলাপ ওঠালাম, যারা হলে থাকবে তাদের তালিকা করলাম, খোলা রাখার হাজারটা যৌক্তিকতা দেখালাম- প্রশাসন সেসবের তোয়াক্কাই করেনি। প্রশাসনের এই আচরণগুলোকে ফ্যাসিজম বললে কাল আবার আমাদের নামে তদন্ত কমিটি গঠন হবে। প্রশাসন আর কিছুর রোডম্যাপ দিক আর না দিক, তারা পূর্ণাঙ্গ ফ্যাসিস্ট হয়ে যাওয়ার রোডম্যাপ দিয়ে দিচ্ছে। এদের মাথায় এখন নিয়োগ ছাড়া আর কিছুই কাজ করছে না।”

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঈদুল ফিতরের আগে হল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়। তখন কিছু শিক্ষার্থী প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিলে প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার মহোদয়ের সঙ্গে ধস্তাধস্তির মতো এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।”

তিনি আরো বলেন, “মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ উদযাপন করলেও অন্যান্য সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা, এমনকি মুসলিম সম্প্রদায়েরও কিছু শিক্ষার্থী চাকরির প্রস্তুতি ও অন্যান্য কারণে হলে অবস্থান করতে চায়। হল খোলা রাখার এমন অনেক প্রাসঙ্গিক কারণ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে আহ্বান থাকবে-আপনারা বিষয়টি পুনর্বিবেচনায় নিয়ে ছুটির দিনগুলোতে হল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে প্রত্যাশা করছি।” 

শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, “জীবনযুদ্ধে একজন শিক্ষার্থী যখন খুব খারাপ সময় মোকাবিলা করে, তখনই মূলত তিনি পরিবার, আত্মীয় স্বজন ব্যতিরেকে একাকী ঈদ করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময়টা তাদের জন্য কতটুকু উপভোগ্য করা যায়- সে বিষয়ে হল প্রশাসনের পেরেশানি থাকা দরকার ছিল। কিন্তু উল্টা মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও কেড়ে নিচ্ছে। এটা শুধু একজন শিক্ষার্থীর অধিকার ক্ষুণ্নই নয়, বরং অমানবিক আচরণ। আমরা হল প্রশাসনকে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানাই।”

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.

সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী ঈদের ছুটিতে আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকবে। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যারা একান্তই থাকতে চায়, তাদের জন্য ব্যবস্থা থাকবে। এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বন ধ থ ক দ র জন য ল বন ধ

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির