সারাদেশের জেলা শিল্পকলা একাডেমির হলের ভাড়া কমলো। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ১২৫তম পরিষদ সভায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনসমূহের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। 

জানা গেছে, ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় ৭৫০ আসনের প্রধান মিলনায়তন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ভাড়া দেওয়া হয় ৬ হাজার টাকায়। ৩৫০ আসনের পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তন ভাড়া নিতে গুনতে হয় ৩ হাজার ৬০০ টাকা এবং স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনের জন্য ভাড়া দিতে হয় ২ হাজার ৪০০ টাকা। অন্যদিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৫০১ থেকে ১ হাজার আসনের মিলনায়তনের জন্য প্রথম তিন ঘণ্টা পর্যন্ত ৮ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। তবে যে  জেলায় শিল্পকলা একাডেমির আধুনিক ভবন হয়েছে, সেসব জেলায় এলইডি সুবিধা ব্যবহার করতে হলে আলাদা টাকা গুনতে হয়। সেখানে মোট ১৪ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হয়। এ ছাড়া তিন ঘণ্টার অতিরিক্ত ব্যবহার হলে প্রতি ঘণ্টায় (এসিসহ) বাড়তি ২,৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু ঢাকায় জাতীয় নাট্যশালায় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা এবং বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ব্যবহারে আলাদা কোনো টাকা দিতে হয় না। 

শিল্পকলা একাডেমির পরিষদ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলা শিল্পকলা একাডেমির  সেন্ট্রাল এসি সমৃদ্ধ হলের [৫০০ আসন] আসন ভাড়া করা হয়েছে চার হাজার টাকা। স্প্রিন্ট এসির হল ভাড়া [৫০০ আসন] হয়েছে তিন হাজার টাকা। মিলনায়তনে এলইডি লাইট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার টাকা।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির হল ভাড়া কমায় খুশি সাংস্কৃতিক কর্মীরা। এর মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে নাট্যচর্চা আরও প্রসারিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিল্পকলার এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। 

সংস্কৃতিকর্মী নিথর মাহবুব বলেন, ‘সারাদেশের সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য এটি একটি আনন্দের খবর। কর্তৃপক্ষকে এ রকম সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এমন সিদ্ধান্তে তৃণমূল পর্যায়ে নাট্যচর্চা আরও প্রসারিত হবে বলে মনে করছি।

খন্দকার শাহ আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিনের দাবির বাস্তবায়ন দেখে খুব ভালো লাগল। সারাদেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পরিষদ সভাপতি মাননীয় উপদেষ্টা ও পরিষদ সচিব, মহাপরিচালক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ সম্মানিত পরিষদ সদস্যগণের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ ধরনের প্রণোদনা সংস্কৃতির বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।’ 
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক

নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।

পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।

দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ