মাগুরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান রাব্বি (৩৪) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ফরহাদ হোসেন (২২) নিহতের ঘটনায় হওয়া দুটি হত্যা মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। সোমবার বিকেলে খুলনার ফুলতলা থানার শিকিরহাট কয়লাঘাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার এড়াতে রাকিব জাহাজে চাকরি নিয়েছিলেন। পুলিশ তাকে মেহেদী হাসান রাব্বি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। 

গ্রেপ্তার রাকিব শিকদার নিষিদ্ধসংগঠন ছাত্রলীগের মাগুরা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক। মাগুরা পৌরসভার বরুনাতৈল গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে তিনি। তিনি ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান রাব্বি ও ফরহাদ হোসেন হত্যা মামলার ১২ নম্বর আসামি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) কাজী এহসানুল হক আজ মঙ্গলবার জানান, রাকিব নামের ওই আসামি ঘটনার পরপরই আত্মগোপনে চলে যান। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি জাহাজে চাকরি নেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার ঘাটে নোঙর করা একটি জাহাজ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠান। 

মেহেদী হাসান জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি মাগুরা পৌরসভার বরুনাতৈল গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দিনের ছেলে। ৪ আগস্ট মাগুরা শহরের ঢাকা রোড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি নিহত হন।

পুলিশ সূত্র জানায়, ছাত্রদল নেতা মেহেদী নিহতের ঘটনায় ১৩ আগস্ট তার ভাই ইউনুস আলী বাদি হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় আসামি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর, বীরেন শিকদারসহ ১৩ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। এই মামলার অজ্ঞাতপরিচয়ে আসামি করা হয় ১৫০-২০০ জনকে।

পুলিশ সূত্র আরও জানা যায়, ৪ আগস্ট মেহেদী হাসান নিহতের দেড় ঘণ্টা পর একই জায়গায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন। তিনি শ্রীপুর উপজেলার রায়নগর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে। এ ঘটনায় তার পরিবার কোনো মামলা করেনি। তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২১ আগস্ট সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন সদর উপজেলার বিরপুর গ্রামের মো.

জামাল হোসেন। মামলায় মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর, মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারসহ ৬৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারে বাদি উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন তার সামনেই আসামিদের ছোড়া গুলিতে ফরহাদ নিহত হয়েছেন।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ