‘একজন ছেলে মানুষ আমাদের পরিবারের বৌ হয়েছিল’
Published: 26th, July 2025 GMT
দেড় মাসের সংসার। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে কাটাচ্ছিলেন দাম্পত্য জীবন। তবে, এ সময় স্বামীকে কাছে ভিড়তে দিতেন না স্ত্রী। কাছে গেলেই তিনি বলতেন, “আমি এখন অসুস্থ্, ডাক্তার আপাতত কাছে আসতে নিষেধ করেছে।” এ থেকেই শুরু হয় স্বামীর মনে সন্দেহ। গতকাল শুক্রবার (২৫ জুলাই) ছেলে ও তার পরিবার জানতে পারেন, তাদের ঘরের বউ আসলে একজন পুরুষ।
কথিত ওই গৃহবধূর নাম সামিয়া। তার প্রকৃত নাম মো.
শাহিনুর রহমান ওরফে সামিয়া জানান, তার হরমন জাতীয় শারীরিক সমস্যা আছে। তাই নিজেকে মেয়ে ভাবতে ভালো লাগে।
আরো পড়ুন:
এক বিয়ের বরযাত্রী খেয়ে ফেলল অন্য বিয়ের খাবার
প্রেমের টানে খুলনায় এসে বিয়ে করলেন চীনা তরুণ
স্থানীয় ও ছেলের পারিবার সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাউলি কেউটিল গ্রামের মো. বাদল খানের ছেলে মাহমুদুল হাসান শান্তর সঙ্গে কথিত সামিয়ার ফেসবুকে পরিচয় হয়। দীর্ঘদিন তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলে। গত ৭ জুন শান্তর বাড়িতে চলে আসেন সামিয়া। এরপর পরিবারের সম্মতিতে এলাকাবাসী মৌলভি দিয়ে বিয়ে করিয়ে দেন শান্ত ও সামিয়ার।
এরপর থেকে শান্তর পরিবারে বসবাস করতে করতে থাকেন সামিয়া। তবে, নানা কারণে সম্প্রতি শান্ত ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে সামিয়াকে নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। গতকাল শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে শান্তর পরিবারের লোকজন জানতে পারেন তাদের ঘরের বউ আসলে একজন মানুষ।
মাহমুদুল হাসান শান্ত জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে কথিত সামিয়ার সঙ্গে তার পরিচয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ৭ জুন সামিয়া তার বাড়িতে আসেন। পরে অভিভাবক ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে হুজুর দিয়ে তার সঙ্গে সামিয়ার বিয়ে করানো হয়। সামিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় কাবিন রেজিষ্ট্রি করা হয়নি।
তিনি আরো জানান, বিয়ের পর থেকেই তার স্ত্রীর আচরণ রহস্যজনক ছিল। কাছে গেলেই তিনি বলতেন, “আমি এখন অসুস্থ, ডাক্তার আপাতত কাছে আসতে নিষেধ করেছেন।” এ থেকেই সন্দেহ বাড়তে থাকে তার।
শান্তর মা মোছা. সোহাগী বেগম বলেন, “একজন ছেলে মানুষ আমাদের পরিবারের বৌ হয়েছিল। আমরা এ বিষয়টি কোনোভাবেই টের পাইনি। সে অভিনয় করে আমাদের সবার মন জয় করে নিয়েছিল। সবই যে তার অভিনয় ছিল, তা আমরা বুঝতে পারিনি। তার পরিচয় জানাজানি হলে শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে তাকে আমরা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
এ প্রসঙ্গে শাহিনুর রহমান ওরফে সামিয়া মোবাইল ফোনে বলেন, “আমি শান্তর সঙ্গে যা করেছি, সেটা অন্যায় করেছি। এটা করা আমার ঠিক হয়নি।” তিনি জানান, তার হরমন জাতীয় শারীরিক সমস্যা আছে। তাই নিজেকে মেয়ে ভাবতে ভালো লাগে।
গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নে পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, “বিষয়টি নিয়ে কেউ আমার কাছে আসেননি। ঘটনাটি পরিষদের এক মেম্বারের মুখ থেকে শুনেছি।”
ঢাকা/রবিউল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পর ব র র শ ন তর ত র পর
এছাড়াও পড়ুন:
ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থও দেখতে হবে
সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ধিত মাশুল কার্যকর হলে গড়ে ৪০ শতাংশ কম–বেশি হারে বন্দরের আয় বাড়বে। অর্থাৎ বাস্তবে মাশুলের গড় হার বাড়বে ৪০ শতাংশ। এ ঘোষণা এমন সময়ে এল, যখন বাংলাদেশের ওপর ট্রাম্পের ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্কের খড়্গ ঝুলছে। দর–কষাকষিতে বাংলাদেশ কতটা সফল হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরের সব ধরনের মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা।
তৈরি পোশাকশিল্পের সংগঠন বিজিএমইএর নেতাদের বক্তব্য হলো ব্যবহারকারীদের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা ছাড়াই বন্দরের মাশুল বাড়ানোর পদক্ষেপ যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। বাড়তি মাশুল রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা পিছিয়ে দেবে। অর্থনীতিবিদেরাও অনুরূপ মত পোষণ করেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল আদায়ের প্রধান দুটি খাত হলো জাহাজ ও পণ্য পরিবহনের সেবা বাবদ। বন্দরের হিসাব অনুযায়ী, বিদ্যমান মাশুলের হার অনুযায়ী ২৩-২৪ অর্থবছরের এই দুই খাতে মাশুল আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। বর্ধিত মাশুল থেকে বন্দরের দেড় হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে।
সারা দেশের সমুদ্রপথে কনটেইনার পরিবহনের ৯৯ শতাংশ ও মোট আমদানি–রপ্তানি পণ্যের ৮৭ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা-নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, মাশুল বাড়ানোর পরও বিশ্বের অন্যান্য বন্দরের তুলনায় কম। বিষয়টি কেবল মাশুলের হার দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না। সেবার মানও দেখতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে যেখানে একটি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করতে অপেক্ষার সময়সহ পাঁচ–ছয় দিন লেগে যায়, অন্যান্য বন্দরে সেটি এক দিনে খালাস হয়। স্বল্প সময়ে কনটেইনার খালাস করা গেলে মাশুল বাড়ালেও ব্যবসায়ীদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে না। সে ক্ষেত্রে সরকারের উচিত ছিল আগে সেবার মান বাড়ানো, এরপর মাশুল বাড়ানোর কথা চিন্তা করা।
দ্বিতীয়ত সরকারকে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে। গত ২ জুন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ব্যবহারকারীদের সঙ্গে মাশুল নিয়ে এক দফা আলোচনা করে, যেখানে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ২০ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর তাদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা না করেই মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৯৮৬ সালের পর এই প্রথম মাশুল বাড়ানো হচ্ছে। তাদের এই বক্তব্যের মধ্যেও শুভংকরের ফাঁকি আছে। মাশুল নির্ধারিত হয় ডলারের হিসাবে, অর্থাৎ ১৯৮৬ সালে ডলারের দর ছিল ৩০ টাকা ৪১ পয়সা, বর্তমান দর ১২২ টাকা। সে ক্ষেত্রে সরকার ঘোষণা দিয়ে না বাড়ালেও ব্যবহারকারীদের চার গুণ মাশুলই গুনতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের কিছু টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস নিজেও চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনকালে বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই মাশুল বাড়ানো হয়েছে। সাধারণত যে কোম্পানি টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পায়, তারা মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ করে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের যে টার্মিনালটি নিয়ে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, সেটি স্বয়ংসম্পূর্ণ, নতুন করে বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই। অন্তর্বর্তী সরকার বন্দরের বিষয়ে যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, সেটা হওয়া উচিত রাজনৈতিক দল ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে।