Samakal:
2025-07-31@21:55:50 GMT

সাইকেলে নারীর আত্মবিশ্বাস

Published: 1st, June 2025 GMT

সাইকেলে নারীর আত্মবিশ্বাস

রাজধানীর সড়কে বেশির ভাগ মানুষের প্রধান ভরসা গণপরিবহন; কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পাশাপাশি নারীরা প্রায়ই গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হন। এই বাস্তবতায় নিজের স্বচ্ছন্দ ও সাশ্রয়ী পরিবহনের কথা ভেবেই সাইকেল চালানো শিখেছিলেন মার্জিয়া নীলা। তখন তিনি মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাঁর সাইকেলযাত্রার সূচনা ২০২১ সালে, লালমাটিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তানহার হাত ধরে। তানহা সে সময় ঢাকা উদ্যান এলাকায় নারীদের সাইকেল প্রশিক্ষণ দিতেন।
মার্জিয়া জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসন্ধান করে পরিচিত এক আপুর কাছ থেকে ধার করা সাইকেলেই তাঁর শেখা শুরু। পরে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করে নিজে একটি সাইকেল কেনেন, যা এখনও তাঁর বিশ্বস্ত সঙ্গী। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রতিদিন সাইকেলে করেই ক্যাম্পাসে যান।
তাঁর ভাষায়, ‘সাইকেল আমাকে জ্যাম থেকে মুক্তি দিয়েছে, গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। এখন আমি নিজের ইচ্ছামতো চলাফেরা করতে পারি– সময় বাঁচে, শরীর ভালো থাকে, পরিবেশও সুরক্ষিত থাকে।’
মার্জিয়া আরও জানান, ‘আমার কাছ থেকে কয়েক বান্ধবী ও সিনিয়র আপু সাইকেল চালানো শিখেছেন। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় আমার বাসা। ওখানকার কয়েক কর্মজীবী নারীও আমার কাছে শিখেছেন। তবে সময়ের অভাবে নিয়মিত শেখাতে পারি না, ছুটির দিনেই সুযোগ হয়। আমার কয়েক পরিচিত আপুও এ কাজে যুক্ত আছেন।’
শুক্রবার সকালে চন্দ্রিমা উদ্যানে কয়েক নারীকে সাইকেল চালানো শেখান লিজা আক্তার। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। প্রতি শুক্রবার নারীদের সাইকেল চালানো শেখানোই তাঁর স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ। লিজা বলেন, ‘শুধু যানজট এড়ানো বা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো নয়– সাইক্লিং শরীরকে ফিট রাখে আর আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এটি নারীর জন্য এক নতুন অনুপ্রেরণার জায়গা।’
গত কয়েক বছরে সাইকেলের জনপ্রিয়তা বাড়লেও ঢাকার রাস্তায় তরুণীদের সাইকেল চালানোর দৃশ্য এখনও খুব কম। এর পেছনে পারিবারিক, ধর্মীয় ও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি নারীদের মানসিক প্রস্তুতির অভাবও দায়ী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
লিজা বলেন, ‘সামাজিক বাধা এখনও প্রবলভাবে টের পাই। আমার পরিবার সেভাবে বাধা না দিলেও কেউ উৎসাহও দেয় না। নিরাপত্তার ভয়ে অনেকেই ভয় পান। রাস্তায় বের হলেই কটু মন্তব্য শুনতে হয়– কখনও পাশের বাইক থেকে, কখনও রিকশাওয়ালার মুখে। শুরুতে খারাপ লাগত, এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সমাজ এখনও নারীদের সাইকেলে দেখলে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। বেশির ভাগ সময় কেউ প্রতিবাদ করে না। গত এক বছর ধরে মাঝে মাঝে ইতিবাচক মন্তব্যও শুনি।’
একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে লিজা বলেন, ‘এক দিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় এক চাচা ডাক দিলেন। কাছে গিয়ে শুনি, তিনি অবসরপ্রাপ্ত। সকালে হাঁটতে বের হন। প্রতিদিন আমাকে সাইকেল চালিয়ে যেতে দেখেন, ভালো লাগে– এ কথা বলার জন্যই ডাক দিয়েছিলেন। আমাকে দোয়া করলেন।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর বহন

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও