রাজধানীর সড়কে বেশির ভাগ মানুষের প্রধান ভরসা গণপরিবহন; কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পাশাপাশি নারীরা প্রায়ই গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হন। এই বাস্তবতায় নিজের স্বচ্ছন্দ ও সাশ্রয়ী পরিবহনের কথা ভেবেই সাইকেল চালানো শিখেছিলেন মার্জিয়া নীলা। তখন তিনি মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাঁর সাইকেলযাত্রার সূচনা ২০২১ সালে, লালমাটিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তানহার হাত ধরে। তানহা সে সময় ঢাকা উদ্যান এলাকায় নারীদের সাইকেল প্রশিক্ষণ দিতেন।
মার্জিয়া জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসন্ধান করে পরিচিত এক আপুর কাছ থেকে ধার করা সাইকেলেই তাঁর শেখা শুরু। পরে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করে নিজে একটি সাইকেল কেনেন, যা এখনও তাঁর বিশ্বস্ত সঙ্গী। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রতিদিন সাইকেলে করেই ক্যাম্পাসে যান।
তাঁর ভাষায়, ‘সাইকেল আমাকে জ্যাম থেকে মুক্তি দিয়েছে, গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। এখন আমি নিজের ইচ্ছামতো চলাফেরা করতে পারি– সময় বাঁচে, শরীর ভালো থাকে, পরিবেশও সুরক্ষিত থাকে।’
মার্জিয়া আরও জানান, ‘আমার কাছ থেকে কয়েক বান্ধবী ও সিনিয়র আপু সাইকেল চালানো শিখেছেন। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় আমার বাসা। ওখানকার কয়েক কর্মজীবী নারীও আমার কাছে শিখেছেন। তবে সময়ের অভাবে নিয়মিত শেখাতে পারি না, ছুটির দিনেই সুযোগ হয়। আমার কয়েক পরিচিত আপুও এ কাজে যুক্ত আছেন।’
শুক্রবার সকালে চন্দ্রিমা উদ্যানে কয়েক নারীকে সাইকেল চালানো শেখান লিজা আক্তার। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। প্রতি শুক্রবার নারীদের সাইকেল চালানো শেখানোই তাঁর স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ। লিজা বলেন, ‘শুধু যানজট এড়ানো বা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো নয়– সাইক্লিং শরীরকে ফিট রাখে আর আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এটি নারীর জন্য এক নতুন অনুপ্রেরণার জায়গা।’
গত কয়েক বছরে সাইকেলের জনপ্রিয়তা বাড়লেও ঢাকার রাস্তায় তরুণীদের সাইকেল চালানোর দৃশ্য এখনও খুব কম। এর পেছনে পারিবারিক, ধর্মীয় ও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি নারীদের মানসিক প্রস্তুতির অভাবও দায়ী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
লিজা বলেন, ‘সামাজিক বাধা এখনও প্রবলভাবে টের পাই। আমার পরিবার সেভাবে বাধা না দিলেও কেউ উৎসাহও দেয় না। নিরাপত্তার ভয়ে অনেকেই ভয় পান। রাস্তায় বের হলেই কটু মন্তব্য শুনতে হয়– কখনও পাশের বাইক থেকে, কখনও রিকশাওয়ালার মুখে। শুরুতে খারাপ লাগত, এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সমাজ এখনও নারীদের সাইকেলে দেখলে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। বেশির ভাগ সময় কেউ প্রতিবাদ করে না। গত এক বছর ধরে মাঝে মাঝে ইতিবাচক মন্তব্যও শুনি।’
একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে লিজা বলেন, ‘এক দিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় এক চাচা ডাক দিলেন। কাছে গিয়ে শুনি, তিনি অবসরপ্রাপ্ত। সকালে হাঁটতে বের হন। প্রতিদিন আমাকে সাইকেল চালিয়ে যেতে দেখেন, ভালো লাগে– এ কথা বলার জন্যই ডাক দিয়েছিলেন। আমাকে দোয়া করলেন।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর বহন
এছাড়াও পড়ুন:
কালীগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ, নিহত ১
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের জামাল ইউনিয়নের নাকোবাড়িয়া ও তালিয়ান গ্রামে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে মোহাব্বত আলী (৬০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পাঁচজন। রোববার ভোর থেকে বেলা ১২টা পর্ষন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহত মোহাব্বত আলী বিএনপির কর্মী এবং নাকোবাড়িয়া গ্রামের হবিবার রহমানের ছেলে। সংঘর্ষে আহতদের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে ইউনুস আলী নামের একজনকে মুমূর্ষ অবস্থায় ঢাকাতে পাঠানো হয়েছে। খবর পেয়ে থানার পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে অবস্থান করলেও পরিস্থিতি এখনও শান্ত হয়নি। সংঘর্ষে আহত অন্যরা হলেন- নাকোবাড়িয়া গ্রামের ইউনুস আলী, রেজাউল ইসলাম, তোফাজ্জেল হোসেন, ছোট তালিয়ান গ্রামের রেফাজুল ইসলাম। আহতরা সবাই বিএনপি কর্মী বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নাকোবাড়িয়া ও তালিয়ান গ্রামে বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সর্বশেষ একটি পক্ষ শনিবার সকালে লাঠিসোঁটা অস্ত্র নিয়ে তালিয়ান ও নাকোবাড়িয়া এলাকায় মহড়া দেয়, যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এর জের ধরে রোববার ভোর থেকে এক পক্ষ অপর পক্ষের ওপর হামলা চালায়। এরপর দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ালে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এ সংঘর্ষে আহত পাঁচজনের মধ্যে মুমূর্ষ অবস্থায় মোহাব্বত আলীকে ঢাকাতে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। তাঁর মরদেহ কালীগঞ্জে ফেরত আনা হচ্ছে।
এদিকে আহতদের মধ্যে ইউনুস আলী নামে আরেকজনকে মুমুর্ষ অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অন্যরা কালীগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ টিম এলাকায় টহল দিচ্ছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও হামিদুল ইসলাম হামিদের সমর্থক নেতাকর্মীরা দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে ওই সংঘর্ষে জড়ায়।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ টিম এখনও ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে রাখা আছে। তারা এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।