কীটতত্ত্ববিদরা জানুয়ারিতে সতর্ক করেন, বরগুনায় বাড়বে ডেঙ্গুর প্রকোপ। সব জেনেও কোনো পদক্ষেপ নেননি সংশ্লিষ্টরা। ফলে জুনে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। রীতিমতো ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হয়েছে জেলাটি।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৬৩১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন পাঁচজন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৯৩ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১ হাজার ৪৩৮ জন। তবে বাসাবাড়ি ও জেলার বাইরে চিকিৎসা নিতে গিয়ে জেলাটিতে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫ হাজার ৪৪১ জন। এর মধ্যে বরগুনাতেই ১ হাজার ৪০৬ জন, যা মোট রোগীর ২৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। একই সময়ে বরিশাল বিভাগে আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৭৫ জনে।

বরগুনার প্রকোপ নিয়ে কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, আগে থেকেই জেলাটিতে ডেঙ্গু রোগী ছিল। সঙ্গে এডিসের লার্ভা ও মশার ঘনত্ব বেশি থাকায় হঠাৎ করে প্রকোপ বেড়ে গেছে।

দেশে নতুন কোনো ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) কারণ বের করার চেষ্টার করে। তবে এখনও বরগুনা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেনি তারা। হঠাৎ রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ওষুধ ও স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড.

কবিরুল বাশার সমকালকে বলেন, ‘বরগুনার ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে– এটি জানুয়ারিতেই জানানো হয়েছে। এডিস মশা নিধন না করলে প্রকোপ বাড়বে– এটা স্বাভাবিক।’ সারাদেশেই মশক নিধন চলেছে ঢিমেতালে। তবে বরগুনায় কেন সংক্রমণ বাড়ল– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জেলায় আগে থেকে রোগী ছিল। এডিসের লার্ভা ও মশার ঘনত্ব বেশি থাকায় হঠাৎ প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এটি প্রতিরোধে শুধু বরগুনা নয়, সারাদেশেই ব্যাপক তৎপরতা চালাতে হবে।’

সরেজমিন বরগুনা সদরের ২ নম্বর গৌরীচন্না ইউনিয়নের দক্ষিণ মনসাতলী গ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি পাওয়া যায়। ঘরে ঘরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়  মানুষ। গ্রামের আট পরিবারের ৩৯ সদস্যের ২৬ জনই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।

গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জুলন চন্দ্র শীল নিজেও আক্রান্ত হয়েছেন। সমকালকে তিনি বলেন, ‘কোনো হানে পানি না থাকলেও মোগো এলাকায় পানি থাহে সব সময়। সবাই ময়লা-আবর্জনা ডোবায় হালায় (ফেলে), পরিষ্কার করে না। মোগো ডেঙ্গু অইবে (হবে) না, অইবে কার?’

১০ জুনের বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের এলাকাভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জেলায় অন্তত ১ হাজার ৩০০ ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে সদরের গৌরীচন্না ইউনিয়নের বাসিন্দা ৩১৫ জন। আর দক্ষিণ মনসাতলী গ্রামের রয়েছেন ১০৫ জন।

দক্ষিণ মনসাতলীর হেমলাল ও ইমরান হোসেন জানান, তাদের এলাকা জেলা ও পৌর শহরের কাছে হওয়ায় খুবই ঘনবসতি। তবে ইউনিয়নের আওতায় থাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নির্দিষ্ট কোনো কার্যক্রম নেই। অসংখ্য ডোবানালায় পানি আটকে থাকে বেশির ভাগ সময়।
বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিজান রানার অভিযোগ, চার দিন হাসপাতালে আছেন। মাত্র একটি নরমাল স্যালাইন পেয়েছেন। বাজারের কোনো ফার্মেসিতেও স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না।

বরগুনায় এত আক্রান্ত কেন
বরগুনায় ডেঙ্গু প্রকোপের সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। বরগুনার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ্‌ বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে কারণ বলা কঠিন। রোগীদের অসচেতনতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে না চলাও রোগী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। হাসপাতালে রোগীরা মশারি ব্যবহার করছেন না। একজন থেকে অন্যজনে ছড়াচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে রোগী বেড়ে যাওয়ায় ওষুধ ও স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। সরকারি বরাদ্দ অপ্রতুল থাকায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার।’

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও পৌর প্রশাসক অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ জানতে আইইডিসিআরকে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।’

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আহমেদ নওশের আলম সমকালকে বলেন, ‘বরগুনার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কারণ এখনই বলা যাবে না। রোগীর নমুনা ঢাকায় পাঠাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার পর সুনির্দিষ্টভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ বলা সম্ভব হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এডিসের লার্ভা, মশার ঘনত্ব বেশি ও আক্রান্ত রোগীর কারণে প্রকোপ বেড়েছে। মশক নিধন ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কর্মসূচি না থাকলেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘সাধারণত শহর এলাকায় ঘরোয়া মশা পাওয়া যায় এবং গ্রামে থাকে জঙ্গলের মশার উপস্থিতি। জানুয়ারির মশা জরিপে বরগুনায় দুই ধরনের মশার উপস্থিতি মিলেছিল। এমন পরিস্থিতির কারণে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেড়ে গেছে। সে সময় জরিপের বিষয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছিল।’

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক টতত ত ব প রক প ব স য ল ইন বরগ ন য় বরগ ন র র প রক

এছাড়াও পড়ুন:

চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে

জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।

এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ