কালীগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ, নিহত ১
Published: 1st, June 2025 GMT
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের জামাল ইউনিয়নের নাকোবাড়িয়া ও তালিয়ান গ্রামে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে মোহাব্বত আলী (৬০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পাঁচজন। রোববার ভোর থেকে বেলা ১২টা পর্ষন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহত মোহাব্বত আলী বিএনপির কর্মী এবং নাকোবাড়িয়া গ্রামের হবিবার রহমানের ছেলে। সংঘর্ষে আহতদের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে ইউনুস আলী নামের একজনকে মুমূর্ষ অবস্থায় ঢাকাতে পাঠানো হয়েছে। খবর পেয়ে থানার পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে অবস্থান করলেও পরিস্থিতি এখনও শান্ত হয়নি। সংঘর্ষে আহত অন্যরা হলেন- নাকোবাড়িয়া গ্রামের ইউনুস আলী, রেজাউল ইসলাম, তোফাজ্জেল হোসেন, ছোট তালিয়ান গ্রামের রেফাজুল ইসলাম। আহতরা সবাই বিএনপি কর্মী বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নাকোবাড়িয়া ও তালিয়ান গ্রামে বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সর্বশেষ একটি পক্ষ শনিবার সকালে লাঠিসোঁটা অস্ত্র নিয়ে তালিয়ান ও নাকোবাড়িয়া এলাকায় মহড়া দেয়, যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এর জের ধরে রোববার ভোর থেকে এক পক্ষ অপর পক্ষের ওপর হামলা চালায়। এরপর দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ালে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এ সংঘর্ষে আহত পাঁচজনের মধ্যে মুমূর্ষ অবস্থায় মোহাব্বত আলীকে ঢাকাতে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। তাঁর মরদেহ কালীগঞ্জে ফেরত আনা হচ্ছে।
এদিকে আহতদের মধ্যে ইউনুস আলী নামে আরেকজনকে মুমুর্ষ অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অন্যরা কালীগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ টিম এলাকায় টহল দিচ্ছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও হামিদুল ইসলাম হামিদের সমর্থক নেতাকর্মীরা দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে ওই সংঘর্ষে জড়ায়।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ টিম এখনও ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে রাখা আছে। তারা এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ র দ ল ইসল ম স ঘর ষ এল ক য় অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।
রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।
বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।
বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।
বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।
এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।
অবরোধকারীদের দাবি
অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।