ভোলার দমার চর ও সেখানকার বিচিত্র চঞ্চুর পাখিটি দেখার ইচ্ছা বহুদিনের। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা ও সঙ্গীর অভাবে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। হঠাৎ ৬ জানুয়ারি ২০১৬-এ হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের একটি সুযোগ এল। কিন্তু পাখি দেখার ভ্রমণ না হওয়ায় ক্যামেরা নিলাম ঠিকই, তবে পাখির ছবি তোলার উপযোগী কোনো লেন্স নিলাম না সঙ্গে। সন্ধ্যায় সদরঘাট থেকে এমভি ফারহান-৪ লঞ্চে হাতিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়ে ৭ জানুয়ারি নিঝুম দ্বীপ পৌঁছালাম।
রাতের খাবার শেষে টিম লিডার সাইফুর রহমান সজীব ঘোষণা দিলেন, ‘আপনার জন্য সারপ্রাইজ আছে।’ আমি বললাম, ‘কী সারপ্রাইজ?’ ‘নৌকা ঠিক করেছি, কাল আমরা দমার চর যাব।’ শুনে প্রথমে খুশি হলেও পরে মনটা খারাপ হয়ে গেল। হায় রে! সেই তো দমার চর যাচ্ছি, কিন্তু লেন্স কোথায়? কীভাবে ছবি তুলব? তবে মন খারাপের বিষয়টা কাউকে বুঝতে দিলাম না।
পরদিন সকাল সকাল নৌকা ছাড়ার কথা থাকলেও পৌনে ১০টার আগে রওনা দিতে পারলাম না। যাত্রার শুরুতেই একঝাঁক কালো লেজ জৌরালি ও একটি লাল পা পিউ দেখলাম। এরপর পর্যায়ক্রমে লালশির, যাঠুয়া বক, বড় গুলিন্দা, ছোট গোতরা, খোয়াজ, বদরকৈতর, ছোট টিটি জিরিয়া দেখতে দেখতে দুঘণ্টা পর দমার চরে পৌঁছালাম। কিন্তু কাদাপানির কারণে চরে নামার কোনো চেষ্টাই করলাম না। চরের সামনে এসে প্রথমেই চোখে পড়ল ছোট ও বড় গুলিন্দার ঝাঁক। এরপর এক জোড়া খোয়াজ, একঝাঁক কাস্তেচরা ও শেষে সৈকত পাখির এক বিশাল মিশ্র ঝাঁক। কিন্তু দমার চরের সেই বিচিত্র চঞ্চুর পাখিদের তো দেখছি না?
এমন সময় কোত্থেকে হঠাৎ শ তিনেক পাখির বিশাল একটি ঝাঁক উড়ে এল। ঝাঁকের পাখিদের ওড়া দেখেই বুঝলাম ওরা কারা। কিন্তু ঢাল-তলোয়ার ছাড়া কি আর যুদ্ধ করা যায়? কাজেই যা হওয়ার তা–ই হলো। সাক্ষী ছবি ছাড়া আর কিছুই তুলতে পারলাম না। এরপর বেশ কয়েকবার রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ওদের দেখা গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে তো ওরা প্রজননও করেছিল। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সে সময় যেতে পারিনি।
ঢাল-তলোয়ার ছাড়া নিধিরাম সরদার হয়ে যে পাখির ছবি তুললাম সে আর কেউ নয়, এ দেশের বিরল ও মহাবিপন্ন আবাসিক পাখি পানিকাটা। অবশ্য বেশসংখ্যক পাখি বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের উপকূলে শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। থেলাজাল, জলখোর, পানিচরা বা গাঙচষা নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান স্কিমার। ল্যারিডি গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Rynchops albicollis। বিশ্বব্যাপী শঙ্কাগ্রস্ত পাখিটিকে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ও আফ্রিকার কিছু দেশে দেখা যায়।
প্রাপ্তবয়স্ক পানিকাটা লম্বায় ৩৮ থেকে ৪৩ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৩৫০ গ্রাম। প্রজননকালীন পাখির মাথা, ঘাড়ের পেছনটা, কাঁধ, ডানা ও লেজ কালো এবং পিঠ কালচে-বাদামি। কপাল, গলাবন্ধ, ডানার মধ্য পালকের আগা, দেহতল ও ডানার পালকতল সাদা। চোখের রং বাদামি। বৈচিত্র্যপূর্ণ কমলা-লাল চঞ্চুর গোড়া আলতা লাল ও আগা হলদে। নিচের চঞ্চু ওপরেরটি থেকে অনেক লম্বা। খাটো পা ও পায়ের পাতা সিঁদুরে লাল। প্রজননহীন পাখির পিঠ অনুজ্জ্বল ও তুলনামূলকভাবে বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম হলেও স্ত্রী খানিকটা ছোট।
আ ন ম আমিনুর রহমান, পাখি ও বন্য প্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে উড়োজাহাজের সঙ্গে কুকুরের ধাক্কা
কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে উড্ডয়নের আগমুহূর্তে উড়োজাহাজের সঙ্গে কুকুরের ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে ফ্লাইটি ছাড়তে এক ঘণ্টা দেরি হয়।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ঢাকাগামী বেসরকারি এয়ার এস্ট্রার উড়োজাহাজটিতে যাত্রী ছিলেন ৭২ জন। ধাক্কা লাগার ঘটনার কুকুরটি মারা যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও নিরাপত্তকর্মীরা মৃত কুকুরটি সরিয়ে নেয়। রাত আটটার দিকে উড়োজাহাজটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
উড়োজাহাজের একজন যাত্রী জানান, সন্ধ্যা সাতটার দিকে যাত্রীরা বিমানে ওঠেন। এরপর উড়োজাহাজটি টার্মিনাল থেকে রানওয়ের দিকে যেতে থাকে। উড্ডয়নের আগমুহূর্তে উড়োজাহাজের সঙ্গে কিছু একটার ধাক্কা অনুভব করেন তিনি। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে উড়োজাহাজটি থামান পাইলট।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ঘটনার পর পাইলটসহ নিরাপত্তাকর্মীরা অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেন, কুকুরের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে বিমানের। এরপর ফ্লাইটটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর যান্ত্রিক ত্রুটি না পেয়ে প্রায় এক ঘণ্টা পর উড়োজাহাজটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মর্তুজা বলেন, উড়োজাহাজের ধাক্কায় কুকুরটি মারা গেছে। তবে উড়োজাহাজের তেমন ক্ষতি হয়নি। যাত্রীরাও নিরাপদে ছিলেন। কুকুরটি সরিয়ে উজোজাহাজটি নিরাপদে উড্ডয়ন করে এবং স্বাভাবিক গতিতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
গোলাম মর্তুজা বলেন, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রানওয়ের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে রানওয়ের উত্তর পাশের কিছু অংশে অবকাঠাগত উন্নয়নকাজ বাকি আছে। বৃষ্টির কারণে কাজগুলো শেষ করা যাচ্ছে না। দিনের বেলায় উত্তরাংশের খোলা এলাকা দিয়ে কুকুর ঢোকার সুযোগ নেই। তবে সন্ধ্যার পর রানওয়েকে কিছু কুকুর দেখা যায়। কম আলোতে রানওয়েতে কুকুর ঠিকমতো দেখা যায় না।