দেশের স্বার্থবিরোধী সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে এবং ভোটাধিকারসহ নিজেদের অধিকার রক্ষায় সচেতন দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। একই সঙ্গে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার ‘দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং জন অধিকার রক্ষায় করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক এক সভায় এ আহ্বান জানানো হয় বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সভাটি অনলাইনে হয়।

সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো অনির্বাচিত সরকারের ওপর ভর করে তাদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নেতারা। তাঁরা দেশের স্বার্থবিরোধী সব ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। সভায় কালক্ষেপণ না করে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

নেতারা বলেন, সরকারের আন্তরিকতা থাকলে এ সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার অবশ্যই করা যাবে এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞের বিচারের কাজও দৃশ্যমান করা সম্ভব হবে।

সভায় নেতারা রাখাইনে করিডর প্রদান এবং চট্টগ্রামের নিউ মুরিং টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা বাতিলের জোরালো দাবি জানান। এই দাবিগুলো নিয়ে ২৭-২৮ জুন বাম গণতান্ত্রিক জোটের ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ সফল করার আহ্বান জানানো হয়।

সভায় ভারত থেকে ‘পুশ ইন’-এর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ বিষয়ে সরকারের কঠোর অবস্থান না নেওয়ায় সমালোচনা করা হয় এবং অবিলম্বে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়।

এ ছাড়া আইনগতভাবে মেয়র নির্বাচিত করার বিষয়ে নানা মত থাকলেও নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন ভূমিকার পর ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের শপথ অনুষ্ঠান কেন সম্পন্ন হচ্ছে না, তা নিয়ে দেশবাসী জানতে চায় বলে সভায় উল্লেখ করা হয়।

ঈদের আগে অনেক শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন ও বকেয়া পরিশোধ না করা এবং এ বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল আচরণ না করায় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। নেতারা বলেন, ১১৭টি কারখানা বন্ধ ও লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হলেও সরকার প্রকৃতপক্ষে কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না। তাঁরা উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা বৈষম্যহীনতা থাকলেও দিন দিন বৈষম্য বেড়ে চলেছে।

জোটের সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আহ ব ন জ ন ন গণত ন ত র ক র আহ ব ন সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

আরো পড়ুন:

নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা

সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।

অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • ১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা