প্রায় পাঁচ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সাইদুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আয়েশা আক্তার এ রায় দেন।

নিহত সাইদুর উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের বাহেরচর উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন উপজেলার বাহেরচর পশ্চিমপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে রাসেল মিয়া (৩০), একই গ্রামের আবদুল খালেক মিয়ার ছেলে রিপন মিয়া (৩৩) ও চর শিবপুর গ্রামের কাজল মিয়া (৫০)। এ ছাড়া প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকার করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় রিপন ও কাজল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্য আসামি রাসেল পলাতক রয়েছেন। আদালত তাঁর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, নিহত সাইদুর ও তিন আসামি রিপন, কাজল ও রাসেল একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। কাজল পেশায় রিকশাচালক এবং রিপন ও রাসেল ভাঙারি ব্যবসা করতেন। সাইদুর উপজেলার কড়ইকান্দি ফেরিঘাটে ফলের ব্যবসা করতেন। সাইদুরসহ বাকি তিন আসামি একসঙ্গে মাদক সেবনসহ জুয়া খেলতেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কয়েক মাস আগে জুয়া খেলার সময় সাইদুর আসামি রিপন ও কাজলের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নেন। কিছুদিন পর রিপন ও কাজল ধার নেওয়া টাকা পরিশোধ করতে সাইদুরকে বলেন। সাইদুর টাকা পরিশোধের একাধিক তারিখ দেন। সাইদুর ও রাসেলের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। টাকা উদ্ধারের জন্য রিপন ও কাজল সে সময় রাসেলের শরাণাপন্ন হন। টাকা পরিশোধের কথা বললে সাইদুরের সঙ্গে রাসেলের কথা–কাটাকাটি হয়। এতে কাজল ও রিপন নিহত সাইদুরের উপর ক্ষিপ্ত হন। ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে রিপন ও কাজল নিহত সাইদুরকে কড়ইকান্দি ফেরিঘাটে ডেকে নিয়ে টাকা পরিশোধ করতে চাপ দেন। সেখানে রাসেলও উপস্থিত হয়। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় আসামিদের সঙ্গে নিহত সাইদুরের ঝগড়া হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর টাকা পরিশোধ করবে বলে সাইদুর তাঁদের আশ্বস্ত করেন। কিন্তু টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ২৯ সেপ্টেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার কড়ইকান্দি ফেরিঘাটে দক্ষিণপাশের বাড়িতে বসে সাইদুরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রিপন, রাসেল ও কাজল। ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় সাইদুলকে কৌশলে ডেকে মেঘনপারের বাহেরচর গ্রামের মেঘনা নদীর তীরের এক জমিতে নিয়ে যান। একপর্যায়ে তারকাটা উঠানো রডের কাউয়াল দিয়ে সাইদুরকে প্রথমে ঘাড়ে এবং পরে পর্যায়ক্রমে গলায় ও ঘাড়ে আঘাত করে ও অবশেষে গলায় চেপে ধরে হত্যা করেন। পরে তাঁর লাশ মেঘনা নদীতে ফেলে দেন তাঁরা। ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বাহেরচর লঞ্চঘাটের মেঘনা নদীর পাড়ে সাইদুরের ক্ষতবিক্ষত ও গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন বাঞ্ছারামপুর থানার তৎকালীন ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।

উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের বাহেরচর দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা লোকমান মিয়া বাদী হয়ে রাসেলকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। নিহত সাইদুর সম্পর্কে লোকমানের স্ত্রীর বড় ভাই।

আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটার (পিপি) ফখর উদ্দিন আহমেদ খান বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর শ ধ করত ২০১৯ স ল র স প ট ম বর র ব হ রচর উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

লন্ডন বৈঠকে অবিশ্বাস দূর, সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের পথ সুগম হবে: সাইফুল হক

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক দেশে আগামী সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক অচলাবস্থা, সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করবে বলে আশা করছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। আজ শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন তিনি।

লন্ডনে দুই নেতার বৈঠকের বিস্তারিত সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করারও আহ্বান জানিয়েছেন সাইফুল হক।

সরকারের এই উদ্যোগ বিলম্বিত বোধদয়ের ফল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সাইফুল হক বলেন, আরও আগে সরকারের এই বোধদয় হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক ও রাজনৈতিক বিরোধ এড়িয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ মৌলিক কাজে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া যেত।

সব অংশীজনকে আস্থায় নিয়ে সরকারকে কাজ করার আহ্বান জানান সাইফুল হক। তিনি বলেন, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের রাস্তা সুগম হলো।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাইফুল হক বলেন, দেশের মানুষের অধিকার ও মুক্তি অর্জনে তাঁর দল জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আগামীতে আপসহীন ধারায় সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল ও মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক। সমাবেশে সংহতি জানান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহবায়ক শেখ আবদুর নূর।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম মীর, রেজাউল আলম, ফিরোজ আলী, কেন্দ্রীয় সংগঠক আইয়ুব আলী, বাবর চৌধুরী, ঢাকা মহানগর কমিটির নেতা মো. সালাউদ্দীন, মিজারুল রহমান ডালিম, আরিফুল ইসলামসহ পার্টির ঢাকা মহানগরের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোবাইল চুরির সন্দেহে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, আটক ৩
  • পাবনায় মুঠোফোন চুরির অভিযোগে যুবককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা
  • বগুড়ায় মেয়ে বিয়ে না দেওয়ায় বাবাকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩
  • লন্ডন বৈঠকে অবিশ্বাস দূর, সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের পথ সুগম হবে: সাইফুল হক
  • র‌্যাব পরিচয়ে উত্তরায় ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা ছিনতাই