বাংলাদেশ শ্রম অধিকার নিশ্চিতে আরো সক্রিয় হবে: উপদেষ্টা
Published: 11th, June 2025 GMT
শ্রম অধিকার সুরক্ষা এবং শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ আরো নিবিড়ভাবে কাজ করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সদর দপ্তরে ১১৩তম আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে (প্ল্যানারি সেশন) তিনি এ মন্তব্য করেন। বুধবার (১১ জুন) জেনেভায় অনুষ্ঠিত এ অধিবেশনে বক্তৃতা প্রদানকালে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘‘শ্রম অধিকার, নিরাপদ ও শোভন কর্মপরিবেশ এবং শ্রম আইন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এসব ক্ষেত্রে আইএলওর কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ আরো নিবিড়ভাবে কাজ করতে আগ্রহী।’’
শ্রম উপদেষ্টা জানান, শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের বিরুদ্ধে অধিকাংশ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক শ্রম মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধনের কাজ চলমান রয়েছে।
আরো পড়ুন:
ঈদের পর কর্মজীবীদের ঢাকায় ফেরা শুরু
ট্যানারিতে চামড়া সংরক্ষণে ব্যস্ত শ্রমিকরা
শ্রম পরিদর্শন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে নতুন করে ১২২ জন শ্রম পরিদর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা। পাশাপাশি তিনি জানান, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইএলও কনভেনশন সি১৫৫, সি১৮৭ এবং সি১৯০ অনুস্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলছে।
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ন্যায্য বাণিজ্য, অভিবাসন সুবিধা এবং প্রযুক্তিগত বৈষম্য হ্রাসে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে উন্নয়ন সহযোগিতার তহবিল হ্রাস পাওয়ায় সরকার উদ্বিগ্ন এবং শ্রমখাতে আইএলওর আরো সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে।’’
সম্মেলনে আইএলওর গভর্নিং বডি ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ায় বাংলাদেশ সাধুবাদ জানায়। শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেন ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণের সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করা হয়।”
সম্মেলনে ১৮৭টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, বাংলাদেশ এমপ্লোয়ার্স ফেডারেশন, ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের প্রতিনিধি এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ঢাকা/এএএম/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট ন কর ম
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রমিকদের অধিকাংশ রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, আইএলওতে সরকারের দাবি
শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা অধিকাংশই প্রত্যাহার করা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে অংশ নিয়ে এ কথা জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সদর দপ্তর জেনেভায় ১১৩তম আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলন শুরু হয় ২ জুন। চলবে ১৩ জুন পর্যন্ত। ১৮৭টি দেশের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। গতকাল মঙ্গলবার সম্মেলনের প্লিনারি অধিবেশনে বক্তব্য দেন এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তিনি ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের রাজনৈতিক হয়রানিমূলক অধিকাংশ মামলা প্রত্যাহারের কথা জানান। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আজ বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
শ্রম উপদেষ্টার এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার ফেডারেশনের (বিজিআইডব্লিউএফ) সভাপতি কল্পনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় বড় সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের যে ত্বরিত উদ্যোগ রয়েছে, সে তুলনায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহারে রয়েছে শম্বুক গতি। বিষয়টি আমাদের আহত করে।’
শ্রম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শ্রম অধিকার সুরক্ষা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং শ্রম আইন বাস্তবায়নে আইএলওর কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে চায়।
বিজ্ঞপ্তিতে শ্রমিক নেতাদের মামলার ও প্রত্যাহারের সংখ্যা উল্লেখ না থাকায় প্রথম আলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি আজ বুধবার জানান, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক ৪৫টি মামলার মধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে ৪৩টি।
শ্রম সচিবের তথ্যের কথা উল্লেখ করে জানতে চাইলে শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রম সম্মেলনে যাওয়ার আগে তড়িঘড়ি করে কিছু মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে শুনেছি। কিছু হয়েছে বিদেশি ক্রেতাদের (বায়ার) চাপে, কিছু প্রত্যাহার করেছে মালিকপক্ষ। তবে আমার নামে এখনো হয়রানিমূলক মামলা আছে। প্রত্যাহার হলে তো জানতাম।’
বাবুল আখতার আরও বলেন, গাজীপুরের প্রয়াত মেয়র এম এ মান্নানের সঙ্গে কিছু শ্রমিককে আসামি করা হয়েছিল। শ্রমিকেরা এখনো হাজিরা দেন।
সম্মেলনে কারা অংশ নিলেনশ্রম উপদেষ্টার নেতৃত্বে জেনেভায় অনুষ্ঠিত এবারের শ্রম সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে ২৮ জন অংশ নিয়েছেন।
শ্রম উপদেষ্টার পাশাপাশি মন্ত্রণালয় থেকে অংশ নেন শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (শিল্প পুলিশ) গাজী জসিম উদ্দিন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দুই যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান সিকদার ও মোহাম্মদ হোসেন সরকার, শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক এস এম এনামুল হক এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান।
এ ছাড়া অংশ নিয়েছেন জেনেভায় স্থায়ী মিশনের রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলাম এবং দুই কাউন্সিলর ফজলে লোহানি ও মো. কামরুজ্জামান।
সম্মেলনে বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) পক্ষ থেকে যোগ দিয়েছেন ৯ জন। তাঁরা হলেন বিইএফ সভাপতি আরদাশির কবির, সহসভাপতি তাহমিদ আহমেদ, মহাসচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ, সদস্য এ এন এম সাইফ উদ্দিন, আবু দাউদ খান, হামজা সাকিফ তাবানী, ফাইজা মেহমুদ, সৈয়দ তারেক মো. আলী ও বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান। আরও অংশ নেন ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক কমিটির (টিসিসি) সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ও অন্য সাত সদস্য। তাঁরা হলেন শাকিল আখতার চৌধুরী, মো. রাজেকুজ্জামান, আতিকুর রহমান, মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, তাসলিমা আখতার, কোহিনূর মাহমুদ ও শামিম আরা।
টিসিসি ও বিইএফ থেকে দুজন করে চারজনের খরচ সরকার বহন করলেও বাকিরা গেছেন নিজেদের খরচে প্রজ্ঞাপনে এ কথা উল্লেখ রয়েছে।
তিন কনভেনশন অনুস্বাক্ষর হবেবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শ্রম উপদেষ্টা প্লিনারি অধিবেশনে বলেছেন, শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইএলও কনভেনশন সি১৫৫, সি১৮৭ ও সি১৯০ অনুস্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলছে। আন্তর্জাতিক শ্রম মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলছে শ্রম আইন সংশোধনের কাজ। শ্রম পরিদর্শনব্যবস্থা জোরদারে নিয়োগ দেওয়া হবে ১২২ জন নতুন শ্রম পরিদর্শক।
জেনেভায় শ্রম উপদেষ্টা বলেন, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ন্যায্য বাণিজ্য, অভিবাসনসুবিধা ও কারিগরি বৈষম্য কমানোর ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে উন্নয়ন সহযোগিতার তহবিল কমে যাওয়ায় সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আইএলওর কাছ থেকে শ্রম খাতের উন্নয়নে আরও কারিগরি সহায়তা আশা করে বাংলাদেশ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ায় আইএলওর গভর্নিং বডিকে সাধুবাদ জানিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ প্রথমেই আইএলওর তিন কনভেনশন অনুস্বাক্ষরের উদ্যোগের বিষয়টিকে স্বাগত জানান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার হয়ে থাকলে ভালো। কারণ, প্রতিবছর আইএলওতে গিয়ে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ তুলে ধরা দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ আরও বলেন, ‘আশুলিয়া, টঙ্গী—এসব থানায় হাজার হাজার শ্রমিক এখনো অজ্ঞাতনামা আসামি। ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করতে যাওয়ায় তাঁদের আসামি বানানো হয়েছে। তাঁরা বাড়িতে যেতে পারেন না, চাকরিও পান না। এ বিষয়ে সরকারের মনোযোগ চাই।’