রাজনীতি, অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষায় সম্পর্ক জোরদার করতে রাজি বাংলাদেশ-কুয়েত
Published: 19th, October 2025 GMT
বাংলাদেশ ও কুয়েত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা, শ্রম, উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা গভীর করতে সম্মত হয়েছে। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও জোরদার ও বহুমাত্রিক সহযোগিতায় রূপ দিতে দুই দেশের প্রথম রাজনৈতিক পরামর্শক সভায় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে ঐকমত্য হয়েছে।
রোববার বাংলাদেশ ও কুয়েতের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের রাজনৈতিক পরামর্শ সভা শেষে সন্ধ্যায় প্রচারিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সকালে অনুষ্ঠিত ওই সভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের এবং কুয়েতের এশীয়–বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত সামিহ ইসা জোহর হায়াত তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
এদিকে ওই বৈঠকের পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.
দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক পরামর্শ সভার উল্লেখ করে সামিহ ইসা বলেন, বৈঠকে খাদ্যনিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচি, সামরিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশি শ্রমিকদের কর্মসংস্থান—এসব খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণে ঐকমত্য হয়েছে। শিগগিরই একাধিক নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামিহ ইসা জোহর হায়াত বলেন, সকালে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধানসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এরপর দুই দেশের প্রতিনিধিরা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন। পরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ আলীর একটি চিঠি হস্তান্তর করেছেন। চিঠিতে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামিহ ইসা আরও বলেন, ‘আমরা আবারও ১৯৯০ সালে কুয়েতে দখলদারত্বের সময় বাংলাদেশের অকুণ্ঠ সমর্থনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। তখন থেকে পাঁচ হাজারের বেশি বাংলাদেশি সেনা আমাদের পাশে থেকে মাইন অপসারণ ও মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছেন।’
বৈঠকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও ফ্লাইট বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানান কুয়েতের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমানে কুয়েত এয়ারওয়েজ সপ্তাহে ৭টি, আল–জাজিরা এয়ারওয়েজ ১৪টি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বাংলাদেশে আরও নতুন রুট ও ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে মতৈক্য হয়েছে, যা খুব শিগগির বাস্তবায়িত হবে।
সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামিহ ইসা বলেন, শ্রম সহযোগিতা নবায়নের বিষয়ে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে, যা ভবিষ্যতে উচ্চপর্যায়ের সফরের সময় সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যৌথ বিবৃতিবাংলাদেশ ও কুয়েত প্রথম রাজনৈতিক পরামর্শ সভায় প্রতি দুই বছর পরপর পর্যায়ক্রমে এ বৈঠক ঢাকা ও কুয়েত সিটিতে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর ও বিনিময় বাড়ানোর বিষয়েও সম্মতি হয়।
বৈঠকে দুই পক্ষ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পর্যালোচনা করে। ‘অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠনের’ অধীন বাংলাদেশের অবদানের কথা উল্লেখ এবং প্রশিক্ষণ, দুর্যোগ মোকাবিলা ও অনলাইন নিরাপত্তায় সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়। দুই পক্ষই ‘কুয়েত ভিশন ২০৩৫’–এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জনশক্তি সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং আলোচনায় থাকা সমঝোতা স্মারকগুলো চূড়ান্ত করার বিষয়ে পর্যালোচনা করে।
জ্বালানি, অবকাঠামো, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এবং হালাল খাদ্য খাতে উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়। দুই দেশ যৌথ বাণিজ্য কমিটি পুনরায় সক্রিয় করার পাশাপাশি ২০২৬ সালে বাংলাদেশ-কুয়েত ব্যবসায়ী ফোরাম আয়োজনে রাজি হয়েছে। বৈঠকে কুয়েত ফান্ড (কেএফএইডি) সহায়তার ওপর সন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং নবায়নযোগ্য শক্তি, জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো ও বিমান যোগাযোগে নতুন সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ খুঁজতে সম্মত হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র র পরর ষ ট র সহয গ ত সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
অনুষ্ঠানে থাকলেও জুলাই সনদে সই করেনি গণফোরাম
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও তাতে সই করেনি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন দল গণফোরাম।
আজ শুক্রবার বিকেলে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘সংবিধানের ১৫০–এর ২ অনুচ্ছেদ তারা বলেছে বিলুপ্ত করা হবে। এবং পঞ্চম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম তফসিলে রাখা হবে না। আমরা বলেছিলাম যে এটা যদি সংশোধন করে তাহলে এবং প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্টস যদি এটা রাখে তাহলে আমরা স্বাক্ষর করব। আমাদের আশ্বস্ত করেছিল যে এটা সংশোধন হবে। কিন্তু অনুষ্ঠানে গিয়ে চূড়ান্ত কপিটা আমরা পাইনি। শুধু স্বাক্ষরের কপিটা দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য আমরা স্বাক্ষর থেকে বিরত ছিলাম।’
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শুক্রবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে রাজনৈতিক দলগুলো। বৃষ্টি মাথায় এই অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৫টি দল যোগ দেয়। তাদের মধ্যে গণফোরাম সনদে সই করেনি। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং চারটি বাম দল অনুষ্ঠানে যোগই দেয়নি, সইও করেনি।
অনুষ্ঠানে সনদে সই না করলেও পরে সই করার ইঙ্গিত দিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টির পরে আমরা চূড়ান্ত কপির একটা বই পেয়েছি এবং তারা (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) আমাদের বলেছে যে এটা সংশোধন করা হয়েছে। এখন যেহেতু তারা এটা সংশোধন করেছে, আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরে স্বাক্ষর করব।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছিলেন, পরবর্তী সময়েও সনদে সই করার সুযোগ রয়েছে।
গণফোরাম নেতা মিজানুর বলেন, ‘আমাদের কিছু নোট অব ডিসেন্ট আছে। যেমন আমাদের সংবিধানের চার মূলনীতি—বাঙালি জাতীয়তাবাদ...এ রকম অনেকগুলো বিষয় আছে। এটাও পর্যালোচনা করছি এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ইতিবাচকভাবে আমরা নিচ্ছি।’