সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে রক্তাক্ত বছর ২০২৪, বিশ্বে ১২৪ জন নিহত: সিপিজে
Published: 13th, February 2025 GMT
বিশ্বজুড়ে গত বছর (২০২৪) রেকর্ড সংখ্যক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এ তথ্য জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)।
গতকাল বুধবার প্রকাশিত সিপিজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব নিহতের ঘটনার প্রায় ৭০ শতাংশের পেছনে এককভাবে দায়ী ইসরায়েল।
সিপিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বের ১৮টি দেশে অন্তত ১২৪ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালে সংখ্যাটি ছিল ১০২ জন। আর ২০২২ সালে ৬৯ জন।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে সাংবাদিক আর সংবাদমাধ্যমের ওপর আঘাতের তথ্য সংরক্ষণ করছে সিপিজে। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের হিসাব রাখার পর থেকে এর আগে এক বছরে এত বেশিসংখ্যক সাংবাদিক নিহতের ঘটনা ঘটেনি।
এর আগে ২০০৭ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ১১৩ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছিল বলে জানিয়েছে সিপিজে। ওই সময় ইরাক যুদ্ধের কারণে এক বছরে এতজন সাংবাদিকের জীবন গিয়েছিল।
এদিকে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় ৮৫ জন সাংবাদিক নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে সিপিজে। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৭৮ জন।
এ বিষয়ে সিপিজের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, ‘তাদের কাছে পর্যাপ্ত কোনো তথ্য নেই। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী কখনোই সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু বানায়নি, বানাবেও না।’
আরও পড়ুনবাংলাদেশে সাংবাদিকদের সুরক্ষার আহ্বান সিপিজেসহ তিন সংস্থার২৪ আগস্ট ২০২৩সিপিজের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সুদান ও পাকিস্তানে ৬ জন করে, মেক্সিকোয় ৫ জন, মিয়ানমার, লেবানন ও ইরাকে ৩ জন করে এবং হাইতিতে ২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
সংগঠনটির হিসাবে, বিশ্বজুড়ে গত বছর ৪৩ জন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আগের বছর নিহত হয়েছিলেন ১৭ জন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে সংখ্যাটি ছিল ১২ জন।
সিপিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এক বিবৃতিতে বলেন, সংগঠনের ইতিহাসে বর্তমান সময়কে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে চলতি বছর এখন পর্যন্ত বিশ্বে অন্তত ছয়জন সাংবাদিক নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে সিপিজে।
আরও পড়ুনগাজায় আরেক সাংবাদিক নিহত, এ পর্যন্ত ১২০২৭ জানুয়ারি ২০২৪.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘রাষ্ট্রীয় শোক’ প্রত্যাখ্যান
গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন–নিপীড়ন–হয়রানি চলছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ক তখনো আটক ছিলেন ডিবি কার্যালয়ে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারি উদ্যোগে লোকদেখানো ‘রাষ্ট্রীয় শোক’ পালন করা হচ্ছিল ৩০ জুলাই। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের এই কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে সেদিন ‘মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং তা অনলাইনে প্রচারের কর্মসূচি’ পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এই কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলি ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে ২৯ জুলাই রাত (২০২৪ সাল) থেকেই ফেসবুকের প্রোফাইলে লাল রঙের ফ্রেম ব্যবহার শুরু হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, লেখক, সাংবাদিক, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানান।
ফেসবুকে অভূতপূর্ব সাড়ার পাশাপাশি নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এবং হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ৩০ জুলাই দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস ও সড়কে মিছিল করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে মুক্তি দিতে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকার করা রিটের শুনানিতে ৩০ জুলাই হাইকোর্ট মন্তব্য করেন ‘এসব মৃত্যু আমাদের সবার জন্যই দুঃখজনক’।
সেদিন দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘হত্যা, অবৈধ আটক ও নির্যাতনের বিচার চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা)। অধ্যাপক আসিফ নজরুল (বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা), টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, মানবাধিকারকর্মী
শিরীন হক, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর যে মাত্রায় বলপ্রয়োগ ও সন্ত্রাসী কায়দায় আক্রমণ করা হয়েছে, তা দেশের জনগণ ও বিশ্ববিবেককে স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করেছে।’
অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ দেওয়া ও আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ৩০ জুলাই বিবৃতি দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গণ–অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলো সম্পর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের (বর্তমানে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক) চলতি জুলাই মাসের ৬ তারিখ রাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ২৯ জুলাই (২০২৪ সাল) সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় শোক এবং কালো ব্যাজ ধারণের ঘোষণা দেওয়ার পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। নাছির উদ্দীন তাঁকে রাষ্ট্রীয় কালো ব্যাজের বিপরীতে লাল ব্যাজ ধারণের প্রস্তাব দেন। পরে মো. আবু সাদিক কায়েমকে (ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা) ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছিলেন আবদুল কাদের। সাদিকও সম্মতি দেন। নাছির উদ্দীন ও আবু সাদিকের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেই মুখে–চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা ও তা অনলাইনে প্রচার করার কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছিল।