সিরিজ জিতে সরাসরি বিশ্বকাপে নাম লেখানোর মিশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। তবে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১৯৮ রানের পুঁজি ডিফেন্ড করতে গিয়ে রীতিমত উড়ে গিয়েছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রথমে ব্যাট করা নিগার সুলতানা জ্যোতির দলের পুঁজি এল সাকুল্যে ১৮৪, প্রথম ওয়াডের চেয়ে আরও ১৪ রান কম। তবে দুইশোর নিচে পুঁজি নিয়েও বাংলাদেশ পেয়েছে ঐতিহাসিক জয়। এতে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার আশাও টিকে রয়েছে। সেই অর্জনের দিকেই এখন চোখ বাংলাদেশ কাপ্তান জ্যোতির।

আগের ম্যাচের চেয়ে ১৪ রানের কম পুঁজির কারনে, মনোবলে চরম চোট লাগার কথা ছিল মেয়েদের। তবে বাংলাদেশ দলের মেয়েদের এদিন দারুণ উজ্জীবিত মনে হলো। দলের এমন মানসিকতা ও বোলার-ফিল্ডারদের ‘শতভাগের বেশি’ প্রচেষ্টায় উচ্ছ্বসিত অধিনায়ক নিগার সুলতানা।

সেন্ট কিটসে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৮৪ রানকে যথেষ্ট প্রমাণ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটারদের উপর রীতিমত কামান দাগ করেছিল বাংলাদেশ। তাতেই স্বাগতিকরা মুখ থুবড়ে পড়ে ১২৪ রানে। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের প্রথম জয়। ৬০ রানের জয়ে এখনও সামনের বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার আশা জিইয়ে রেখেছেন জ্যোতিরা।

আরো পড়ুন:

নিগার সুলতানার শখ ও স্বপ্নের উদ্যোগ ‘অনুমেঘা’

ম্যাচ শেষে বিসিবির ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের অধিনায়ক কথা বলেন। সেখানে জ্যোতি বলেন তার বোলার এবং ফিল্ডাররা ‘শতভাগের বেশি’ দেওয়ার ফলেই এই জয় এসেছে, “প্রথমত, আমি মনে করি যে, দলের বিশ্বাস ছিল। যদিও রানটা অনেক কম ছিল। এসব উইকেটে দুইশর বেশি রান না করলে বোলারদের জন্য কাজটা অনেক কঠিন। তবে আমরা যখন মাঠে নামি, এর আগেই বলছিলাম যে, সবাই যেন জয়ের বিশ্বাস রাখি। কারণ, আমরা যদি জায়গায় বল রাখতে পারি, পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো উইকেট নিতে পারি, তাহলে (জেতা) সম্ভব।”

“প্রতিটি বোলার, প্রতিটি ফিল্ডার যেভাবে ১১০ ভাগ দিয়েছে এবং চেষ্টা করেছে, সেটা অসাধারণ ছিল। সবার চেষ্টায় এরকম একটা জয় সম্ভব হয়েছে।”- জ্যোতি যোগ করেন।

এদিন টস জিতে আগে বোলিং করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাট করতে গিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে দল। পরে  ১২০ বলে ৬৮ রানের ইনিংস খেলে দলকে একাই টানেন জ্যোতি। জানালেন নিজে তৃপ্তির কথা,  “আমাদের পরিকল্পনা ছিল আগে বল করার। টসে হেরে যখন ব্যাটিংয়ে গেছি, যেহেতু ভালো ট্র্যাক, আমাদের লক্ষ্য ছিল দুইশর বেশি রান। সেটা আমরা পারিনি। আমি চেষ্টা করেছি, নিজের ধরনের বাইরে গিয়ে অনেক বেশি বল খেলতে এবং থিতু হতে। এখন দিনশেষে মনে হচ্ছে, রানগুলি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল দলের জন্য এবং দলের জন্য অবদান রাখতে পেরে আমি অনেক বেশি খুশি।”

আগামী শনিবার (২৫ জানুয়ারি, ২০২৫) শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে দুটি লক্ষ্য। ম্যাচ জিততে পারলে দেশের বাইরে প্রথমবার সিরিজ জেতার পাশাপাশি সরাসরি বিশ্বকাপ খেলাও নিশ্চিত হয়ে যাবে। তবে বিশ্বকাপ খেলার সমীকরণ সরিয়ে সিরিজ জেতার মাইলফলকে মন দিয়ে চাপমুক্ত থাকার মন্ত্র জ্যোতির, “সমীকরণের চিন্তা এখনও করছি না। প্রথম ম্যাচ হারার এক দিন পরই দল এভাবে ঘুরে দাঁড়াল, এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের অনেক বেশি কাজে লাগবে। দুটি পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মোমেন্টাম সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দল সেটা পেয়েছে। শেষ ম্যাচে আমাদের চেষ্টা এটাই থাকবে। সিরিজ জয়ের একটা চেষ্টা থাকবে।”

“দেশের বাইরে আমরা কখনও সিরিজ জিততে পারিনি। অর্জন করতে পারলে আমাদের দলের জন্য অনেক বড় একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে।”

এই জায়গায় তথ্যের কিছুটা হেরফের আছে। দেশের বাইরে একটি সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছে। বাঘিনীরা ২০২১ সালে জিম্বাবুয়েকে তিন ম্যাচ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে তাদের মাঠেই।  

ঢাকা/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও