গত এক বছরে সরকারি সেবা গ্রহণ করেছেন এমন নাগরিকের মধ্যে ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ এসব সরকারি সেবা গ্রহণে প্রতি তিনজনের মধ্যে গড়ে একজনকে ঘুষ দিতে হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সিটিজেন পারসেপশন সার্ভের প্রাথমিক ফলাফলে এ চিত্র উঠে এসেছে। জরিপের ফল প্রকাশ উপলক্ষে আগারগাঁও পরিসংখ্যান ভবনে এদিন সংবাদ সম্মেলন করে বিবিএস। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৬ নম্বর অভীষ্টের ছয়টি সূচক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে এ জরিপ পরিচালিত হয়। গত ৬ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এই জরিপে দেশের ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ৮৪ হাজার ৮০৭ প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ অংশ নেন। 

জরিপ অনুযায়ী, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এ প্রতিষ্ঠানে ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ নাগরিক ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এর পর রয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ৬১ দশমিক ৯৪, পাসপোর্ট অফিস ৫৭ দশমিক ৪৫ এবং ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।
জরিপের ফল বলছে, ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকায় একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। তবে এখানে রয়েছে স্পষ্ট লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য। পুরুষের ক্ষেত্রে এ হার ৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ, নারীর ক্ষেত্রে ৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলের নিরাপত্তা বোধ ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলের তুলনায় ৮৫ দশমিক ৩০ শতাংশের কিছুটা কম। নিজ বাসায় নিরাপত্তা বোধের ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি– ৯২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। 

মতপ্রকাশ ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ
২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তারা সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে মতপ্রকাশ করতে পারেন। অন্যদিকে, ২১ দশমিক ৯৯ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করেন, তারা দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে প্রভাব ফেলতে পারেন।
সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় আস্থার চিত্র
গত এক বছরে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন ৪৭ দশমিক ১২ শতাংশ নাগরিক। সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবাকে সহজপ্রাপ্য এবং ৮৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ সেবার ব্যয়কে সহনীয় মনে করেন। তবে স্বাস্থ্যসেবার মান ৬৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, স্বাস্থ্যকর্মীদের আচরণ ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং সময় দেওয়া ৬৩ দশমিক ১৯ শতাংশ– এসব ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম সন্তুষ্টি দেখা গেছে।

সরকারি শিক্ষায় ইতিবাচক প্রবণতা
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশ নাগরিক জানিয়েছেন, তাদের অন্তত একটি সন্তান সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। প্রাথমিক স্তরে ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ নাগরিক বিদ্যালয়ে সহজ প্রবেশাধিকার ও ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ ব্যয়কে সহনীয় বলে মন্তব্য করেন। মাধ্যমিক স্তরে এ হার কিছুটা কম– ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ ও ৮০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। শিক্ষার মান বিষয়ে প্রাথমিক স্তরে ৬৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৭১ দশমিক ৮৬ শতাংশ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

অন্যান্য সরকারি সেবার মান
পরিচয়পত্র বা নাগরিক নিবন্ধনের মতো সেবায় ৭৮ দশমিক ১২ শতাংশ নাগরিক সেবার প্রাপ্যতা এবং ৮৬ দশমিক ২৮ শতাংশ ব্যয়কে গ্রহণযোগ্য মনে করেন। তবে কার্যকারিতা ৬২ দশমিক ৬০ শতাংশ, সময়মতো সেবা ৫১ দশমিক ২৮ শতাংশ ও সমআচরণ ৫৬ দশমিক ২৬ শতাংশ– এ তিনটি সূচকে সন্তুষ্টির হার তুলনামূলকভাবে কম।

বিচারপ্রাপ্তি ও বিরোধ নিষ্পত্তি
গত দুই বছরে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বিরোধের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বিচারপ্রক্রিয়ার আওতায় আসতে পেরেছেন। এর মধ্যে ৪১ দশমিক ৩৪ শতাংশ আনুষ্ঠানিক (আদালত বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) এবং ৬৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক (কমিউনিটি নেতা বা আইনজীবী) প্রক্রিয়ায় সেবা পেয়েছেন।

বৈষম্য ও হয়রানি
জরিপ অনুযায়ী, গত এক বছরে ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। নারীদের মধ্যে এই হার ১৯ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং পুরুষদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলে বৈষম্যের হার ২২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, যা গ্রামাঞ্চলের ১৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশের চেয়ে বেশি।
জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড.

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ঘুষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল সবাইকে ঘুষ দিতে হয়। তারপরও জরিপে উঠে এসেছে ৩১ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয়। নারীদের কাছে তুলনামূলক ঘুষ কম চাওয়া হয়েছে। তুলনামূলক উচ্চবিত্তরা ঘুষ দেন বেশি। ঘুষ দিয়ে তারা মূলত সেবা কিনে নেন।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্নীতির তথ্যে হতাশা ব্যক্ত করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা তো এখনও দাঁড়াতেই পারেনি, তারপরও তারা দ্বিতীয় অবস্থানে। এটি ভালো কথা নয়। আমার জানামতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সবচেয়ে বেশি ঘুষ বাণিজ্য হয়। সেটি বেশির ভাগই বদলিকে কেন্দ্র করে। এখানে মধ্যস্বত্বভোগী অনেক।’ পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হয় ছ ন প রক শ গ রহণ সরক র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশ থেকে ফেরার সময় বিনা শুল্কে মোবাইল, ল্যাপটপ, ফ্রিজ-টিভিসহ ১৯টি পণ্য আনতে পারবেন

বিদেশ থেকে আসার সময় যাত্রীরা নিজের ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, মা-বাবাসহ আত্মীয়স্বজনের জন্য নানা ধরনের উপহারসামগ্রী আনেন। আবার গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও নিয়ে আসেন তাঁরা। এ জন্য সরকার ব্যাগেজ রুল সুবিধা দেয়।

১৯ ধরনের পণ্য বিনা শুল্কে এবং ১১ ধরনের পণ্য শুল্ক–কর পরিশোধ করে আনা যায়। এ জন্য কোনো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হবে না। ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে ফেরার সময় আনা যাবে ওই সব পণ্য।

সরকার দু-এক বছর পর পর ব্যাগেজ রুলে পরিবর্তন আনে। এবারের বাজেটেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।

বিনা শুল্কে যা আনা যাবে

১২ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী একজন যাত্রী ৬৫ কেজি ওজনের ব্যাগেজ শুল্ক-কর ছাড়া খালাস করতে পারবেন। তবে ১২ বছরের নিচের বয়সী যাত্রী ৪০ কেজি ব্যাগেজ বিনা শুল্কে খালাস করতে পারবে।

বিনা শুল্কে যে ১৯ ধরনের পণ্য আনা যাবে। এ পণ্যের তালিকায় আছে দুটি ব্যবহৃত মুঠোফোন; একটি নতুন মোবাইল ফোন; ১৫ বর্গমিটার আয়তনবিশিষ্ট কার্পেট; ২৯ ইঞ্চি পর্যন্ত টেলিভিশন; ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ; কম্পিউটার স্ক্যানার; প্রিন্টার; ভিডিও ক্যামেরা; স্টিল বা ডিজিটাল ক্যামেরা; ওভেন ও মাইক্রোওয়েভ ওভেন; রাইস কুকার, প্রেসার কুকার, গ্যাস ওভেন; টোস্টার, স্যান্ডউইচ মেকার, ব্লেন্ডার, ফুড প্রসেসর, জুসার, কফি মেকার; সেলাই মেশিন; টেবিল ফ্যান; ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য খেলার সামগ্রী; ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার গয়না; এক কার্টন সিগারেট; সিডি ও স্পিকারসহ মিউজিক সিস্টেম।

শুল্ক-কর পরিশোধ করে যে ১১ ধরনের পণ্য আনা যাবে। এগুলো হলো ১১৭ গ্রাম ওজনের স্বর্ণবার। এ জন্য ৪০ হাজার টাকা শুল্ক-কর দিতে হবে। এ ছাড়া ২৩৪ গ্রাম বা ২০ তোলা রৌপ্যবার; ৩০ ইঞ্চি ও তদূর্ধ্ব টেলিভিশন; হোম থিয়েটার; রেফ্রিজারেটর ও ডিপ ফ্রিজার; এয়ারকন্ডিশনার; ডিশ অ্যানটেনা; এইচডি ক্যামেরা; ঝাড়বাতি; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে এয়ারগান; ডিশওয়াশার বা ওয়াশিং মেশিন বা ক্লথ ড্রায়ার আনা যাবে। এসব পণ্যে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হয়।

এবার যত পরিবর্তন

এবারের বাজেটে বিদেশ থেকে ফেরার সময় বছরে একবার সর্বোচ্চ ১১৭ গ্রাম ওজনের একটি করে সোনার বার আনতে পারবেন। সোনার বার আনার ক্ষেত্রে প্রতি ভরিতে (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) শুল্ক ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আগে একজন যাত্রী বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় যতবার খুশি ততবার ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার গয়না বিনা শুল্কে আনতে পারতেন। এখন থেকে একজন যাত্রী বছরে মোট ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার গয়না বিনা শুল্কে আনতে পারবেন। বিদেশফেরত একজন যাত্রী দুটি ব্যবহৃত মুঠোফোন ও প্রতিবছর একবারই একটি নতুন মুঠোফোন শুল্ক-কর পরিশোধ ছাড়া আনতে পারবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো সংগ্রামী বীরের মহাপ্রস্থান
  • কালাপাহাড় পালিয়েছে
  • করোনায় যশোরে আরেকজনের মৃত্যু, সারাদেশে ২৮ জন শনাক্ত
  • সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম কারাগারে 
  • নগদের কোটি টাকা লুটের ঘটনায় সাবেক সেনা ও পুলিশ সদস্য জড়িত
  • চাকরিচ্যুত পুলিশ ও সেনা সদস্যের নেতৃত্বে উত্তরায় লুট হয় কোটি টাকা
  • যশোরে করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, কিটের ঘাটতিতে পরীক্ষা বন্ধ
  • হলুদের সাপ্লিমেন্ট খেলে কি লিভারের ক্ষতি হয়
  • বিদেশ থেকে ফেরার সময় বিনা শুল্কে মোবাইল, ল্যাপটপ, ফ্রিজ-টিভিসহ ১৯টি পণ্য আনতে পারবেন