ভ্যাট দিগুণ হচ্ছে, দাম বাড়বে ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের
Published: 31st, May 2025 GMT
আসন্ন ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ওয়ান টাইম বা একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) দ্বিগুণ হতে যাচ্ছে। এতে চা, কফি থেকে শুরু করে প্লেট ও বাটি ইত্যাদি পণ্যের ওপর ভ্যাট বেড়ে দাঁড়াবে ১৫ শতাংশ। ফলে এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। তবে এসব পণ্যের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপকরণ থেকে তৈরি পণ্যের ওপর কোনো ভ্যাট থাকবে না। দেশে পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে নতুন বাজেটে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে।
ভ্যাট মওকুফ পেতে যাওয়া পরিবেশবান্ধব বিকল্প পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে কাগজ, গাছের উপকরণ, পোড়ামাটির প্লেট ও পচনশীল উপাদানে তৈরি গ্লাস, প্লেট ও বাটি ইত্যাদি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, পরিবেশবান্ধব শিল্পোদ্যোগের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্যই এই ভ্যাট ছাড়ের চিন্তা করা হয়েছে।
দেশে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত ছোট–বড় সব ধরনের দোকানে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের ব্যবহার মোটামুটি বেড়েছে। চা–কফির দোকান থেকে শুরু করে রাস্তা–ফুটপাতে ঝালমুড়ি–ফুচকাও এখন ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের প্যাকেট বা ঠোঙায় করে বিক্রি করা হয়।
পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, একই কাজে ব্যবহার হয় এমন ধরনের ওয়ান টাইম বা একবার ব্যবহারের প্লাস্টিক পণ্য ও কাগজের পণ্যের দামে পার্থক্য খুব কাছাকাছি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে প্লাস্টিকের চা–কফির ছোটো কাপ প্রতি ১০০টি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। একই ধরনের প্রতি ১০০টি কাগজের কাপ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। যদিও প্লাস্টিকের প্লেটের দাম কাগজের প্লেটের তুলনায় কিছুটা কম। ১০ ইঞ্চি মাপের কাগজের প্লেট ১০০টি বিক্রি হয় ৬০০ টাকা। একই মাপের প্লাস্টিকের ১০০টি প্লেট মানভেদে ২৫০, ৩০০, ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে প্লাস্টিকের কিছু প্লেট অবশ্য ৫০০ টাকায়ও বিক্রি হয়।
কারওয়ান বাজারের সুন্দরবন প্যাকেজিং স্টোরের শামীম বলেন, প্লাস্টিকের তুলনায় কাগজের কাপ দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। তাই প্লাস্টিক পণ্যে ভ্যাট বাড়ালেও সমস্যা নেই।
একই বাজারের মদিনা প্যাকেজিংয়ের রিপন জানান, কাগজের কাপ বেশি বিক্রি হলেও প্লেট বেশি চলে প্লাস্টিকের। কারণ, কাগজের প্রতিটি প্লেটের দাম পড়ে ৬ টাকা। আর প্লাস্টিকের প্রতিটি প্লেটের দাম পড়ে আড়াই–তিন টাকা। তাই কাগজে ভ্যাট কমলে প্লেটের দাম কমতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও আজকাল প্লাস্টিকের এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তবে সে ক্ষেত্রে মূল্যের সঙ্গে ৫০ থেকে ১০০ টাকা ডেলিভারি চার্জ যুক্ত হয়।
এদিকে ওয়ান টাইমের পাশাপাশি অন্যান্য প্লাস্টিক পণ্যের ক্ষেত্রেও বাড়তি ভ্যাট যুক্ত হতে পারে। এতে এ শিল্পের ওপর চাপ বাড়বে বলে মনে করছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি। সংগঠনটির সভাপতি শামীম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, প্লাস্টিকের পণ্য ছোট ছোট দোকান বা ফেরিওলাদের মাধ্যমে বেশি বিক্রি হয়। ফলে এসব অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে ভ্যাট আদায় সেভাবে বাড়বে না; বরং শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে প্লাস্টিক পণ্যের বার্ষিক বিক্রি আনুমানিক ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো। এ খাতে বর্তমানে প্রায় ছয় হাজার উদ্যোক্তা আছেন। তাদের বেশির ভাগই ক্ষুদ্র ও মাঝারি। এ শিল্পে সব মিলিয়ে কাজ করছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ সন্দেহে তরুণ গ্রেপ্তার, বোমা তৈরির উপকরণ জব্দ
শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার বিশাকুড়ি এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে পুলিশ এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে। পরে ওই তরুণের বাসা থেকে বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত শনিবার সন্ধ্যায় আফতাব উদ্দিন ওরফে আবির (১৯) নামের ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সোমবার তিনি শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পুলিশ জানায়, আফতাব উদ্দিনের জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা রয়েছে ও নাশকতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার সন্ধ্যায় তাকে বাড়ির সামনের সড়ক থেকে আটক করা হয়। এরপর ঢাকা থেকে রাতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল ডামুড্যায় আসে। তারা আফতাব উদ্দিনের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। ওই বাড়ি থেকে বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়।
পরের দিন রোববার ডামুড্যা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন বাদী হয়ে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আফতাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। আদালতের বিচারকের কাছে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর তাঁকে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ওই তরুণ অনলাইন মাধ্যমে যুক্ত থেকে জঙ্গিবাদে স্বেচ্ছায় উদ্বুদ্ধ (সেলফ মোটিভেটেড) হওয়ার কথা পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সে কিছু একটা করবে, এমন চেষ্টা করছিল। তার আগেই আমরা তাকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। তবে আইএসের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে তার দিকে (আইএস) সে উদ্বুদ্ধ হয়েছে, এমন বলেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’
ডামুড্যা থানা সূত্র জানায়, ডামুড্যা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিশাকুড়ি এলাকার বাসিন্দা আফতাব উদ্দিন। তিনি ডামুড্যা উপজেলা সদরের পূর্ব ডামুড্যা সরকারি কলেজ থেকে চলতি এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তাঁর বাবা আবদুল মালেক হাওলাদার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। কয়েক বছর আগে মারা গেছেন।
এ বিষয়ে জানতে আফতাব উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আফতাব উদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। পরে তাঁর বাড়ি তল্লাশি করলে বোমা তৈরির উপকরণ পাওয়া যায়। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি কী বলেছেন, তা তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে বলা যাবে না।