ঢাকা ওয়াসার আগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল, নতুনটির আবেদন শেষ কাল
Published: 3rd, August 2025 GMT
ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ঢাকা ওয়াসা) জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চুক্তি ভিত্তিতে একজন কর্মকর্তা নিয়োগে দেবে। এ–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২১/৩/২০২৫ এবং ২৩/৩/২০২৫ তারিখে পত্রিকায় প্রকাশিত পূর্ববর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো বাতিল করা হয়েছে। যেসব প্রার্থী আগে আবেদন করেছিলেন, তাঁরা আবারও আবেদন করতে পারবেন।
পদের নাম: ব্যবস্থাপনা পরিচালকপদসংখ্যা: ১
যোগ্যতা: ন্যূনতম স্নাতকোত্তর বা বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) বা সমমানের ডিগ্রি। সরকারি/আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে কর্মরত আছেন বা ছিলেন, এমন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫–এর ন্যূনপক্ষে তৃতীয় গ্রেড স্কেল বা সমপর্যায়ের স্কেলধারী হতে হবে। অবশ্যই পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সেক্টর অথবা সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় সিনিয়র পর্যায়ে অন্তত ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী হতে হবে।
আরও পড়ুনগণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরে নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ৯৩ জনের০২ আগস্ট ২০২৫বয়স: অনূর্ধ্ব ৬০ বছর হতে হবে।
চাকরির ধরন: তিন বছরের চুক্তিভিত্তিক
বেতন-ভাতা: আলোচনা সাপেক্ষে
সুযোগ-সুবিধা: প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য চালক–জ্বালানিসহ একটি গাড়ি, আবাসিক টেলিফোন, মুঠোফোন ও তার বিল ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ প্রদান করবে।
আরও পড়ুনএ সপ্তাহের সেরা সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি, মোট পদ ১৬৯৫০১ আগস্ট ২০২৫আবেদন যেভাবেআগ্রহী প্রার্থীদের বিস্তারিত বিবরণসংবলিত নিজের জীবনবৃত্তান্তসহ আহ্বায়ক, কর্মসম্পাদন সহায়তা কমিটি, ঢাকা ওয়াসা বরাবর আবেদনপত্র সরাসরি, কুরিয়ার বা ডাকযোগে পাঠাতে হবে।
আবেদনপত্র পাঠানোর ঠিকানা: সদস্যসচিব, কর্মসম্পাদন সহায়তা কমিটি, ঢাকা ওয়াসা, ওয়াসা ভবন, ৯৮ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
আবেদনপত্র পাঠানোর শেষ সময়: ৪ আগস্ট ২০২৫, বেলা ৩টা পর্যন্ত।
আরও পড়ুনফিনল্যান্ড কীভাবে গড়েছে বিশ্বসেরা শিক্ষাব্যবস্থা, সাফল্যের ৬ কারণ৭ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
দিনমজুর আবুল কালাম অপেক্ষা করছিলেন মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে, তখন অন্তত একটি ইলিশ কিনবেন। বড় আকারের না হলেও ছোট-মাঝারি সাইজের দু–একটি ইলিশ কিনে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে তুলে দেবেন। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি তাঁর, হবে বলেও আর মনে করেন না।
গত রোববার রাতে বরিশাল নগরের চৌমাথা বাজারে বারবার ইলিশের ডালার দিকে তাকাচ্ছিলেন কালাম। কখনো ক্রেতার দিকে, কখনো বিক্রেতার দিকে তাকান। আবার হাঁটতে হাঁটতে ইলিশের দিকে অসহায় চোখে চেয়ে থাকেন। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘ক্যামনে কিনমু, জাটকার দামই তো ১ হাজার ২০০ আর বড়গুলার গায় তো হাতই ছোয়ান যায় না। কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই।’
শুধু নিম্নবিত্ত নয়, নিম্ন মধ্যবিত্তের নাগালেও নেই ইলিশ। চৌমাথা বাজারে কালামের আক্ষেপের কথা শোনার সময় পাশে ৩ হাজার ২০০ টাকায় ৮০০ গ্রামের দুটি ইলিশ কিনলেন এক বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বললেন, ‘দুই মাসের অপেক্ষার পর এই প্রথম দুইটা ইলিশ কিনলাম। সিজন যায় যায় তবু স্ত্রী, বাচ্চাদের আবদার পূরণ করতে পারিনি। মৌসুম শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাই কষ্ট হলেও কিনলাম আর কি!’
ইলিশের মৌসুম এখন শেষের পথে। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুচক্রেও এসেছে অস্থিরতা। আষাঢ়-শ্রাবণের বদলে বৃষ্টি নেমেছে শরতে, ইলিশের মৌসুমও সরে এসেছে শরতের দিকে। কদিন আগেই উপকূলে ঝোড়ো হাওয়া আর প্রবল বৃষ্টি হয়েছিল। সঙ্গে ছিল মধু পূর্ণিমার জোছনা। স্থানীয় জেলেদের বিশ্বাস, এই আবহাওয়ায় গভীর সমুদ্র থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ বেরিয়ে আসে। সেই সুযোগে ভরে ওঠে জেলেদের জাল। ভাদ্রের মধুপূর্ণিমা তাই প্রতিবছরই জেলেদের জন্য বিশেষ সময়। তবে কয়েক বছর ধরে আর আগের মতো সেই ‘ইলিশের মচ্ছব’ দেখা যায় না।
মৌসুমে ইলিশ বাজারে এলেও দাম থাকে আকাশছোঁয়া। মূল্যস্ফীতির চাপে যখন সাধারণ মানুষের ডালভাতেই টানাপোড়েন, তখন ইলিশ ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ফলে ক্রেতাদের প্রশ্ন, মৌসুমেও কেন ইলিশের দাম এত বেশি?
বরিশালের খুচরা বাজারে জুন থেকেই ইলিশ পাওয়া যাচ্ছিল। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে (শ্রাবণ-ভাদ্র) সরবরাহ বেড়েছে, কিন্তু দাম কমেনি। জুনেও ১ কেজির ওপরে ইলিশ ছিল ৩ হাজার টাকা, ১ কেজির ইলিশ ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকায়। এখন সরবরাহ বাড়ার পরও দাম একই।
কেন বাড়তি দামক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, মূলত পাইকারি বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে দাম বাড়ছে। জেলে থেকে পাইকার, আড়তদার হয়ে মোকাম, এরপর খুচরা বিক্রেতা—প্রতিটি ধাপে কমিশন ও লাভ যোগ হয়। এতে শেষ পর্যন্ত ক্রেতার ওপর পড়ে বাড়তি বোঝা। তবে পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি, আগের মতো এখন আর ইলিশের সরবরাহ নেই। সেই সঙ্গে আহরণের ব্যয়ও দ্বিগুণ হয়েছে। এতে দাম কমার সুযোগ নেই।
বরিশালের পোর্ট রোডের পাইকারি ব্যবসায়ী জহির সিকদার বলেন, সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। আসলে মাছই কম ধরা পড়ে। বড় ইলিশ তো একেবারেই কম। আর ব্যয়ও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
পোর্ট রোডের বাজারে আজ পাইকারি পর্যায়ে ১ কেজির ইলিশ বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৮৬ হাজার টাকায়, ৯০০ গ্রামের ইলিশ ৭৬ হাজার টাকায়, ৫০০ গ্রামের ইলিশ ৬০ হাজার টাকায় এবং ১ কেজির ওপরে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার টাকায়।
আহরণের ব্যয় দ্বিগুণমৎস্য খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সমুদ্রগামী মৎস্য খাত সংকটে পড়েছে। ট্রলার পরিচালনা, জেলেদের খোরাকি, বরফ, মজুরি—সব মিলিয়ে ব্যয় বেড়েছে ৭০ শতাংশ। ফলে আহরিত মাছ বিক্রি করে ব্যয় তোলা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ডিজেলের দাম ছিল লিটারপ্রতি ১১৪ টাকা। বর্তমানে সরকারি দর ১০২ টাকা হলেও স্থানীয় বাজারে লিটারপ্রতি ১০৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আগে ছিল ৬৫ টাকা। ফলে খরচ প্রায় দ্বিগুণ।
পাথরঘাটার পদ্মা গ্রামের এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মালিক জাহাঙ্গীর খান জানান, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে তাঁর ট্রলারে ১৯ জন মাঝি-জেলে থাকেন। ট্রলারটিতে জ্বালানি তেল লাগে ১২ ব্যারেল। শুধু জ্বালানি তেলের খরচ হয় ২ লাখের বেশি। ইঞ্জিন অয়েল ১২ হাজার ৫০০ টাকা, বরফ ৬৫ হাজার টাকা, জেলেদের ১০ দিনের বাজারসদাই ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যন্ত্রাংশ ২০ হাজার, ওষুধ ৫ হাজার, খাবার পানি ২ হাজার, অন্যান্য খাতে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে একটি ট্রলার পাঠাতে খরচ হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা।
জাহাঙ্গীর খান বলেন, এই খরচ তোলার জন্য অন্তত ১৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করতে হয়। কিন্তু এখন কখনো ২ লাখ, কখনো ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার বেশি মাছ বিক্রি করা যায় না। অগভীর সাগরে যাওয়া ট্রলারগুলোর ব্যয়ও বেড়েছে। পাথরঘাটার আরেক মালিক মোহাম্মদ সেলিম জানান, বর্তমানে একটি ট্রলারে জ্বালানি তেল লাগে ২ ব্যারেল মানে প্রায় ৪০ হাজার টাকা, ইঞ্জিন অয়েল ৫ হাজার টাকা, বরফ ১৫ হাজার টাকা, বাজার সদাই ৭০ হাজার টাকা, যন্ত্রাংশ ৫ হাজার টাকা, ওষুধ-পানি ২ হাজার এবং অন্যান্য খরচ ৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আগে ব্যয় হতো ৭৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। এই ব্যয় তুলে লাভ করা এখন খুব কষ্টকর। এ জন্য বাজারে ইলিশের দাম চড়া।