জাতীয় নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক অস্বস্তি কাটতে শুরু করেছে। এপ্রিল থেকে এগিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে নির্বাচনের সময় নির্ধারণে একমত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি। তবে এই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচার বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। 

লন্ডনে গতকাল শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে এক যৌথ ঘোষণায় এ তথ্য জানানো হয়। 
গতকাল বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টার দিকে বৈঠকটি শুরু হয়। প্রথম পর্বে তারা নিজেদের প্রতিনিধিসহ আলোচনা করেন। পরে ড. ইউনূস ও তারেক রহমান প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা করেন। 
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, প্রথম পর্বে নির্বাচনের সময় নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে ২০২৬ সালের রোজার আগে নির্বাচন করার প্রস্তাব দেন তারেক রহমান। এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে রোজা শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। 

বিএনপি আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করে আসছিল। জামায়াত রোজার আগে নির্বাচন হলে ভালো হয় বলে মত দিয়েছিল। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চাচ্ছিল সংস্কার ও বিচার শেষ করে নির্বাচন। এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা ঈদের আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। বিএনপি এ নিয়ে প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানায়। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির এক ধরনের টানাপোড়েন শুরু হয়। গতকাল লন্ডনে বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দু’পক্ষই বলেছে, তারা ‘সন্তুষ্ট’। 

তবে ‘এই ঘোষণা লন্ডনে হওয়ায় এবং একটি দলের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনার’ খবরে অসন্তোষ জানিয়েছে জামায়াত ও এনসিপি। 
দেড় ঘণ্টার বৈঠকের পর বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টার দিকে যৌথ প্রেস ব্রিফিং হয়। তাতে যৌথ বিবৃতি পড়ে শোনান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। তাঁর পাশাপাশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীর। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। 

বৈঠক ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ 
লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে তারেক রহমানকে স্বাগত জানান নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৈঠকস্থলে পৌঁছালে তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা পরস্পরের সঙ্গে করমর্দন করেন। এ সময় ড. ইউনূস বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে।’ জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘আমারও ভীষণ ভালো লাগছে। ফিল অনার্ড (আমি সম্মানিত বোধ করছি)।’ তারেক রহমান বলেন, ‘আপনার শরীর কেমন? ভালো আছেন?’ জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই যাচ্ছে, কেটে যাচ্ছে।’ 

এ সময় তারেক রহমান তাঁর মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সালাম পৌঁছে দেন ড. ইউনূসকে। সালামের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) অসাধারণ মানুষ।’
বৈঠকের সূত্র অনুযায়ী, এ পর্যায়ের আলোচনায় তারেক রহমান আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন এ সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে। 
প্রায় আধা ঘণ্টা আলোচনার পর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, আমীর খসরুসহ প্রতিনিধিরা উঠে যান এবং ড. ইউনূস ও তারেক রহমান প্রায় এক ঘণ্টা একান্তে আলাপ করেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে একটি কলম ও দুটি বই উপহার দেন তারেক রহমান। বই দুটির একটি ‘নো ওয়ান ইজ টু স্মল টু মেক অ্যা ডিফারেন্স’ আরেকটি ‘নেচারস ম্যাটারস’।
বৈঠক শেষে তারেক রহমান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করে বিস্তারিত জানান। এর পর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব বলেন, বৈঠকটি সত্যিকার অর্থে একটি টার্নিং পয়েন্টে (বাঁকবদল) পরিণত হয়েছে।

লন্ডনে যৌথ প্রেস ব্রিফিং
প্রথমে যৌথ বিবৃতি পড়ে শোনান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তাতে বলা হয়, তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছর রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন, ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌ অর্জন করা প্রয়োজন হবে। 
তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এই অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।
এর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আলোচনায় তারা সন্তুষ্ট। 
আরেক প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আমরা কোনো সমস্যা দেখি না। নির্বাচন নিয়ে আমরা দুই পক্ষই যৌথ বিবৃতিতে বলে দিয়েছি। আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন শিগগির তারিখ ঘোষণা করবে।’
সংস্কার ও বিচার নির্বাচনের পথনকশায় প্রভাব ফেলবে কিনা– এমন প্রশ্নে খলিলুর রহমান বলেন, সংস্কার ও বিচার নিয়েও যৌথ বিবৃতিতে বলা আছে। দুই বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতির কথা বলা হয়েছে এবং আমরা মোটামুটি কনফিডেন্ট (আত্মবিশ্বাসী) যে, এই অগ্রগতি আমরা নির্বাচনের আগেই দেখতে পাব। খলিলুর রহমানের কথায় সায় দিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘সম্পন্ন করা যাবে।’

জুলাই ঘোষণাপত্র
বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা– এই প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এ নিয়ে আলোচনা চলছে দেশে। আমাদের সিদ্ধান্ত– ঐকমত্যের ভিত্তিতেই আমরা সংস্কার এবং জুলাই ঘোষণাপত্র করব। আমি নিশ্চিত, খুব কম সময়ের মধ্যে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’
সব দল একমত হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত হবে, তা স্বাক্ষরিত হবে, বাকিটুকু পরে হবে। না হওয়ার কোনো কারণ তো নেই।
বৈঠকে শুধু নির্বাচন নাকি অন্য বিষয়েও আলোচনা হয়েছে– এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সব বিষয়েই তো আলোচনা হবে। আমরা তো নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। দেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা নিয়েছি ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কাজটা করব। শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে আমরা ঐকমত্য হয়েছি সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

সংস্কার 
সংস্কারের বিষয়ে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে– এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা তো পরিষ্কার। সংস্কারের বিষয়ে আমরা সবাই বলছি, যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে, সেগুলোতে সংস্কার হবে। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, এমন না যে সব সংস্কার একবারে শেষ হয়ে যাবে। এটা নির্বাচনের আগেও কিছু সংস্কার হবে যেখানে ঐকমত্য হবে, আর নির্বাচনের পরও তা অব্যাহত থাকবে। কারণ আমরা যেই দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সবাই অনুভব করছি এখানে। সুতরাং, আগে-পরে সংস্কার চলতে থাকবে।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা
একজন সাংবাদিক জানতে চান, তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে এখানে (লন্ডন) অবস্থান করছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও বলেছেন, তাঁর দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই। তাঁর ফেরার ব্যাপারে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা বা তিনি কবে দেশে ফিরতে পারেন? 
এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, এ ব্যাপারে আলোচনার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা মনে করি না। তারেক রহমান যখন ইচ্ছা দেশে ফিরে যেতে পারবেন। এ সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন সময় মতো। 

এনসিপি ও অন্যান্য
নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা– এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, এ ব্যাপারে এখানে আলোচনার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। এ প্রশ্নে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এটা তাদের (এনসিপি) জিজ্ঞেস করুন। প্রতিটি দলের নিজস্ব মতামত আছে। তবে আমরা সবাইকে নিয়ে নির্বাচনটা করতে চাচ্ছি।’
জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, এটা তো নির্বাচন­-পরবর্তী সিদ্ধান্ত। যারা নির্বাচিত হবে তাদের সিদ্ধান্ত। এখানে আলোচনার কিছু নেই।

সন্তোষ প্রকাশ
বৈঠক নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অবশ্যই সন্তুষ্ট। সংবাদ সম্মেলনের শেষ বাক্যে খলিলুর রহমান বলেন, ‘সন্তুষ্ট না হলে তো যৌথ ঘোষণা আসার কথা নয়।’
 
দুই নেতা এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন: মির্জা ফখরুল 
গতকাল বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৫ বছরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে জীবনদানকারী নেতাকর্মী ও জুলাই-আগস্টে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদ এবং দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি তারেক রহমান কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই নেতা দেশবাসীকে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, অতীতে যেসব ছোটখাটো কথাবার্তা হয়েছে সেগুলোকে ভুলে গিয়ে সামনে জাতীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। আমরা যেন ফেব্রুয়ারিতে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে যেতে পারি এবং জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারি সে দিকে নজর দিতে হবে। আমরা যেন ১৫ বছরের ফ্যাসিস্টদের করা কাঠামোকে নতুন করে একটা গণতান্ত্রিক কাঠামোতে রূপান্তর করতে পারি।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ব এনপ ড ইউন স ত র ক রহম ন প র প রস ত ব রহম ন র ব এনপ র র রমজ ন র প রথম ও ব এনপ ঐকমত য ন র আগ ইউন স এনস প ফখর ল বছর র ই সময গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।  

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে

আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।

এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে  চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।

ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’

এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।

ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ