রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ হোসাইন মিথুনকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে তার সমর্থকরা। গতকাল শুক্রবার ভোরের এ ঘটনায় নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনারসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী হত্যাচেষ্টার মামলায় নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতা রাসেলের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মিথুনকে ধরা হয়। ভোর ৪টার দিকে বাধার মুখে পড়তে হবে বলে ধারণা করেনি পুলিশ। তবে নিউমার্কেট থানার সামনেই অবস্থান করছিল মিথুনের সমর্থকরা। তারা পুলিশের গাড়ি থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় তাদের মারধর, ধাক্কাধাক্কি ও ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশ সদস্যরা আহত হন। পরে থানা থেকে বাড়তি পুলিশ গিয়ে ছয় হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলো– বশির ইসলাম, মোহাম্মদ হাসান, মোহাম্মদ ইমন, মাসুম মাহমুদ, মোহাম্মদ আলামিন ও আকবর আলী।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম সমকালকে বলেন, হামলাকারীদের নামে আলাদা মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে বশিরের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বাকি পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে ১০ জানুয়ারি এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে দোকান মালিক সমিতির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হককে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ‘ইমন গ্রুপের’ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় মামলা করেন সমিতির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল হাসান। সেদিন তাঁর ওপরও হামলা চালানো হয়।

তদন্ত সূত্র জানায়, ছাত্রদল নেতা রাসেল জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, তাঁকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দেন মিথুন। তিনি ইমন গ্রুপের হোতা সানজিদুল হাসান ইমনের হয়ে ধানমন্ডি এলাকায় চাঁদাবাজি করেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজধানীর পূর্বাচল থেকে মিথুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার ঘটনায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মিথুনকে বহনকারী পুলিশের গাড়ি নিউমার্কেট থানায় ঢোকার সময় আসামির সমর্থকদের বাধার মুখে পড়ে পুলিশ। তখন পুলিশ সদস্যরা সবাইকে সরে যেতে বললেও তারা নির্দেশ অমান্য করে। এ সময় লাঠি, রড ও চাপাতি নিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। 

হামলায় নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার তারিক লতিফ, এসআই আরব আলী, এসআই ফিরোজ আহমেদ, এসআই খন্দকার মেসবাহসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন।

এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সহকারী কমিশনার গাড়ি থেকে নেমে মিথুনের সমর্থকদের সরে যেতে অনুরোধ করেন। সরে না যাওয়ায় তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় পুলিশের। এক পর্যায়ে মিথুনকে নিয়ে পুলিশ থানার ভেতরে চলে যায়। থানার বাইরে থেকে পুলিশকে উদ্দেশ করে হুমকি দেয় কয়েকজন।

এর আগে ব্যবসায়ী এহতেশামুল হকের ওপর হামলার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে চার-পাঁচজন এহতেশামুলকে চাপাতি দিয়ে কোপাচ্ছে। পাশে দাঁড়িয়ে ছিল আরও ছয়-সাতজন। সবাই ছিল মুখোশ পরা। চাপাতির আঘাতে এহতেশামুল রাস্তায় লুটিয়ে পড়লেও তাঁকে কোপানো হয়।

মিথুনসহ দুই নেতা বহিষ্কার
ছাত্রদলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন মিথুন ও সহ-সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান রাসেলকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো। অধিকতর তদন্ত করে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির গতকাল এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। সেই সঙ্গে তারা ছাত্রদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে বহিষ্কৃত দুই নেতার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল প ল শ সদস য ছ ত রদল ন ত র ছ ত রদল ব যবস র ওপর র সমর

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার

দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।

দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্‌রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’

তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’

আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫

মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্‌যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা

সম্পর্কিত নিবন্ধ