দিন কয়েক পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে বিভাগের অন্যান্য এলাকার মতো বিশ্বনাথ উপজেলাতেও বাড়তে শুরু করেছে কোরবানির পশুর বেচাকেনা। হাটের তুলনায় এবার খামার থেকে কোরবানির যোগ্য বিভিন্ন ধরনের পশু কেনার পরিমাণ বেশি হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কায় আছেন হাটের ইজারাদার এবং বিক্রেতারা।
উপজেলায় এ বছর মোট সাতটি কোরবানির পশুর হাট বসেছে। এসব হাটে কোরবানির উপযুক্ত পশুর মজুত যথেষ্টসংখ্যক থাকলেও বিক্রি সে তুলনায় বেশ কম। জানা গেছে, অধিকাংশ পশুই এবার সরাসরি খামার থেকে কিনছেন ক্রেতারা।
প্রবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলায় ঈদ করতে অনেকে দেশে আসেন। স্থানীয়দের তুলনায় দামে এবং আকারে বড় পশু কোরবানি বেশি দেন প্রবাসীরাই। তাদের অধিকাংশ হাটে যাওয়ার ঝক্কি এড়িয়ে যেতে চাইছেন। সে ক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মসহ বিভিন্ন মাধ্যমে খামারিদের কাছ থেকে পশু কিনছেন তারা। 
স্থানীয় হাটগুলোতে পর্যাপ্ত গরু, ছাগল, ভেড়া উঠলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সে তুলনায় বিক্রি একেবারে কম। হাটের চেয়ে বরং খামারে বেশি পশু বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে চড়া দামের গরু বড় খামার থেকে কেনা হচ্ছে বেশি। রোববার থেকে বুধবার পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাট এবং স্থানীয় খামার ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।
উপজেলার ৭টি পশুর হাটের মধ্যে বিশ্বনাথ পুরান বাজারের হাটটি সবচেয়ে বড়। এই হাটে বিক্রি বাড়াতে ইজারাদাররা প্রতিটি পশুর জন্য হাসিল নির্ধারণ করেছেন ৫০০ টাকা। তাতেও হাটে পশু বিক্রি বাড়ছে না।
পুরান বাজার হাটে কথা হয় আবুল লেইছ নামে এক খামারির সঙ্গে। গত বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় ৭টি গরু নিয়ে তিনি উপজেলার এ হাটে আসেন। সে সময় তিনি জানিয়েছিলেন, হাটে আসার পর দুই দিনে তাঁর একটি গরুও বিক্রি হয়নি। দু-একজন ক্রেতা গরু দেখলেও লাখের গরু হাজারের ঘরে হাঁকছেন। অথচ এক একটি গরু ন্যূনতম ১ লাখ ৩০ হাজারে বিক্রি না করলে লোকসান নিশ্চিত।
আবুল লেইছের ভাষ্যমতে, বাজারে ক্রেতা একেবারেই কম। আরও দুটি হাট ঘুরে এখানে এসেছেন তিনি। দু-একজন ক্রেতা আসেন। তারা লাখের ওপর বিক্রির চিন্তা এমন গরুর দাম ৮৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা হাঁকছেন। এই দামে বিক্রি করা হলে লোকসান হবে। তিনিসহ এই হাটে আসা ৮ শতাধিক বিক্রেতার বেশির ভাগই হতাশ।
রোববার আলিম জানান, হাটে বিক্রি না থাকলেও তাঁর খামারে ৭৫টি গরু আছে। এর মধ্যে ১০টি বড় গরু ৩ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা দামের। বাকি ৬৫টি ছোট ও মাঝারি। হাটে ১৫টি গরুর মধ্যে একটিও বিক্রি হয়নি তাঁর। অথচ খামার থেকে ৩০টির মতো গরু বিক্রি করেছেন তিনি।
পীরের বাজারে উপজেলার টুকেরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ও এনায়েত উল্লাহ এগ্রো ফার্মের মালিক আমির আলী বলেন, তাঁর খামারে দেশি-বিদেশি ৪৫টি গরু আছে। এরই মধ্যে সেখান থেকে ২৫টি ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রি করেছেন। বাকিগুলোর মধ্যে ১৫টি বড় এবং ৫টি মাঝারি রয়েছে। হাটের চেয়ে খামারগুলোতে গরু বিক্রি হচ্ছে বেশি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বনাথে স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে ৩টি আর অস্থায়ী ৪টি। স্থায়ী হাটের মধ্যে রয়েছে বিশ্বনাথ পুরান বাজার, পীরের বাজার ও বৈরাগী বাজার। অস্থায়ী পশুর হাট হচ্ছে রামপাশা বাজার, মাছুখালী বাজার, সিংগেরকাছ বাজার ও মুফতির বাজার। এ বছর পুরান বাজার পশুর হাটটি ৩৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী বশির আহমদ। আজিজুর রহমান নামে অপর ব্যবসায়ী সাড়ে ৩ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন পীরের বাজার। ৩ লাখ টাকায় বৈরাগী বাজারও ইজারা দেওয়া হয়েছে। 
অপরদিকে, অস্থায়ী ৪টি পশুর হাটের মধ্যে ২৭ হাজার ৫০০ টাকায় রামপাশা বাজার, ২৩ হাজার ৫০০ টাকায় সিংগেরকাছ বাজার, ৫ হাজার ৫০০ টাকা করে মুফতির বাজার ও মাছুখালী বাজার ইজারা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তবে, ইজারাদাররা বলছেন হাট নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন। হাট-বাজারে পশু বিক্রি প্রত্যাশার তুলনায় কম হওয়ায় তাদের লোকসান হবে।
বিশ্বনাথ পুরান বাজার পশুর হাটের ইজারাদার বশির আহমদ বলেন, হাটে বিক্রি বাড়াতে যে কোনো দামের গরুর হাসিল তারা ৫০০ টাকা করেছেন। এতেও ক্রেতা আকৃষ্ট হচ্ছেন না। ফলে লোকসানের আশঙ্কা বাড়ছে। গত রোববার পর্যন্ত কোরবানির পশুর হাট থেকে মাত্র ৭০ হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছেন। এতে ৩৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকা মূলধন ওঠানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পীরের বাজারের ইজারাদার আবুল হোসেন ও আজিজুর রহমান বলেন, সাড়ে ৩ লাখ টাকায় ইজারা নিলেও আরও দেড় লাখ টাকা তাদের উপরি খরচ। সব মিলিয়ে ৫ লাখ টাকার ওপরে আয়ের লক্ষ্য থাকলেও সে আশা শেষ। এ পর্যন্ত মাত্র ১০ হাজার টাকা পশু বিক্রি থেকে এসেছে।
বিশ্বনাথ উপজেলার ৪৩৮টি গ্রামের মধ্যে দেড় শতাধিক গরুর খামার ও ১৫টি ছাগলের খামার রয়েছে। এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলিয়ে পশু কেনাবেচার হাট-বাজার রয়েছে মোট ৩৯টি। 
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুস শহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, বেসরকারিভাবে ৯ হাজার হলেও সরকারি হিসাব অনুযায়ী উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৫ হাজার ৬০৫টি। এর মধ্যে উপজেলার নিবন্ধিত ৯৮টি গরুর খামার ও ৪টি ছাগলের খামারে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৫ হাজার ৮৯৪টি পশু। হাটগুলোতে আরও পশু আছে। সব মিলিয়ে চাহিদার চেয়ে পশুর মজুত অনেক বেশি। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গর হ জ র ৫০০ ট ক র ইজ র দ র ব শ বন থ উপজ ল র কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’

তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’

অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’

পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’

আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’

ঢাকা/আসাদ/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খাজা শরফুদ্দীন চিশতির মাজারে হাত দিলে পরিণাম হবে ভয়াবহ: আহলে সুন্
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
  • যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • প্রাথমিকে গানের শিক্ষক বাদ দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে
  • মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন 
  • পনেরো বছরে থেমে গেল শিশুশিল্পীর জীবন
  • পাকিস্তানে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ৫ সেনা নিহত
  • আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় কর্মসূচি দেওয়া স্ববিরোধিতা মনে করছে বিএনপি