নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার একটি পুকুর থেকে সাবেক এক মাদারাসা শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে, তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ওই শিক্ষকের মৃত্যুর কোনো কারণ জানাতে পারেনি।  

মঙ্গলবার (২১জানুয়ারি) উপজেলার চাটখিল পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সুন্দরপুর এলাকার গৌতম লৌদের বাড়ির পুকুর থেকে মরদেহটি উদ্ধার হয় বলে জানান চাটখিল থানার ওসি ফিরোজ উদ্দিন চৌধুরী।  

মারা যাওয়া আবু বক্কর ছিদ্দিক ওরফে ছিদ্দিক উল্যাহ মাস্টার (৮০) চাটখিল পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেহপুর গ্রামের মৃত মুন্সি আব্দুর রহমানের ছেলে। তিনি স্থানীয় আলীয়া মাদারাসার সাবেক শিক্ষক ছিলেন।  

আরো পড়ুন:

কিশোরগঞ্জের ২ উপজেলায় প্রার্থী আছে, প্রাথমিকে পদ খালি নেই

জাবিতে অবসরে সরকারি আইন বলবত হবে: উপাচার্য 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছিদ্দিক মাস্টার গত ১৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে চাটখিল বাজারে যান। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা তাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে গত ১৯ জানুয়ারি বিকেলে চাটখিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

আজ পৌরসভার সুন্দরপুর এলাকার গৌতম লদের বাড়ির পুকুরে কিছু মানুষ জাল দিয়ে মাছ ধরতে যান। তখন তারা ছিদ্দিক মাস্টারের মরদেহ পুকুরে ভাসতে দেখেন। তাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।  

ওসি ফিরোজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “নিহতের বাম চোখের ওপরে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কিসের আঘাত এই বিষয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার জন্য মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/সুজন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মরদ হ মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ