সংস্কার-বিচারে অগ্রগতি হলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন
Published: 14th, June 2025 GMT
জাতীয় নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক অস্বস্তি কাটতে শুরু করেছে। এপ্রিল থেকে এগিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে নির্বাচনের সময় নির্ধারণে একমত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি। তবে এই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচার বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
লন্ডনে গতকাল শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড.
গতকাল বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টার দিকে বৈঠকটি শুরু হয়। প্রথম পর্বে তারা নিজেদের প্রতিনিধিসহ আলোচনা করেন। পরে ড. ইউনূস ও তারেক রহমান প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা করেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, প্রথম পর্বে নির্বাচনের সময় নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে ২০২৬ সালের রোজার আগে নির্বাচন করার প্রস্তাব দেন তারেক রহমান। এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে রোজা শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।
বিএনপি আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করে আসছিল। জামায়াত রোজার আগে নির্বাচন হলে ভালো হয় বলে মত দিয়েছিল। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চাচ্ছিল সংস্কার ও বিচার শেষ করে নির্বাচন। এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা ঈদের আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। বিএনপি এ নিয়ে প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানায়। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির এক ধরনের টানাপোড়েন শুরু হয়। গতকাল লন্ডনে বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দু’পক্ষই বলেছে, তারা ‘সন্তুষ্ট’।
তবে ‘এই ঘোষণা লন্ডনে হওয়ায় এবং একটি দলের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনার’ খবরে অসন্তোষ জানিয়েছে জামায়াত ও এনসিপি।
দেড় ঘণ্টার বৈঠকের পর বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টার দিকে যৌথ প্রেস ব্রিফিং হয়। তাতে যৌথ বিবৃতি পড়ে শোনান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। তাঁর পাশাপাশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীর। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বৈঠক ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ
লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে তারেক রহমানকে স্বাগত জানান নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৈঠকস্থলে পৌঁছালে তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা পরস্পরের সঙ্গে করমর্দন করেন। এ সময় ড. ইউনূস বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে।’ জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘আমারও ভীষণ ভালো লাগছে। ফিল অনার্ড (আমি সম্মানিত বোধ করছি)।’ তারেক রহমান বলেন, ‘আপনার শরীর কেমন? ভালো আছেন?’ জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই যাচ্ছে, কেটে যাচ্ছে।’
এ সময় তারেক রহমান তাঁর মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সালাম পৌঁছে দেন ড. ইউনূসকে। সালামের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) অসাধারণ মানুষ।’
বৈঠকের সূত্র অনুযায়ী, এ পর্যায়ের আলোচনায় তারেক রহমান আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন এ সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
প্রায় আধা ঘণ্টা আলোচনার পর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, আমীর খসরুসহ প্রতিনিধিরা উঠে যান এবং ড. ইউনূস ও তারেক রহমান প্রায় এক ঘণ্টা একান্তে আলাপ করেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে একটি কলম ও দুটি বই উপহার দেন তারেক রহমান। বই দুটির একটি ‘নো ওয়ান ইজ টু স্মল টু মেক অ্যা ডিফারেন্স’ আরেকটি ‘নেচারস ম্যাটারস’।
বৈঠক শেষে তারেক রহমান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করে বিস্তারিত জানান। এর পর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব বলেন, বৈঠকটি সত্যিকার অর্থে একটি টার্নিং পয়েন্টে (বাঁকবদল) পরিণত হয়েছে।
লন্ডনে যৌথ প্রেস ব্রিফিং
প্রথমে যৌথ বিবৃতি পড়ে শোনান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তাতে বলা হয়, তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছর রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন, ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এই অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।
এর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আলোচনায় তারা সন্তুষ্ট।
আরেক প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আমরা কোনো সমস্যা দেখি না। নির্বাচন নিয়ে আমরা দুই পক্ষই যৌথ বিবৃতিতে বলে দিয়েছি। আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন শিগগির তারিখ ঘোষণা করবে।’
সংস্কার ও বিচার নির্বাচনের পথনকশায় প্রভাব ফেলবে কিনা– এমন প্রশ্নে খলিলুর রহমান বলেন, সংস্কার ও বিচার নিয়েও যৌথ বিবৃতিতে বলা আছে। দুই বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতির কথা বলা হয়েছে এবং আমরা মোটামুটি কনফিডেন্ট (আত্মবিশ্বাসী) যে, এই অগ্রগতি আমরা নির্বাচনের আগেই দেখতে পাব। খলিলুর রহমানের কথায় সায় দিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘সম্পন্ন করা যাবে।’
জুলাই ঘোষণাপত্র
বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা– এই প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এ নিয়ে আলোচনা চলছে দেশে। আমাদের সিদ্ধান্ত– ঐকমত্যের ভিত্তিতেই আমরা সংস্কার এবং জুলাই ঘোষণাপত্র করব। আমি নিশ্চিত, খুব কম সময়ের মধ্যে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’
সব দল একমত হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত হবে, তা স্বাক্ষরিত হবে, বাকিটুকু পরে হবে। না হওয়ার কোনো কারণ তো নেই।
বৈঠকে শুধু নির্বাচন নাকি অন্য বিষয়েও আলোচনা হয়েছে– এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সব বিষয়েই তো আলোচনা হবে। আমরা তো নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। দেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা নিয়েছি ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কাজটা করব। শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে আমরা ঐকমত্য হয়েছি সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
সংস্কার
সংস্কারের বিষয়ে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে– এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা তো পরিষ্কার। সংস্কারের বিষয়ে আমরা সবাই বলছি, যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে, সেগুলোতে সংস্কার হবে। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, এমন না যে সব সংস্কার একবারে শেষ হয়ে যাবে। এটা নির্বাচনের আগেও কিছু সংস্কার হবে যেখানে ঐকমত্য হবে, আর নির্বাচনের পরও তা অব্যাহত থাকবে। কারণ আমরা যেই দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সবাই অনুভব করছি এখানে। সুতরাং, আগে-পরে সংস্কার চলতে থাকবে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা
একজন সাংবাদিক জানতে চান, তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে এখানে (লন্ডন) অবস্থান করছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও বলেছেন, তাঁর দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই। তাঁর ফেরার ব্যাপারে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা বা তিনি কবে দেশে ফিরতে পারেন?
এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, এ ব্যাপারে আলোচনার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা মনে করি না। তারেক রহমান যখন ইচ্ছা দেশে ফিরে যেতে পারবেন। এ সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন সময় মতো।
এনসিপি ও অন্যান্য
নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা– এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, এ ব্যাপারে এখানে আলোচনার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। এ প্রশ্নে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এটা তাদের (এনসিপি) জিজ্ঞেস করুন। প্রতিটি দলের নিজস্ব মতামত আছে। তবে আমরা সবাইকে নিয়ে নির্বাচনটা করতে চাচ্ছি।’
জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, এটা তো নির্বাচন-পরবর্তী সিদ্ধান্ত। যারা নির্বাচিত হবে তাদের সিদ্ধান্ত। এখানে আলোচনার কিছু নেই।
সন্তোষ প্রকাশ
বৈঠক নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অবশ্যই সন্তুষ্ট। সংবাদ সম্মেলনের শেষ বাক্যে খলিলুর রহমান বলেন, ‘সন্তুষ্ট না হলে তো যৌথ ঘোষণা আসার কথা নয়।’
দুই নেতা এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন: মির্জা ফখরুল
গতকাল বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৫ বছরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে জীবনদানকারী নেতাকর্মী ও জুলাই-আগস্টে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদ এবং দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি তারেক রহমান কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই নেতা দেশবাসীকে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, অতীতে যেসব ছোটখাটো কথাবার্তা হয়েছে সেগুলোকে ভুলে গিয়ে সামনে জাতীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। আমরা যেন ফেব্রুয়ারিতে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে যেতে পারি এবং জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারি সে দিকে নজর দিতে হবে। আমরা যেন ১৫ বছরের ফ্যাসিস্টদের করা কাঠামোকে নতুন করে একটা গণতান্ত্রিক কাঠামোতে রূপান্তর করতে পারি।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ব এনপ ড ইউন স ত র ক রহম ন প র প রস ত ব রহম ন র ব এনপ র র রমজ ন র প রথম ও ব এনপ ঐকমত য ন র আগ ইউন স এনস প ফখর ল বছর র ই সময গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি হতাশাজনক
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি হতাশাজনক বলে এক পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। এ সময়ের বিভিন্ন ঘটনায় মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলামের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও বাংলাদেশে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দেশের মানুষ এখনও স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল পায়নি। স্বাধীনতার পর ২০২৪ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল সবচেয়ে ভীতিকর ও চরম উদ্বেগজনক। গত আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ছাত্র-জনতার মাঝে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ আস্বাদনের আকাঙ্খা সৃষ্টি হলেও তার প্রতিফলন মূলত ঘটেনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সংশ্লিষ্টরা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফলতা দেখাতে পারেনি। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেও মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা হতাশাজনক। নতুন বছরে মানবাধিকার পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নের প্রত্যাশা থাকলেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্বের ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি এতে নতুন কিছু বিষয়ও যুক্ত হয়েছে। রমজান মাসে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দ্রব্যমূল্য ও দুই ঈদযাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। ’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যু, গণপিটুনিতে নির্যাতন ও হত্যা, নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও নির্যাতনে মৃত্যু, শ্রমিকদের ওপর হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, মাজারে হামলা ও ভাঙচুর, কারাগারে মৃত্যু, সভা-সমাবেশে বাধা প্রদান, আন্দোলনরত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে। এ সময় চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাসহ বেশ কিছু সামাজিক অপরাধ ঘটেছে যা জনমনে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করেছে। শেখ হাসিনার বক্তব্য নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ৫, ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি, শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদন এবং সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের অফিস ও নেতাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারের রায় ঘোষণার পর বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সাথে শাহবাগ বিরোধী ঐক্যের উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত ১২ মে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সব সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ শিক্ষার্থীদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। রাজধানীতে বিভিন্ন দাবি আদায়ে রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। আদালত ও কারা ফটকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা; থানা ও পুলিশের ওপর হামলা করে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে । দেশে সন্ত্রাসবাদ দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে ও বিশেষ অভিযানে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, ভারত সীমান্তে সংঘর্ষ, উত্তেজনা, বিএসএফের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বেড়া নির্মাণ, উসকানি, বাংলাভাষী মানুষদেরকে পুশইন করা, এমনকি নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা, আহত ও গ্রেপ্তার এবং মিয়ানমারের আরাকান আর্মি কতৃক বাংলাদেশি জাহাজ আটক, সীমান্তে গুলি, মাইন ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের মত বিভিন্ন ঘটনা মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।’