‘শতভাগের বেশি’ দেওয়া জ্যোতির চোখ সিরিজ জয়ে
Published: 22nd, January 2025 GMT
সিরিজ জিতে সরাসরি বিশ্বকাপে নাম লেখানোর মিশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। তবে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১৯৮ রানের পুঁজি ডিফেন্ড করতে গিয়ে রীতিমত উড়ে গিয়েছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রথমে ব্যাট করা নিগার সুলতানা জ্যোতির দলের পুঁজি এল সাকুল্যে ১৮৪, প্রথম ওয়াডের চেয়ে আরও ১৪ রান কম। তবে দুইশোর নিচে পুঁজি নিয়েও বাংলাদেশ পেয়েছে ঐতিহাসিক জয়। এতে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার আশাও টিকে রয়েছে। সেই অর্জনের দিকেই এখন চোখ বাংলাদেশ কাপ্তান জ্যোতির।
আগের ম্যাচের চেয়ে ১৪ রানের কম পুঁজির কারনে, মনোবলে চরম চোট লাগার কথা ছিল মেয়েদের। তবে বাংলাদেশ দলের মেয়েদের এদিন দারুণ উজ্জীবিত মনে হলো। দলের এমন মানসিকতা ও বোলার-ফিল্ডারদের ‘শতভাগের বেশি’ প্রচেষ্টায় উচ্ছ্বসিত অধিনায়ক নিগার সুলতানা।
সেন্ট কিটসে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৮৪ রানকে যথেষ্ট প্রমাণ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটারদের উপর রীতিমত কামান দাগ করেছিল বাংলাদেশ। তাতেই স্বাগতিকরা মুখ থুবড়ে পড়ে ১২৪ রানে। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের প্রথম জয়। ৬০ রানের জয়ে এখনও সামনের বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার আশা জিইয়ে রেখেছেন জ্যোতিরা।
আরো পড়ুন:
নিগার সুলতানার শখ ও স্বপ্নের উদ্যোগ ‘অনুমেঘা’
ম্যাচ শেষে বিসিবির ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের অধিনায়ক কথা বলেন। সেখানে জ্যোতি বলেন তার বোলার এবং ফিল্ডাররা ‘শতভাগের বেশি’ দেওয়ার ফলেই এই জয় এসেছে, “প্রথমত, আমি মনে করি যে, দলের বিশ্বাস ছিল। যদিও রানটা অনেক কম ছিল। এসব উইকেটে দুইশর বেশি রান না করলে বোলারদের জন্য কাজটা অনেক কঠিন। তবে আমরা যখন মাঠে নামি, এর আগেই বলছিলাম যে, সবাই যেন জয়ের বিশ্বাস রাখি। কারণ, আমরা যদি জায়গায় বল রাখতে পারি, পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো উইকেট নিতে পারি, তাহলে (জেতা) সম্ভব।”
“প্রতিটি বোলার, প্রতিটি ফিল্ডার যেভাবে ১১০ ভাগ দিয়েছে এবং চেষ্টা করেছে, সেটা অসাধারণ ছিল। সবার চেষ্টায় এরকম একটা জয় সম্ভব হয়েছে।”- জ্যোতি যোগ করেন।
এদিন টস জিতে আগে বোলিং করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাট করতে গিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে দল। পরে ১২০ বলে ৬৮ রানের ইনিংস খেলে দলকে একাই টানেন জ্যোতি। জানালেন নিজে তৃপ্তির কথা, “আমাদের পরিকল্পনা ছিল আগে বল করার। টসে হেরে যখন ব্যাটিংয়ে গেছি, যেহেতু ভালো ট্র্যাক, আমাদের লক্ষ্য ছিল দুইশর বেশি রান। সেটা আমরা পারিনি। আমি চেষ্টা করেছি, নিজের ধরনের বাইরে গিয়ে অনেক বেশি বল খেলতে এবং থিতু হতে। এখন দিনশেষে মনে হচ্ছে, রানগুলি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল দলের জন্য এবং দলের জন্য অবদান রাখতে পেরে আমি অনেক বেশি খুশি।”
আগামী শনিবার (২৫ জানুয়ারি, ২০২৫) শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে দুটি লক্ষ্য। ম্যাচ জিততে পারলে দেশের বাইরে প্রথমবার সিরিজ জেতার পাশাপাশি সরাসরি বিশ্বকাপ খেলাও নিশ্চিত হয়ে যাবে। তবে বিশ্বকাপ খেলার সমীকরণ সরিয়ে সিরিজ জেতার মাইলফলকে মন দিয়ে চাপমুক্ত থাকার মন্ত্র জ্যোতির, “সমীকরণের চিন্তা এখনও করছি না। প্রথম ম্যাচ হারার এক দিন পরই দল এভাবে ঘুরে দাঁড়াল, এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের অনেক বেশি কাজে লাগবে। দুটি পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মোমেন্টাম সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দল সেটা পেয়েছে। শেষ ম্যাচে আমাদের চেষ্টা এটাই থাকবে। সিরিজ জয়ের একটা চেষ্টা থাকবে।”
“দেশের বাইরে আমরা কখনও সিরিজ জিততে পারিনি। অর্জন করতে পারলে আমাদের দলের জন্য অনেক বড় একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে।”
এই জায়গায় তথ্যের কিছুটা হেরফের আছে। দেশের বাইরে একটি সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছে। বাঘিনীরা ২০২১ সালে জিম্বাবুয়েকে তিন ম্যাচ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে তাদের মাঠেই।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ
১৮৮৬ সালের ১ মেÑএকটি দিন, একটি দাবি, আর হাজারো শ্রমিকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিহাসে রক্তাক্ত দাগ কেটে দিয়েছিল যে মুহূর্ত, তা আজ বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। তখনকার দাবিটি ছিল স্রেফ ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। কিন্তু আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে শ্রমিকের দাবি শুধু সময়
নয়Ñমর্যাদা, সুরক্ষা ও ন্যায্যতার প্রশ্নও।
এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য “শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এদেশ নতুন করে”Ñএ যেন সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই বার্তা কেবল প্রাসঙ্গিক নয়, বরং তা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের জন্য এক যৌথ দিকনির্দেশনা।
বাংলাদেশের শ্রমচিত্র ও বাস্তবতা
বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর। তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ, কৃষি ও নির্মাণ খাতে আরও কয়েক কোটি মানুষ নিয়োজিত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে শ্রমনির্ভর খাত থেকে। কিন্তু যাঁরা এই অর্থনীতির ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছেন, সেই শ্রমিকরা কি পেয়েছেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা?
দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও বহু শ্রমিক পান না ন্যূনতম মজুরি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা কিংবা ছুটি সংক্রান্ত মৌলিক সুবিধা। নারী শ্রমিকদের পরিস্থিতি আরও জটিলÑযত্রতত্র হয়রানি, মাতৃত্বকালীন সুবিধার অভাব, কিংবা নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে না তোলার ফলে এই খাতেও স্থিতিশীলতা আসছে না।
মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক: দ্বন্দ্ব নয়, দরকার সহমর্মিতা
এক সময় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক মানেই ছিল দ্বন্দ্ব, ধর্মঘট ও হুমকি। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা বলছেÑসহযোগিতাই টেকসই উৎপাদনের চাবিকাঠি। মালিকপক্ষ যখন শ্রমিককে কেবল “ব্যয়” হিসেবে না দেখে “সম্পদ” হিসেবে বিবেচনা করেন, তখন প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। একইভাবে শ্রমিকও যদি বুঝেন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন মানে তার কর্মস্থলের স্থায়িত্বÑতাহলে দুপক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের
ভিত্তি গড়ে ওঠে।
এই বিশ্বাস গঠনের জন্য প্রয়োজন তিনটি স্তম্ভ:
নীতিগত স্বচ্ছতা Ñ ন্যায্য মজুরি, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা দায়িত্বশীল মালিকপক্ষ Ñ কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিতে উদ্যোগ সচেতন শ্রমিকশ্রেণি Ñ অধিকার আদায়ের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের মানসিকতা
নীতি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও সংশোধিত ২০১৮ সংস্করণ অনুযায়ী শ্রমিকের অধিকার স্বীকৃত হলেও বাস্তবায়নের জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক খাতে (যেমন কৃষি, গৃহপরিচারিকা, গিগ-ওয়ার্কার) শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি এখনও প্রায় উপেক্ষিত।
এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা বীমা, এবং পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার হওয়া জরুরি। সরকার শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করলেও তা অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
এই প্রেক্ষাপটে ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে’ দেশ গড়ার বার্তাটি যেন শুধুই স্লোগানে সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং এটি হোক রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আর্থিক বিনিয়োগ ও মানবিক বিবেচনার এক বাস্তব প্ল্যাটফর্ম।
প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও নতুন শ্রম বাস্তবতা
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে শ্রমবাজার দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন ও গিগ-ইকোনমি অনেক চাকরি বিলুপ্ত করছে, আবার নতুন দক্ষতা চাচ্ছে। বাংলাদেশ যদি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়, তাহলে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, পুনঃস্কিলিং এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এখানে মালিক ও রাষ্ট্র উভয়ের উচিত হবে, শ্রমিককে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে বিনিয়োগ করা, কারণ দক্ষ শ্রমিক ছাড়া কোনো শিল্পই টিকে থাকে না।
মে দিবস: উৎসব নয়, দায়বদ্ধতার প্রতীক
মে দিবস কেবল লাল পতাকা হাতে শোভাযাত্রার দিন নয়, এটি আমাদের মানবিক চেতনার প্রতিফলন। যে শ্রমিক ঘাম ঝরিয়ে ভবন গড়ে, কৃষি জমি চষে, রপ্তানি পণ্য তৈরি করেÑতার জন্য আমাদের উচিত মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা।
এবছর, আসুন আমরা সবাই রাষ্ট্র, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকÑএকটি মানবিক, উৎপাদনশীল ও শীদারিত্বভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাই। শ্রমিকের হাতে গড়া এই বাংলাদেশ হোক তার জন্যই গর্বের জায়গা।
লেখক পরিচিতি:
মীযানুর রহমান
সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক
মোবাইলঃ ০১৭৫৪১০৯০৭২
যোগাযোগ: : [email protected]