শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা অধিকাংশই প্রত্যাহার করা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে অংশ নিয়ে এ কথা জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সদর দপ্তর জেনেভায় ১১৩তম আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলন শুরু হয় ২ জুন। চলবে ১৩ জুন পর্যন্ত। ১৮৭টি দেশের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। গতকাল মঙ্গলবার সম্মেলনের প্লিনারি অধিবেশনে বক্তব্য দেন এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তিনি ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের রাজনৈতিক হয়রানিমূলক অধিকাংশ মামলা প্রত্যাহারের কথা জানান। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আজ বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

শ্রম উপদেষ্টার এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার ফেডারেশনের (বিজিআইডব্লিউএফ) সভাপতি কল্পনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় বড় সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের যে ত্বরিত উদ্যোগ রয়েছে, সে তুলনায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহারে রয়েছে শম্বুক গতি। বিষয়টি আমাদের আহত করে।’

শ্রম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শ্রম অধিকার সুরক্ষা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং শ্রম আইন বাস্তবায়নে আইএলওর কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে চায়।

বিজ্ঞপ্তিতে শ্রমিক নেতাদের মামলার ও প্রত্যাহারের সংখ্যা উল্লেখ না থাকায় প্রথম আলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি আজ বুধবার জানান, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক ৪৫টি মামলার মধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে ৪৩টি।

শ্রম সচিবের তথ্যের কথা উল্লেখ করে জানতে চাইলে শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রম সম্মেলনে যাওয়ার আগে তড়িঘড়ি করে কিছু মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে শুনেছি। কিছু হয়েছে বিদেশি ক্রেতাদের (বায়ার) চাপে, কিছু প্রত্যাহার করেছে মালিকপক্ষ। তবে আমার নামে এখনো হয়রানিমূলক মামলা আছে। প্রত্যাহার হলে তো জানতাম।’

বাবুল আখতার আরও বলেন, গাজীপুরের প্রয়াত মেয়র এম এ মান্নানের সঙ্গে কিছু শ্রমিককে আসামি করা হয়েছিল। শ্রমিকেরা এখনো হাজিরা দেন।

সম্মেলনে কারা অংশ নিলেন

শ্রম উপদেষ্টার নেতৃত্বে জেনেভায় অনুষ্ঠিত এবারের শ্রম সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে ২৮ জন অংশ নিয়েছেন।

শ্রম উপদেষ্টার পাশাপাশি মন্ত্রণালয় থেকে অংশ নেন শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (শিল্প পুলিশ) গাজী জসিম উদ্দিন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দুই যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান সিকদার ও মোহাম্মদ হোসেন সরকার, শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো.

জাহিদুল ইসলাম, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক এস এম এনামুল হক এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান।

এ ছাড়া অংশ নিয়েছেন জেনেভায় স্থায়ী মিশনের রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলাম এবং দুই কাউন্সিলর ফজলে লোহানি ও মো. কামরুজ্জামান।

সম্মেলনে বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) পক্ষ থেকে যোগ দিয়েছেন ৯ জন। তাঁরা হলেন বিইএফ সভাপতি আরদাশির কবির, সহসভাপতি তাহমিদ আহমেদ, মহাসচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ, সদস্য এ এন এম সাইফ উদ্দিন, আবু দাউদ খান, হামজা সাকিফ তাবানী, ফাইজা মেহমুদ, সৈয়দ তারেক মো. আলী ও বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান। আরও অংশ নেন ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক কমিটির (টিসিসি) সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ও অন্য সাত সদস্য। তাঁরা হলেন শাকিল আখতার চৌধুরী, মো. রাজেকুজ্জামান, আতিকুর রহমান, মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, তাসলিমা আখতার, কোহিনূর মাহমুদ ও শামিম আরা।

টিসিসি ও বিইএফ থেকে দুজন করে চারজনের খরচ সরকার বহন করলেও বাকিরা গেছেন নিজেদের খরচে প্রজ্ঞাপনে এ কথা উল্লেখ রয়েছে।

তিন কনভেনশন অনুস্বাক্ষর হবে

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শ্রম উপদেষ্টা প্লিনারি অধিবেশনে বলেছেন, শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইএলও কনভেনশন সি১৫৫, সি১৮৭ ও সি১৯০ অনুস্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলছে। আন্তর্জাতিক শ্রম মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলছে শ্রম আইন সংশোধনের কাজ। শ্রম পরিদর্শনব্যবস্থা জোরদারে নিয়োগ দেওয়া হবে ১২২ জন নতুন শ্রম পরিদর্শক।

জেনেভায় শ্রম উপদেষ্টা বলেন, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ন্যায্য বাণিজ্য, অভিবাসনসুবিধা ও কারিগরি বৈষম্য কমানোর ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে উন্নয়ন সহযোগিতার তহবিল কমে যাওয়ায় সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আইএলওর কাছ থেকে শ্রম খাতের উন্নয়নে আরও কারিগরি সহায়তা আশা করে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ায় আইএলওর গভর্নিং বডিকে সাধুবাদ জানিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ প্রথমেই আইএলওর তিন কনভেনশন অনুস্বাক্ষরের উদ্যোগের বিষয়টিকে স্বাগত জানান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার হয়ে থাকলে ভালো। কারণ, প্রতিবছর আইএলওতে গিয়ে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ তুলে ধরা দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ আরও বলেন, ‘আশুলিয়া, টঙ্গী—এসব থানায় হাজার হাজার শ্রমিক এখনো অজ্ঞাতনামা আসামি। ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করতে যাওয়ায় তাঁদের আসামি বানানো হয়েছে। তাঁরা বাড়িতে যেতে পারেন না, চাকরিও পান না। এ বিষয়ে সরকারের মনোযোগ চাই।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল সরক র আখত র

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ব ইজতেমা মার্চে 

প্রতিবছর জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হলেও এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে তা পিছিয়ে মার্চ মাসে করা হবে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ এ তথ্য জানিয়েছেন তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ বা শুরায়ী নেজামের শীর্ষ নেতা মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারি।

আরো পড়ুন:

শেষ হলো দাওয়াতে ইসলামীর ইজতেমা

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত বছরগুলোতে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা হলেও আগামী বছর এক পর্বে হবে। মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী বা সাদপন্থিদের ইজতেমা আয়োজনের সুযোগ থাকবে না। 

মুফতি কেফায়েতুল্লাহ বলেছেন, “তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ তাবলিগি এ মেহনতকে দ্বীনি মেহনত হিসেবে বিশ্বাস করে। দ্বীনি কাজের অংশ হিসেবে বর্তমান সরকারের অনুরোধ শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করে আমরা আগামী বিশ্ব ইজতেমা মার্চে আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, এ সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে সরকারের প্রতি সহযোগিতার শামিল।”

বিশ্ব ইজতেমা সাদপন্থিরা আয়োজন করতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “সরকারের কাছে তারা লিখিত দিয়ে গতবার শেষবারের মতো ইজতেমার আয়োজন করেছিল। সেক্ষেত্রে তাদের আর ইজতেমা করার সুযোগ নেই।”

বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিনটি অনুরোধ তুলে ধরা হয়।
১. আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের আগেই ইজতেমার দিন-তারিখ ঘোষণা এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে অবহিত করা।

২. ইজতেমা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানকে অস্থায়ীভাবে কেপিআই (কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন) ঘোষণা।

৩. ইজতেমায় আসা বিদেশি অতিথিদের সময়মতো উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভিসা সহজীকরণ-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা।

ঢাকা/রায়হান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ