জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য মো. জোবায়েদ হোসেনকে হত্যার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদল। একই ঘটনায় রাজধানীর পুরান ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বর, হলপাড়া ঘুরে মিছিল নিয়ে আবার টিএসসির ডাস চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শাখা ছাত্রদল।

সমাবেশে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির সাহসী সহযোদ্ধা জোবায়েদ হোসেনকে দুষ্কৃতকারীরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আগস্ট-পরবর্তী সময়ের অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তার চাদরে দেশকে ঢেকে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। আজ দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা খুন, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।

গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘আমি শুধু দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই, জোবায়েদ হোসেনের হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে হত্যাকারীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল বিক্ষোভ মিছিল করেই থেমে থাকবে না, বরং আমাদের বিক্ষোভ-সমাবেশকে আরও বেগবান করার জন্য আমরা আমাদের মতো করে কর্মসূচি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করব।’

কবি জসিমউদ্‌দীন হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক শেখ তানভীর বারী হামীম বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত দেখেছি, সাম্য (শাহরিয়ার আলম সাম্য) হত্যার বিচার পাইনি। পারভেজ হত্যাকাণ্ডের বিচারও হয়নি। সুতরাং আমরা আশঙ্কা করছি, জুবায়েদ হত্যাকাণ্ডের বিচারও হয়তো একইভাবে আড়ালে হারিয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অতি দ্রুত তাঁদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।’

এদিকে জোবায়েদ হত্যার প্রতিবাদে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার একটি বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর রাত ১১টার দিকে জোবায়েদ হত্যার বিচারের দাবিতে তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করেন তাঁরা।

জোবায়েদ হোসেনকে হত্যার প্রতিবাদে আরমানিটোলার মাহুতটুলীতে নুর বক্স লেনের ১৫ নম্বর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল হত য ক

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে ইতিহাস মুছে ফেলার রাজনীতি: এবার টার্গেট তাজমহল

মাত্র ১৭ জন অশ্বারোহী নিয়ে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি ১২০৪ সালে লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করে বাংলা জয় করেন। স্কুলে আমার পাশে বসত আমার বন্ধু নারায়ণ। আমার মনে আছে ইতিহাস শিক্ষক এই বিষয়টা যখন পড়াচ্ছিলেন, নারায়ণ খুব মন খারাপ করেছিল।

ইতিহাসের ক্লাসে আমাদের আরেক দিন পড়ানো হলো পলাশীর যুদ্ধ। নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাঁর বিরাট বাহিনী নিয়েও হেরে গেলেন রবার্ট ক্লাইভের অল্প কয়জন সৈন্যের কাছে, অস্তমিত হলো বাংলার স্বধীনতা। এবার আমি ও নারায়ণ দুজনেই ক্লাসে খুব মন খারাপ করলাম।

ক্লাস থেকে বের হয়ে আবার আমরা স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলা করলাম। কী আর আমরা করতে পারতাম? নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে তো আর ফিরিয়ে আনা যেত না!

ইতিহাসের এসব দুঃখবোধ সবার থাকবে, যার যেমন আবেগ। কিন্তু ইতিহাসের ঘড়ি ও ঘটনা তো পাল্টানো যাবে না, সবাইকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে হয়। পুরোনো ইতিহাসকে টেনে এনে নিজের মনে ও অন্যদের মনে জ্বালা সৃষ্টি করা কোনো কাজের কাজ নয়। আর সমাজে প্রতিহিংসা সৃষ্টি করা তো আরও জঘন্য কাজ।

ঠিক এই জিনিসটাই হচ্ছে আজকের ভারতে। ভারতবর্ষে মুসলিম শাসন নিয়ে কিছু লোক এমনিতেই অন্তর্জ্বালায় ভুগছেন, নরেন্দ্র মোদির উত্থানের পর তাঁরা ক্রমান্বয়ে প্রতিহিংসার বারুদ ছড়াচ্ছেন। এই প্রতিহিংসা ভারতের হিন্দু উগ্র জাতীয়তাবাদীদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে মিশে ধ্বংসাত্মক আকার ধারণ করছে। ইতিহাসের প্রতিহিংসার প্রথম বড় বলি ছিল অযোধ্যার বাবরি মসজিদ, যেটাকে ভেঙে গড়া হলো রামমন্দির।

ভারতের অসাম্প্রদায়িক ও উদারপন্থী জনগণ অবশ্য সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর কার্যক্রমকে নিন্দা জানিয়ে আসছে। এমনকি গত সাধারণ নির্বাচনে রামমন্দির এলাকার সংখ্যাগুরু হিন্দু জনগণ ভোট দিয়ে বিজেপির লোকসভা প্রার্থীকে হারিয়ে জানান দেন—তারা এসব উগ্রতার বিরুদ্ধে।

লাভ হতে পারে ভারতীয় ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের এবং মোদির দল বিজেপির। তারা আশা করবে তাদের ভোটব্যাংকে যোগ হবে আরও অনেক বেশি হিন্দু ভোট। সংখ্যালঘুদের অপদস্থ করে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের ভোট বাড়ানোই এসব প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির মূল উদ্দেশ্য। তবে হিতে বিপরীতও হতে পারে, যেমন করে মোদির দল গত নির্বাচনে হারিয়েছিল রামমন্দির এলাকার লোকসভা আসনটি।

তাই বলে কি উগ্রবাদীদের দমানো যায়? তাঁরা মুসলমান বিদ্বেষ ছড়াবার জন্য নতুন নতুন কৌশল বের করা শুরু করলেন।

এইসব ‘সংশোধনবাদী ইতিহাসবিদেরা’, কেউ কেউ ‘স্থপতিবিদ’ সেজে মোগল স্থাপত্যের সমালোচনা করছেন। আবার কেউবা ‘প্রত্নতাত্ত্বিক’ সেজে কোন মসজিদের নিচে কয়টা মন্দির আছে এবং তাজমহল কোন মন্দির দখল করে গড়া হয়েছে, এসব নিয়ে ‘ইতিহাস’ গড়ছেন। এই উগ্রবাদীরা রাজনৈতিক কারণে ইতিহাসকে টেনেহিঁচড়ে অপ-ইতিহাস তৈরি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন এবং সমাজে ধর্মীয় বিভাজন ছড়াচ্ছেন।

তাঁরা এসব অপ-ইতিহাস প্রচার করতে বিভিন্ন উপায় বের করছেন এবং আরও বেশি লোককে ক্রুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে এই ইতিহাসের বিকৃতি আরও বড় আকারে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দক্ষিণপন্থী চিত্র প্রযোজক-পরিচালক ও সিনেমাকর্মীদের একটা গ্রুপ ইতিহাসকে বিকৃত করে নতুন নতুন চলচ্চিত্র তৈরি করছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন মিঠুন চক্রবর্তী, অনুপম খের ও পরেশ রাওয়ালের মতো নামকরা অভিনেতারা।

এবার কল্পকাহিনির ভিত্তিতে সিনেমা বানানো হয়েছে তাজমহলকে নিয়ে, নাম—‘দ্য তাজ স্টোরি’।

সম্পর্কিত নিবন্ধ