মামলা না করে আসামি গ্রেপ্তারের দাবি, পুলিশ বলছে চাপ সৃষ্টি
Published: 6th, February 2025 GMT
পাথরঘাটায় বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। গত মঙ্গলবার কাকচিড়া বাজারে মানববন্ধন করে এ দাবি জানান তারা। তবে পুলিশ বলছে, মামলা না করায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না তারা। মামলা না করে আসামি গ্রেপ্তারের দাবি তুলে বরং পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি ও হয়রানি করা হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে কাকচিড়া বাজারে আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাসির শিকদার। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী মো.
অভিযোগ রয়েছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে শত্রুতার জেরে কাকচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হোসেন ফুয়াদকে কুপিয়ে হাতের তিনটি আঙুল কেটে নেওয়া হয়। কাকচিড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক গোলাম মাওলার নেতৃত্বে ৭-৮ জন এই হামলা চালায়। এ ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা।
মানববন্ধনে চৌধুরী মো. ফারুক বলেন, ছাত্রলীগ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়েছে। তার পরও তারা দিন-দুপুরে বিএনপি নেতা আবুল হোসেন ফুয়াদকে কুপিয়ে জখম করেছে। তার হাতের তিনটি আঙুল কেটে নিয়েছে। এর পরও ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মী রাস্তাঘাটে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে।
এ সময় হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপি নেতা ফারুক বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার না করা হলে পাথরঘাটায় রক্তের হলিখেলা শুরু হবে। তখন আইনশৃঙ্খলার অবনতির দায় নিতে হবে প্রশাসনের।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন আবুল হোসেন আবু পহলান, কাকচিড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি স্বাধীন পহলান, যুবদলের সভাপতি মিরাজ পহলান, মোর্শেদ সিকদার, মোসাম্মাদ শাহানা বেগম, সেলিম পহলান ও ডা. মেহেদী হাসান।
অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না করার কারণ জানতে চাইলে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, ‘ঘটনার তিন দিন পার হলেও এখনও আহত ফুয়াদের পক্ষ থেকে কেউ মামলা দিতে থানায় আসেননি। মামলা না হওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত কাউকে আমরা ধরতে পারিনি।’ তাঁর অভিযোগ, বিএনপি নেতারা মামলা না দিয়ে মানববন্ধন করে শুধু পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন, যা আহত ব্যক্তিকে সহযোগিতা না করে প্রশাসনকে হয়রানি করছেন। তার পরও ফুয়াদের ওপর যারা হামলা করেছেন, তাদের আটকের ব্যাপারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মামলা না করে কর্মসূচি দিয়ে পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী মো. ফারুক বলেন, ‘ভিকটিম এখনও আইসিইউতে, এ জন্য আমাদের মামলা করতে দেরি হচ্ছে। তাঁর জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে আমরা মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছি। দু-একদিনের মধ্যেই মামলা হবে।’
হামলার অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে কাকচিড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক গোলাম মাওলার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ঘটনার পর থেকে পলাতক তারা। এ বিষয়ে তাঁর ফুফু তাসলিমা বেগম বলেন, ‘মাওলার বাবা ইউসুফ জমাদ্দার ও বিএনপি নেতা ফুয়াদ জমাদ্দারের মধ্যে টাকা ও জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ ঘটনার কয়েক দিন আগে ইউসুফ ও তাঁর ছোট ছেলেকে ফুয়াদ মারধর করেছিলেন। ওই ঘটনার জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প থরঘ ট ব এনপ র ত কর ম র ওপর ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫