প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারীকে যোগ্য জায়গায় নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতি দেওয়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ। সে ক্ষেত্রে যোগ্য পদে যোগ্য ব্যক্তিকেই পদায়ন করা উচিত, যাতে কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন হয়। অতীতে বিভিন্ন সরকারের আমলে যোগ্য ব্যক্তিরা নিয়োগ–পদায়ন পাননি রাজনৈতিক চাপ ও তদবিরের কারণে।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই ধারার অবসান হবে বলেই সবাই আশা করেছিলেন। অথচ গত পাঁচ মাসের অভিজ্ঞদতা মোটেই সুখকর নয়। বিভিন্ন মহলের চাপ ও তদবিরে সরকারকে বারবার সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়েছে, যা জনপ্রশাসনে একধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে। দেরিতে হলেও সরকার সমস্যাটি উপলব্ধি করেছে। এ জন্য তারা ধন্যবাদ পেতে পারে। কিন্তু প্রতিকার হিসেবে প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ–বদলির ক্ষেত্রে যে তিনজন উপদেষ্টার নেতৃত্বে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে তিনজন উপদেষ্টার নেতৃত্বে। তিন কমিটির নেতৃত্ব দেবেন যথাক্রমে সালেহউদ্দিন আহমেদ (প্রশাসন), জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (পুলিশ) ও মো.

তৌহিদ হোসেন (পররাষ্ট্র)। এসব কমিটির সংশ্লিষ্ট স্তরের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার কথা।

এর মাধ্যমে এটাও প্রমাণিত হলো যে নিয়োগ–পদায়নের ক্ষেত্রে যে প্রশাসনিক কাঠামো আছে, সেটা কাজ করছে না। গত কয়েক মাস পদায়ন–নিয়োগ নিয়ে সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের প্রশাসনে বেশ কিছু অঘটনও ঘটেছে। দ্বিতীয়ত উপদেষ্টাদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির কাজটিও সহজসাধ্য নয়। প্রতিটি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার আগে তাঁদের পুরো তালিকা যাচাই–বাছাই করতে হবে। কিন্তু প্রশাসনের কাজ চালানোর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই নিয়োগ–পদায়নে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রধান ছাড়াও কমিটিতে একাধিক উপদেষ্টাকে যুক্ত করা হয়েছে। নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের কাজের পর তাঁরা কতটা সময় দিতে পারবেন, সেটাও প্রশ্ন।

শুরু থেকে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়মনীতি মেনে জনপ্রশাসনের পদায়ন ও নিয়োগ দিলে হয়তো পরিস্থিতি এতটা নাজুক হতো না। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করলে জনপ্রশাসনে অস্থিরতার মাত্রাটি পরিষ্কার হবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বদলির ফাইল দুবার পরিবর্তন হয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর প্রথমে তাঁকে জীবন বীমা করপোরেশনে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে বদলি করা হয়। ৬ জানুয়ারি আবার জানানো হয়, তাঁকে বদলি হতে হবে না, আগের কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর ৯ জানুয়ারি তাঁকে আবার অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) পরিচালক পদে বদলি করা হয়। প্রায় অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের ক্ষেত্রেও।

জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে প্রশাসনের ওপর এত চাপ তৈরি হয়নি। গত ১৫ বছরে ব্যাপক দলীয়করণ, মেধা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের কারণে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে নিয়োগ–বদলি ও পদায়নের যে কাঠামো আছে, সেটিকে পুরোপুরি কার্যকর করা দরকার। কিন্তু সরকার সেটি না করে উপদেষ্টা কমিটি গঠনের মাধ্যমে নিজেদের দায় অনেকটা অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।

এ মুহূর্তে যদি বাস্তবতা এমন হয় যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাহস নেই চাপও উপেক্ষা করার; সে ক্ষেত্রে উপদেষ্টা কমিটি সাময়িক শুশ্রূষা হতে পারে। কিন্তু স্থায়ী সমাধান নয়। প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে শৃঙ্খলাটি কেন ভেঙে পড়ল, সেই কারণও খুঁজে বের করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কমিটি যাতে সব ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সক্রিয় সহযোগিতা ও সমর্থন প্রয়োজন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা 

সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ