কারাবন্দী অধ্যাপক আনোয়ারা চার বছর আগে অবসরে যান
Published: 1st, June 2025 GMT
চার দিন আগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম অসুস্থ। তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। হাড়ক্ষয়ের কারণে হাঁটাচলা করতে সমস্যা হয়। চার বছর আগে অবসর নেওয়ার পর তিনি রাজধানীর কলাবাগানের বাসায় অবস্থান করছেন। তিনি দলীয় কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা পেশাজীবী কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নন। আদালতের কাছে এসব দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম।
অবশ্য ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গত বৃহস্পতিবার তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
অধ্যাপক আনোয়ারার বিষয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তি যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৬ বছরের নিচে) হয় এবং কোনো নারী হন কিংবা অসুস্থ হন, সে ক্ষেত্রে আদালত ওই ব্যক্তির জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন। যেহেতু আনোয়ারা বেগম অসুস্থ এবং বয়স্ক। তাঁর জামিনের বিষয়টি আদালত বিবেচনায় নিতে পারেন।
নাবিলা মাহজাবিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মায়ের বয়স ৬৯ বছর, খুবই অসুস্থ। হাড়ক্ষয়ের কারণে তিনি ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন। চার বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মাস তিনেক আগে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হন না।২০২১ সাল থেকে অবসরে
অধ্যাপক আনোয়ারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২১ সালে অবসরে যান। একই বছর তাঁর স্বামী সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুর রহমান মারা যান। এর পর থেকে তিনি কলাবাগানের বাসায় অবস্থান করছেন। তাঁর মেয়ে নাবিলা মাহজাবিন ও ছোট ছেলে জানিয়েছেন, অবসরের পর থেকে তাঁদের মা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা পেশাজীবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নেই।
নাবিলা মাহজাবিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মায়ের বয়স ৬৯ বছর, খুবই অসুস্থ। হাড়ক্ষয়ের কারণে তিনি ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন। চার বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মাস তিনেক আগে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হন না।
নাবিলা মাহজাবিন তাঁর স্বামীর সঙ্গে পটুয়াখালীতে বসবাস করেন। আনোয়ারার ছোট ছেলে মায়ের সঙ্গে কলাবাগানের বাসায় থাকেন। তাঁর ছোট ছেলে প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর জুলাই–আগস্টের আন্দোলনের সময় তাঁর মা বাসাতেই অবস্থান করছিলেন। চার বছরের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন। জগন্নাথের শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গেও তাঁর মা জড়িত নেই।
মামলার বাদী সুজন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও নানা অনিয়মের সঙ্গে আনোয়ারা বেগম জড়িত ছিলেন। দলীয় পরিচয়ে ছাত্রলীগের অনেক লোকজনকে তিনি চাকরি দিয়েছেন।মা আনোয়ারাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ছোট ছেলে বলেন, গত বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি একাডেমিক সভায় যোগ দিতে তাঁর মাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হন, তখন একদল যুবক তাঁর মাকে ঘিরে ধরেন। খবর পেয়ে সূত্রাপুর থানা–পুলিশ তাঁর মাকে থানায় নিয়ে যায়।
সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলামের ভাষ্য, অধ্যাপক আনোয়ারা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। মামলার তদন্ত চলমান।
সূত্রাপুর থানার পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৯ জুলাই রায়সাহেব বাজারের কাছে স্টার হোটেলের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে গুলি চালানো হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ প্ররোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ ঘটনা ঘটান। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লার চোখে গুলি লাগে। বাঁ চোখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। এ ঘটনায় সুজন মোল্লা বাদী হয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন।
মামলার বাদী সুজন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও নানা অনিয়মের সঙ্গে আনোয়ারা বেগম জড়িত ছিলেন। দলীয় পরিচয়ে ছাত্রলীগের অনেক লোকজনকে তিনি চাকরি দিয়েছেন। সুজন মোল্লা বলেন, ‘যেসব শিক্ষক আমাদের অত্যাচার করেছেন, তাঁদের মধ্যে আনোয়ারা বেগম অন্যতম।’
অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি, আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় বহুজনকে আসামি করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই পূর্বশত্রুতা, বিরোধ, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও বাণিজ্যের উদ্দেশ্য থেকে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই বলছেন, ‘ইচ্ছেমতো’ আসামি করার কারণে জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের পক্ষ থেকে ঢালাও মামলা ও গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে একাধিকবার বলা হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মামলা হওয়ার অর্থ যত্রতত্র গ্রেপ্তার নয়।
অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি, আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধ্যাপক আনোয়ারার আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি (আনোয়ারা) কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। হয়রানির জন্য তাঁকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। তবে তিনি আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা করছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক স জন ম ল ল ম হজ ব ন র পর থ ক র জন ত কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বরগুনায় বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের মামলা প্রত্যাহারের আবেদন আদালতে নাকচ
বরগুনা জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন নাকচ করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার বরগুনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান এই আদেশ দেন।
এদিকে আদালতের নথি কাটাছেঁড়ার অভিযোগে মামলার বাদী শহিদুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
এর আগে ২৩ জুলাই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য শহিদুল ইসলাম ২৩১ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। মামলার পর আদালত বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৩০ মে বরগুনা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল চলাকালে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, ছেনি, চায়নিজ কুড়ালসহ কার্যালয় ঘিরে ফেলেন। এরপর তাঁরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও ত্রাস সৃষ্টি করেন। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মারধর ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
গত রোববার বরগুনা জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এক বৈঠকে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ফোরামের সদস্যসচিব আবদুল ওয়াসি মতিন বলেন, ‘তিনি (শহিদুল ইসলাম) আমাদের সদস্য। তিনি মামলা করেছেন, তা আমরা জানতাম না। তাই তাঁকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
একই দিনে শহিদুল ইসলামের দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি জানি না কার নামে মামলা হয়েছে, নেতারাই আমাকে দিয়ে মামলা করিয়েছেন।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা প্রথম আলোকে বলেন, এটি দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। যিনি মামলা করেছেন, তিনি ব্যক্তিস্বার্থে করেছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
আদালতের পেশকার নাদিরা পারভীন বলেন, মামলার আদেশ হওয়ার পর বাদী আদালতের নথিতে কাটাছেঁড়া করেছেন। তাই আদালত তাঁকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
মামলা প্রসঙ্গে শহিদুল ইসলাম বলেন, কিছু আসামির নাম-ঠিকানা ভুল ছিল, সে কারণে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলাম।
উল্লেখ্য, একই ঘটনায় বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত এস এম নজরুল ইসলামের ছেলে এস এম নইমুল ইসলাম ৩০ এপ্রিল একটি মামলা করেন। ওই মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের পাশাপাশি বিস্ফোরক আইনের ধারা সংযোজন করা হয়।