পাকা রাস্তা, হাইওয়ে যেমন হয়। রাস্তার দু’দিকে চেনা-অচেনা, ছোট-বড় প্রচুর গাছ। গাড়ি চলছে, ঝকঝকে টয়োটার মিনি ভ্যান, এর সাথে চলছে আমার ননস্টপ প্রশ্ন; এটা কী গাছ, ওটা কী, আমগাছ নেই? ব্রাজিল নাট কই ... উত্তর দিতে ড্রাইভারকেও ননস্টপ কথা বলতে হচ্ছে। পেছনে আমার ভ্রমণসঙ্গীরা দীর্ঘ পথযাত্রায় সম্ভবত ক্লান্ত, তাই চুপচাপ। আমিও ক্লান্ত কিন্তু আমার কথা বলতে ভালো লাগছিল। আমি খুব বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম, ড্রাইভার মিল্টন, আমাদের ট্যুর কোম্পানির মালিকও তিনি; নিজস্ব উচ্চারণে অনর্গল চমৎকার ইংরেজি বলছে। ব্রিটিশঘেঁষা উচ্চারণ, পারফেক্ট না হলেও প্রায়বিশুদ্ধ গ্রামার এবং শক্তিশালী শব্দভান্ডার। যাক, আজ গুগল অনুবাদের ছুটি! গত রাতে হোটেলে ভাষা পার্থক্যের কারণে যে ক্লান্তিকর অবস্থায় পড়েছিলাম, সেটা মনে করে এখন একটু স্বস্তি পেলাম। ফ্রন্ট ডেস্কের তরুণী মেয়েটা একবর্ণ ইংরেজি জানে না। সে আমাদের খাওয়ার পানির সন্ধানটাও দিতে পারেনি। পরে লবিতে রাখা ভেন্ডিং মেশিন থেকে পানির বোতল বের করে দেখালে সে বুঝেছিল।
মানাউস থেকে আমাজন বনে প্রবেশের জন্য যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্গমন পয়েন্ট আছে, মানাউস থেকে উত্তর-পশ্চিমে প্রায় চল্লিশ কিমি দূরত্বে ইরানদুবা তেমন একটি পয়েন্ট। এটা আমাজোনাসের সবচেয়ে ছোট মিউনিসিপাল এরিয়া। আমরা এখন সেখানে যাচ্ছি।
ঠিক সকাল ৮টায় মাহতাব ভাইয়ের টেক্সট পেয়ে নিচে নামলাম। ট্যুর কোম্পানির গাড়ি এসে গেছে। ঘুমের দেখা নেই বলে রেডি হয়েই ছিলাম। নিচে নেমে দেখি গাড়ির পাশে লম্বা, স্লিম, হাফপ্যান্ট- হাফশার্ট, স্যান্ডেল শু পরা শ্যামল রঙের আকর্ষণীয় একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। পরিচয় হলো। এই ভদ্রলোকটিই মিল্টন, আমাদের ড্রাইভার কাম ট্যুর অপারেটর। সাত সিটের চকচকে টয়োটা মিনি ভ্যান, আমি সামনে বসলাম, বাকি তিনজন পেছনের সিটে। ড্রাইভারের সাথে গল্প করা এবং ছবি তোলার সুবিধার জন্য আমি সামনে বসতে পছন্দ করি।
প্রায় ৩০ মিনিটের পথ যাওয়ার পরে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে মিল্টন ওর স্ত্রী মারিয়াকে তুলে নিল। মারিয়া আমাদের নাশতা নিয়ে অপেক্ষায় ছিল। মারিয়া কি শ্বেতাঙ্গ? গায়ের রং আর হালকা সোনালি চুল তেমনই বলছে। মিল্টনের ভাইয়ের মতো সেও একদম ইংরেজি জানে না। আর সে কারণেই সারাক্ষণ মিটমিট করে হাসছে। পরে জেনেছি, মারিয়া স্থানীয় আদিবাসী কন্যা, সম্ভবত রক্ত সংকর হয়ে গেছে। এর পরে প্রায় ৫ মাইল যাওয়ার পরে মারিয়া যেখানে নামে সেখানে ওর কলেজপড়ুয়া মেয়ে অপেক্ষা করছে ট্যুরের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে। মনে মনে হাসলাম, এ যেন রিলে রেস।
আমাদের গাড়ি হাইওয়ে ছেড়ে কাঁচা রাস্তায় পড়তেই পেছনের যাত্রীরা নড়েচড়ে বসল। যাক, গাড়ির নাচনকুঁদনে তাদের ঝিমুনি কেটে গেছে। উঁচুনিচু রাস্তা, পানিভরা খানাখন্দ। গত রাতেও বৃষ্টি হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি হয়-না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। বিষুবীয় আবহাওয়া। ছোটবেলায় ভূগোলে পড়েছিলাম– উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে পুষ্ট রেইনফরেস্ট মানে বৃষ্টিবনের কথা।
কিছুদূর যেতে কিছু বাড়িঘর চোখে পড়ল। কাঠের ১০-১৫ ফুট খুঁটির ওপরে কাঠের ছোট ছোট ঘর।
জায়গাটা ভারি সুন্দর। গাছের ঘনছায়া, সুনসান ভাবালুতাকে ভেঙে দিচ্ছে পাখিদের বহুভাষিক আলাপচারিতা। গাড়ির শব্দে রাস্তা থেকে সরে যাচ্ছে গৃহপালিত প্রাণীরা। আমাদের গাড়ির দিকে তাকিয়ে হাত তুলে, চিৎকার করে কী সব বলছে গেঁয়ো চেহারার লোকজন। অধিকাংশই অত্যন্ত সুঠাম ও দীর্ঘদেহী। বুঝলাম মিল্টনকে সবাই চেনে। ওর গেস্ট বলে হয়তো ওরা আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে।
গাড়ি যেখানে থামল সেখানে বেশ কিছু মানুষ জটলা করে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির এসি ছেড়ে নিচে নামতেই একটা হালকা উষ্ণ ও জলীয় ভাব শরীরে লেপটে গেল। এটা খুলনার সুন্দরবন কিংবা দিনাজপুরের শিঙাড়া ফরেস্ট হতে পারত, কিন্তু না; মেটো গন্ধ বলছে আমরা অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে আছি।
এ জায়গাটার নাম ব্যালনিয়ারিও চাকোয়েরিয়া দো কাস্তানহো, যাকে একটা অপরিসর সৈকত বলা যায়। কাস্তানহো লেকের সৈকত।
বর্ষার সময় এই পুরো এলাকাটা ডুবে যায়। বাড়িগুলো তাই খুঁটির ওপরে।
লেকের পাড়ে ছোট-বড় রেস্টুরেন্ট যা দেখছি, সব অস্থায়ী। পানির উচ্চতা নাকি পঞ্চাশ ফুট পর্যন্ত উঠতে পারে। বন থেকে পানি বের হয়ে কুলকুল করে একটি জলপ্রপাত হয়ে কাস্তানহো লেকে পড়ছে। পানির রং কোথাও বাদামি, কোথাও রুপালি। বেশি না, ছয় থেকে সাত ফুট নিচে পাথরের ওপরে পড়ার আগে সকালের কোমল রোদে পড়ন্ত পানি চিকচিক করছে। তারপর গড়িয়ে লেকে মিশে যাচ্ছে।
পানির এই পতন দৃশ্য সব সময়, সব জায়গাতেই সুন্দর। এই মৃদুমন্দ জলপ্রপাত নাকি বর্ষাকালে (এপ্রিল থেকে আগস্ট) ফুলে ওঠা লেকে মিশে একাকার হয়ে যায়। লম্বা গাছগুলোর প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতায় গায়ে গোল করে পানির দাগ দেখা যাচ্ছে। এখন খরা চলছে, সে কারণে কিছু বিশেষ সৌন্দর্য আমরা মিস করব। যেমন– আমাজন লিলি। তবে যা শুনলাম, এখানকার বর্ষাকাল ট্যুরিস্টরা হ্যান্ডল করতে পারবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।
এবার মিল্টন আমাদের নতুন ট্যুর গাইডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বিদায় নিল। গাইডকে দেখে আমি রীতিমতো অবাক। সম্ভবত পাঁচ ফুট হাইট, টিনটিনে স্বাস্থ্য। আমাদের দেশে ফর্সা যাকে বলে তেমন গায়ের রং, মিষ্টি চেহারার একটা ছেলে। ভালো করে দাঁড়ি-মোচ ওঠেনি। ফুলপ্যান্ট, ফুলশার্ট পরা, ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুল, মাঝখানে সিঁথি। ভাবছি, এ আমাদের নিয়ে যাবে আমাজনের জঙ্গলে হাইকিং করতে? বলে কী? একটা বাচ্চা এনাকোন্ডা তো বিনা কসরতে একে গিলে ফেলতে পারবে! আমাদের তখন কী হবে? পথ হারিয়ে বন থেকে যদি বেরুতে না পারি? যা হোক, এসব তো আর ওকে বলা যায় না। বয়সচোরাও হতে পারে। একটু কায়দা করে জিজ্ঞেস করলাম। বলল, ছয় বছর ধরে সে এই চাকরি করছে কিন্তু জঙ্গলে যাওয়া-আসা শৈশব থেকে।
সমতল থেকে বেশ নিচে ঘাট। ৩টা নৌকা বাঁধা আছে। একটার দিকে দেখিয়ে বলল, ওটাতে আমরা যাব। পাথরে পা ফেলে আমাদের নিচে নামতে হবে।
একটা পাথরের সাথে মোটা দড়ি দিয়ে নৌকাটা বাঁধা। আমাদের দেশের ডিঙি নৌকার মতো ১২-১৩ ফুট লম্বা, ইঞ্জিন লাগানো। ছই জাতীয় কিছু নেই।
আমরা চারজন পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলাম। নৌকা আমাদের কারোই পছন্দ হয়নি কিন্তু চেপে গেলাম। বুলি ভাবি এমন নৌকায় করে যেতে হবে– তেমন প্ল্যান কেন করেছি বলে মাহতাব ভাইয়ের প্রতি খুব অসন্তুষ্ট। বুলি ভাবির চেহারায় ভীতির ফাউন্ডেশনে উষ্মার ব্লাশঅন। এখন তো আর উপায় নেই, বললাম, ভয় চেপে যান, যতটা রিস্কি ভাবছেন সেটা নাও হতে পারে। আল্লাহ ভরসা। মনে মনে বললাম, বদর বদর!
আমরা একে একে গাইড আলফসের হাত ধরে দোদুল্যমান নৌকায় উঠলাম। ওর সহকারী ইঞ্জিনের হাতল ধরে বসে আমাদের অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে।
আমাদের সাথে যোগ দিল সুইডেনের কলেজপড়ুয়া দুই ভাই, ইতালির একজন মধ্যবয়সী একাকী মহিলা, একজন ভেনেজুয়েলান ও একজন কানাডিয়ান যুবক।
ওপরে ছেঁড়া ছেঁড়া কিছু মেঘ কোলে নিয়ে নীলাকাশ তাকিয়ে, নিচে নেগ্রো নদীর কালচে পানি।
আমি ভয়টয় তেমন একটা পাই না। তবুও বুকের ভেতরে কেমন অদ্ভুত একটা ধুকপুকি, উত্তেজনা। সত্যিই যাচ্ছি আমাজন বৃষ্টিবনে? খুশি খুশি লাগছে, কিন্তু যদি নৌকাডুবি হয়? বাপরে! ইউটিউবে যে সব এনাকোন্ডা দেখেছি!
–আচ্ছা, তুমি যে এতগুলো মানুষ নিয়ে নদী, তারপরে জঙ্গলে যাচ্ছ, তোমার ভয় করে না? আমি আলফসকে আবার জিজ্ঞেস করি।
–না। বলেছি তো আমি অনেকদিন থেকে এই কাজ করি। ও হাসে।
–তোমার বয়স কত? আমি কৌতূহল দমাতে পারি না।
ছেলেটা কিলকিল করে হাসে আর কলকল করে কথা বলে। শ্রুতিমধুর একটা আক্সেন্ট আছে কিন্তু নির্ভুল, অনর্গল ইংরাজি বলতে পারে। এই ভাসমান গ্রামের কোনো একটাতে ওর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। শহরে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল, ভালো লাগেনি। ফিরে এসেছে পানি, গাছ ও শেকড়ের টানে।
নৌকা চলছে। পানি ও ইঞ্জিনের শব্দে আমাদের কথা ও একান্ত ভাবনা মিশে যাচ্ছে।
শুরুর ভয়টা কেটে গেলে আমরা যে যার মতো সবাই ফটো তুলতে ব্যস্ত হয়ে যাই।
এই নদীতে ঘাসজাতীয় এক ধরনের চিকন গাছ জটলা বেঁধে ছোট ছোট সবুজ দ্বীপ সৃষ্টি করেছে। নানা রঙের ও ঢঙের পাখি সেই দ্বীপে খেলছে। নদীর এক পাশ মিশে গিয়েছে জঙ্গলে, অন্যপাশে কাঠের ঘরবাড়ি, পানি যার উঠোন-আলফনস পরিচয় করিয়ে দিল– floating house.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গল প আম দ র ন অন য ক ম ল টন
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫