মোসাদের চেয়েও ভয়ংকর যেসব গোয়েন্দা সংস্থা আছে ইসরায়েলের
Published: 20th, June 2025 GMT
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নাম নিশ্চয় শুনেছেন। মোসাদ ছাড়াও ইসরায়েলের আরও ভয়ংকর-ভয়ংকর গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। যেগুলোর কাজ হলো হিউম্যান ইন্টেলিজেন্সি শনাক্ত করা থেকে সম্ভাব্য হামলা চালানোর জায়গা শনাক্ত করা, গবেষণা করা, রিপোর্ট প্রদান করা। ইসরায়েলের জন্য হুমকি হতে পারে, এমন যেকোনো কিছু খুঁজে বের করার জন্যও রয়েছে আলাদা গোয়েন্দা সংস্থা। সম্প্রতি ইরানের সাথে যুদ্ধ শুরুর পরেই ইসরায়েল আরেকটি গোয়েন্দা সংস্থা গঠন করেছে, যার কাজ হলো ইরানের কোথায়, কখন হামলা করতে হবে সেই বিষয়ে তথ্য দেওয়া। ইসরায়েলের প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থা আলাদা আলাদা দায়িত্ব পালন করে থাকে।
মোসাদ: ইসরায়েলকে বিভিন্ন দেশের হুমকি থেকে রক্ষা করার জন্য কাজ করে সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। এই সংস্থা গঠিত হয় ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার প্রায় দেড় বছর পরেই। অর্থাৎ ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে।
শাবাক বা শিন বেট: ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে শাবাক বা শিন বেট। এটি গঠিত হয় ১৯৪৯ সালে। শিন বেট দাবি করে, সংস্থাটি পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আসা হুমকির বিরুদ্ধে ‘অদৃশ্য ঢাল’ হিসেবে কাজ করে।
আরো পড়ুন:
ইরানের ‘লাল রেখা’ কী কী?
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিয়ে চীনের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
আমান: ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আমান। এই সংস্থা প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাধারণ সদর দপ্তরের অধীনে কাজ করে। এটি মূলত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে সামরিক কমান্ডকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করে থাকে। ইসরায়েলে গোয়েন্দা সংস্থার ইতিহাস ইসরায়েলের অস্তিত্বের চেয়েও পুরনো। জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ‘শাই’ নামে একটি গোয়েন্দা সংস্থা এখানে কাজ করত, যা ছিল ইহুদি আধা-সামরিক সংগঠন ‘হাগানাহ’-এর গোয়েন্দা শাখা। রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়ের প্রতিষ্ঠা পাবার পর ‘আমান’ তৈরি হয় মূলত হাগানাহর ধারণার ওপর। বর্তমানে এই সংস্থার দায়িত্ব হলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরান থেকে আসা গোয়েন্দা ও সামরিক হুমকি সনাক্ত করা।ইসরায়েল তাদের গোয়েন্দা বাহিনীর আওতায় নতুন একটি ইউনিট যুক্ত করেছে, যার নাম ‘ব্রাঞ্চ ৫৪’। দেশের সামরিক গোয়েন্দা দপ্তরের অধীনে কাজ করার পাশাপাশি সংস্থাটি সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতেও কাজ করে।
ইউনিট ৮২০০: এই ইউনিটকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে ধরা হয়। যার মাধ্যমে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইলেকট্রনিক মাধ্যমে তাদের গোয়েন্দা তৎপরতা পরিচালনা করে। এই ইউনিটে কাজ করা সদস্যদের সংখ্যা মোসাদ ও শিন বেটের সদস্যদের থেকেও বেশি হয়ে থাকে। গোয়েন্দাগিরির জন্য ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক যন্ত্র বানানোর দায়িত্বও তাদের ওপর অর্পিত। আরও যা করে সংস্থাটি- যোগাযোগ ব্যবস্থার ওয়্যারট্যাপিং (গোপনে আড়ি পাতা), গোয়েন্দা ও সামরিক তথ্য ডিকোড করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেট থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা, সাইবার হুমকির শনাক্তকরণ, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ইলেকট্রনিক ও সাইবার ডিভাইস তৈরি করা। কারিগরি দিক থেকে একে এই সংস্থা আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সমতুল্য বলে মনে করা হয়।
ইউনিট ৮২০০: এর কার্যক্রম সবসময় গোপন রাখা হয়। তবুও সামরিক ও গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে এই ইউনিট ইসরায়েলকে রক্ষা করতে কিংবা ইসরায়েলের হয়ে আক্রমণ করতে এক কথায় প্রতিরক্ষা ও হামলা উভয় ধরনের অভিযানে প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছে।
ইউনিট ৯৯০০: যদি ইউনিট ৮২০০-কে ইসরায়েলের ‘কান’ বলা হয়, তাহলে ইউনিট ৯৯০০-কে তার ‘চোখ’ বলা যেতে পারে। এই ইউনিটের দায়িত্ব হলো ছবি ও ভিডিও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা। এজন্য এই ইউনিট স্যাটেলাইট, গোয়েন্দা বিমান ও ড্রোন ব্যবহার করে। এসব ছবি ও ভিডিওর তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে সেনা কমান্ডার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের কাছে রিপোর্ট পৌঁছে দেয়াও এই ইউনিটের দায়িত্ব।
তথ্য অনুযায়ী, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইরানকে পর্যবেক্ষণ করাও ইউনিট ৯৯০০-এর দায়িত্ব। যা ইসরায়েলের গোয়েন্দা স্যাটেলাইট ‘হরাইজন ১৩’ দিয়ে করা হয়।
ইউনিট ৫০৪: এই ইউনিট মানুষের গোয়েন্দা তথ্য (হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স) সংগ্রহের জন্য কাজ করে। এই ইউনিটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এবং এটি শত শত সফল অপারেশন চালিয়েছে।
ব্রাঞ্চ ৫৪: ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নতুন গোয়েন্দা ইউনিট ব্রাঞ্চ ৫৪। এর কাজ হলো ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া। এরা ইরানের সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করবে, ইরানের কোন কোন জায়গায় যুদ্ধ চালাবে তা শনাক্ত করবে।
সূত্র: বিবিসি
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল র এই ইউন ট এই স স থ ক ত কর ক জ কর র জন য ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।
বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।
বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।
জ্বালানি তেলবিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।
কৃষিপণ্যবিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।
খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।
২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।
দেশে কেন দাম বেশিবিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।
আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।
দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।