ইসলামের প্রতি একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো এটি কঠোর এবং মানুষের প্রাকৃতিক আকাঙ্ক্ষাকে দমন করে। বিশেষ করে নারী-পুরুষের মধ্যে প্রেম বা হুব্ব নিয়ে এই ধারণা প্রায়শই প্রচারিত হয়।

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রেমের ধারণা, শরিয়তের সীমাবদ্ধতা এবং ফকিহদের তাত্ত্বিক ও দার্শনিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ রয়েছে।

ইসলামে প্রেম: ভুল ধারণা ও বাস্তবতা

ইসলাম প্রেমকে নিষিদ্ধ করেনি; বরং এটিকে শরিয়তের সীমার মধ্যে রাখার পক্ষে। ইসলাম প্রেমকে একটি প্রাকৃতিক ও ফিতরাতের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যা মানুষকে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উৎকর্ষের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

তবে এই প্রেম যেন ফুজুর (অশ্লীলতা) বা পাপের দিকে না নিয়ে যায়, সেজন্য শরিয়ত কিছু সীমারেখা নির্ধারণ করেছে। ইসলাম প্রেমকে শুদ্ধভাবে পালনের জন্য বিবাহের মাধ্যমে একটি বৈধ পথ দেখিয়েছে।

ইসলামের প্রতি একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো এটি কঠোর এবং মানুষের প্রাকৃতিক আকাঙ্ক্ষাকে দমন করে। বিশেষ করে নারী-পুরুষের মধ্যে প্রেম বা হুব্ব নিয়ে এই ধারণা প্রায়শই প্রচারিত হয়।কোরআন ও হাদিসে প্রেমের স্থান

ইসলামে প্রেমের ধারণা কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে স্বীকৃত। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হাদিসের আলোচনা করা হলো:

আরও পড়ুনভালো প্রতিবেশী আল্লাহর প্রিয়জন১৩ এপ্রিল ২০২৫

এতিমের বিবাহ: একজন ব্যক্তি নবী (সা.

)-কে বললেন, তিনি একটি এতিম মেয়েকে লালন-পালন করছেন, একজন ধনী ও একজন গরিব ব্যক্তি সেই মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। তারা ধনী ব্যক্তিকে পছন্দ করেন, কিন্তু মেয়েটি গরিব ব্যক্তিকে ভালোবাসে। নবীজি (সা.) বললেন, ‘পরস্পর ভালোবাসার জন্য বিয়ের তুল্য (উত্তম) কিছু আমরা দেখিনি’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৮৪৭)।

আয়েশা (রা.)-এর প্রতি ভালোবাসা: আমর ইবনে আস (রা.) নবীজিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয় কে?’ তিনি বললেন, ‘আয়েশা।’ জিজ্ঞেস করলেন, ‘পুরুষদের মধ্যে?’ নবীজি বললেন, ‘তার পিতা’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৬৬২)।

আয়েশা (রা.) আরও বলেন, নবীজি তাকে স্বপ্নে দেখেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘এটি যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তবে তিনি তা পূর্ণ করবেন’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,০৭৮)।

মুগিস ও বারিরার ঘটনা: মুগিস তার স্ত্রী বারিরাকে ভালোবাসতেন, কিন্তু বারিরা তাকে তালাক দিয়েছিলেন। তিনি তার পিছনে গিয়ে কাঁদতেন। নবীজি তার জন্য বারিরার কাছে সুপারিশ করেছিলেন, কিন্তু বারিরা তাকে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করেন। নবীজি (সা.) মুগিসের প্রেমের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছিলেন এবং তাকে নিষেধ করেননি (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,২৮৩)।

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি বলেন, এই ঘটনা দেখায় যে অতিরিক্ত প্রেম হয়তো লজ্জা দূর করতে পারে, এবং এটি অনিচ্ছাকৃত হলে ক্ষমাযোগ্য (ফাতহুল বারী, ৯/৩২৫, দারুল মা’রিফা, বৈরুত)।

কনে দেখার অনুমতি: নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিয়ের উদ্দেশ্যে কাউকে দেখতে চায়, তার জন্য তা জায়েজ, কারণ এটি ভালোবাসার দিকে নিয়ে যেতে পারে (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৪২৫)।

পরস্পর ভালোবাসার জন্য বিয়ের তুল্য (উত্তম) কিছু আমরা দেখিনি।সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৮৪৭

গুহার তিন ব্যক্তির কাহিনি: নবীজি (সা.) তিন ব্যক্তির গল্প বলেন, যারা গুহায় আটকা পড়েছিলেন। তাদের একজন তার প্রিয়তমার প্রতি ভালোবাসার কথা উল্লেখ করেন। তিনি তার কঠিন সময়ে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শর্ত দিয়েছিলেন যে তাকে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে।

মেয়েটি বললেন, ‘আল্লাহকে ভয় করো, এবং বৈধভাবে বিয়ে ছাড়া আমার সম্ভ্রম ভঙ্গ করো না।’ তিনি তাকে ছেড়ে দেন এবং তার দেওয়া সোনাও ফিরিয়ে দেন। এই কাজের কারণে আল্লাহ তাদের গুহা থেকে মুক্ত করেন (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,২১৫)।

এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে ইসলাম প্রেমকে একটি প্রাকৃতিক এবং গ্রহণযোগ্য আবেগ হিসেবে বিবেচনা করে, তবে এটি শরিয়তের সীমার মধ্যে থাকতে হবে।

আরও পড়ুননবীজির (সা.) প্রতি সাহাবিদের শ্রদ্ধাভীতি ও ভালোবাসা ২৬ এপ্রিল ২০২৪ফকিহদের তত্ত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলামী পণ্ডিতরা প্রেমের বিষয়ে বিভিন্ন তাত্ত্বিক ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন। নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

১. ইমাম মুহাম্মদ ইবনে দাউদ আয-যাহিরি

তিনি বলেন, প্রেমের শুরু হয় দৃষ্টি ও শ্রবণের মাধ্যমে। তিনি নবীজি (সা.)-এর হাদিস উল্লেখ করেন: ‘আত্মারা হলো সৈন্যদল; যারা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত, তারা মিলিত হয়, আর যারা পরস্পরের সঙ্গে অপরিচিত, তারা বিচ্ছিন্ন হয়’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৩৩৬)।

তিনি বলেন, ‘প্রকৃত প্রেম তখনই, যখন প্রেমিক তার প্রিয়জনের প্রতি একনিষ্ঠ থাকে এবং তার কাছেই শান্তি খোঁজে’ (আয-যাহরা, পৃ. ১২৫, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত)।

২. ইমাম ইবনে হাজম

তিনি প্রেমকে আধ্যাত্মিক সংযোগ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘প্রেম প্রথমে হাস্যকর মনে হয়, কিন্তু এর শেষ গুরুতর। এর সূক্ষ্মতা এত গভীর যে এটি কেবল অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই বোঝা যায়’ (তাওকুল হামামা, পৃ. ১৫, দারুল জিল, বৈরুত: ১৯৯৩)।

তিনি প্রেমকে আত্মার মধ্যে সংযোগ হিসেবে দেখেন, যা শারীরিক সৌন্দর্য বা নৈতিক গুণাবলির উপর নির্ভর করে না, বরং আত্মার গভীর মিলের উপর নির্ভর করে। তিনি কোরআনের আয়াত উল্লেখ করেন: ‘তিনিই তোমাদের একটি আত্মা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ১৮৯)।

তিনিই তোমাদের একটি আত্মা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়।সুরা আ’রাফ, আয়াত: ১৮৯

তিনি আরও বলেন, প্রকৃত প্রেম মৃত্যুর আগে শেষ হয় না, যদি তা আত্মার গভীর সংযোগের উপর ভিত্তি করে থাকে।

আরও পড়ুনগরিবকে ভালোবাসা ইসলামের অনন্য শিক্ষা০৮ জুলাই ২০২৫

৩. ইমাম ইবনে জাওযি

তিনি প্রেমের দুটি দিক আলোচনা করে বলেন, সাধারণ ভালোবাসা বা মিলনের আকাঙ্ক্ষা প্রশংসনীয়, কারণ এটি মানুষের ফিতরাতের অংশ। কিন্তু অতিরিক্ত প্রেম, যা মানুষের বিবেক ও নৈতিকতাকে ক্ষুণ্ন করে, তা নিন্দনীয়।

তিনি বলেন, ‘প্রেম যদি শরিয়তের সীমার মধ্যে থাকে, তবে তা প্রশংসনীয়। কিন্তু যদি এটি বিবেককে গ্রাস করে, তবে তা ধ্বংসাত্মক’ (যাম্মুল হাওয়া, পৃ. ৪৫, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত: ১৯৮৬)।

৪. ইমাম ইবনে কাইয়িম

তিনি প্রেমের তিনটি উপাদান উল্লেখ করেন: প্রিয়জনের গুণাবলি, প্রেমিকের সেই গুণাবলীর প্রতি আকর্ষণ এবং উভয়ের মধ্যে আধ্যাত্মিক সামঞ্জস্য। তিনি বলেন, ‘প্রেম তখনই শক্তিশালী হয় যখন এই তিনটি উপাদান পূর্ণ হয়’ (রাওযাতুল মুহিব্বিন ওয়া নুযহাতুল মুশতাকিন, পৃ. ১৮০, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত: ১৯৯৮)।

প্রেমকে দুই প্রকারে ভাগ করেন তিনি: প্রশংসনীয় প্রেম, যা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ভালোবাসার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং নিন্দনীয় প্রেম, যা শরিয়তের সীমা লঙ্ঘন করে। তিনি মুগীস ও বারীরার ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, প্রেম যদি শরিয়তের মধ্যে থাকে, তবে তা ক্ষমাযোগ্য।

ইসলামে প্রেমের সীমা ও শর্ত প্রেম যদি শরিয়তের সীমার মধ্যে থাকে, তবে তা প্রশংসনীয়। কিন্তু যদি এটি বিবেককে গ্রাস করে, তবে তা ধ্বংসাত্মক।ইমাম ইবনে জাওযি (রহ.), যাম্মুল হাওয়া, পৃ. ৪৫

ইসলাম প্রেমকে নিষিদ্ধ করেনি, তবে এটি শরিয়তের সীমার মধ্যে থাকতে হবে। প্রেম যদি ফুজুর বা পাপের দিকে নিয়ে যায়, তবে তা নিন্দনীয়। কেউ যদি তার প্রিয়জনের প্রতি ‘আমি তোমাকে পূজা করি’ বলে, তবে তা কুফর হিসেবে গণ্য হবে (ইবনে তাইমিয়া, মাজমুয়াতুল ফাতাওয়া, ১০/১৩৫, দারুল ওয়াফা, মিশর: ২০০১)।

তবে, যদি কেউ বলে ‘আমি তোমার দাস’ এবং এর দ্বারা শুধু ভালোবাসার প্রকাশ বোঝায়, তবে তা ক্ষমাযোগ্য হতে পারে।

ইসলাম প্রেমকে বিবাহের মাধ্যমে বৈধতা দেয়। নবী (সা.) বলেছেন, ‘পরস্পর ভালোবাসার জন্য বিয়ের তুল্য আর কিছু আমরা দেখিনি’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৮৪৭)।

এটি প্রমাণ করে যে প্রেমের চূড়ান্ত গন্তব্য হলো বিবাহ, যা প্রেমকে শুদ্ধ ও সম্মানজনক অবস্থানে রাখে।

সূত্র: ইসলাম অনলাইন ডট নেট

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)-কে ভালোবাসা ইমানের শর্ত২৬ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম প র ম সহ হ ব খ র র জন য ব ইসল ম র কর ছ ন আল ল হ বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে