জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ, দলের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি
Published: 18th, February 2025 GMT
কারাবন্দী নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি ও দলের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এসব কর্মসূচিতে বক্তারা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি না দিলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে লড়াই করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
খুলনা
বিকেলে খুলনার ঐতিহাসিক শহীদ হাদিস পার্কে খুলনা মহানগর ও জেলা জামায়াত আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহনগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মাহফুজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান ও মহানগর সহকারী সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনা বক্তৃতা করেন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হুসাইন, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা কবিরুল ইসলাম, মহানগর সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন, বটিয়াঘাটা উপজেলা আমির মাওলানা শেখ মো.
সমাবেশের প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রশ্ন তুলে বলেন, আয়নাঘরসহ সব নিষ্ঠুরতার মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনার ১৭ বছরের কালোযুগে দেওয়া সব মিথ্যা মামলা ও কথিত রায়ে অনেকেই মুক্তি পেলেও জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম কেন এখনো কারাবন্দি।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে বিচারিক কার্যক্রম সারা বিশ্বে বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রত্যাখ্যাত উল্লেখ করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বৈরাচারের আমলে গ্রেপ্তার এ টি এম আজহারুল ইসলামকে কারাগারে আটক রাখা তাঁর প্রতি চরম জুলুম ও অন্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশবাসী স্বৈরাচারের কবল থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি চায় উল্লেখ করে তিনি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরের শহীদ পার্ক থেকে শুরু হয়ে পিকচার প্যালেস মোড়, ডাকবাংলো মোড়, ফেরিঘাট, পাওয়ার হাউস মোড় হয়ে শিববাড়ী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করে নভেম্বরে গণভোট, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিতে হবে
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে আগামী নভেম্বরে গণভোট এবং ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার স্বাধীনতা চত্বরে হিন্দু সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ দাবি জানান। ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু কমিটি এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, স্বাধীনতার পর যারাই দেশ চালিয়েছে, তারা সবাই হিন্দুদের ব্যবহার করে শুধু নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছে। এবার হিন্দুদের ভাগ্যের উন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামী সরকার।
গোলাম পরওয়ার বলেন, যারা দাঁড়িপাল্লার জোয়ার দেখে হিন্দুদের ভয়-হুমকি দিচ্ছে, তাদের হুমকিতে এবার হিন্দুরা ভয় পাবে না। হিন্দুদের কেউ বাধা দিলে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। এখন হিন্দুদের স্লোগান—সব মার্কা দেখা শেষ, দাঁড়িপাল্লার বাংলাদেশ।
সম্মেলনে ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি অধ্যক্ষ দেবপ্রসাদ মণ্ডলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি ও অতিরিক্ত জিপি অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের, শোভনা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন, শরাফপুর সর্বজনীন পূজা মন্দিরের ঘোসাই সাধু প্রমথ গাইন, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সহ-সভাপতি ডা. হরিদাস মন্ডল, কানাই লাল কর্মকার ও প্রভাষক প্রশান্ত কুমার মন্ডল, কোষাধ্যক্ষ গৌতম কুমার মন্ডল, পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুভাষ সরদার, মাগুরখালী ইউনিয়ন সহ-সভাপতি সুজিৎ কুমার সরকার, ডুমুরিয়া সার্বজনীন পূজা মন্দিরের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আপোষ সিংহ, ধামালিয়া ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুন্ডু, রুদাঘয়া ইউনিয়ন সভাপতি বিপ্লব সরকার, রঘুনাথপুর ইউনিয়ন সভাপতি কার্তিক চন্দ্র সরকার, খর্ণিয়া ইউনিয়ন সভাপতি নারায়ন রাহা, মাগুরঘোনা ইউনিয়ন সভাপতি বিশ্বনাথ দাস, সাহস ইউনিয়ন তন্ময় মন্ডল সভাপতি, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন সভাপতি নিরঞ্জন রায়, রংপুর ইউনিয়ন সভাপতি তরুন কুমার মন্ডল, শোভনা ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির মহিলা সম্পাদক শ্রীমতি প্রিয়ংকা মন্ডল, মাগুরখালী ইউনিয়ন সভাপতি প্রদীপ কুমার সরকার, আটলিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অনিমেষ মন্ডল, গুটুদিয়া ইউনিয়ন সভাপতি মনোরঞ্জন মন্ডল, শরাফপুর ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুমার বিশ্বাস, শোভনা ইউনিয়ন সভাপতি স্বদেশ হালদার, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অরুন কুমার আচার্য প্রমুখ।
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, ৫৪ বছর যারা দেশ চালিয়েছে, তারা সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে হিন্দুদের শোষণ করেছে। জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশ থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের নির্মূল করবে। দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, আমরা সেই পরিবর্তন আনতে চাই।
তিনি বলেন, “লাঙলের শাসন দেখেছি, ধানের শীষের শাসন দেখেছি, নৌকার শাসনও দেখেছি। একটি দলই বাকি- জামায়াতে ইসলামী, তার প্রতীক দাঁড়িপাল্লা।”
২০২৪ সালের আন্দোলনে দেড় হাজার শহীদ ও ৪০ হাজার আহতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাবি, চবি, রাবি, জাবিসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছে। আগামীতেও সেই বার্তা জনগণ দেবে।
সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী বলেন, “নতুন প্রজন্মের প্রথম ভোট দাঁড়িপাল্লার পক্ষে হোক।”
আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ারকে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান তিনি।
মতুয়া সংঘের সভাপতি ডা. সুদীপ্ত কুমার সুন্দর মন্ডল বলেন, “আমরা আর সংখ্যালঘু পরিচয় শুনতে চাই না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। স্বাধীনতার পর কোনো সরকার হিন্দুদের দাবিতে কাজ করেনি। এবার প্রমাণ হবে হিন্দু মানেই একটি নির্দিষ্ট দল নয়।”
এ সম্মেলনকে ঘিরে ডুমুরিয়ার ১৪টি ইউনিয়ন থেকে মিছিল নিয়ে আসেন হিন্দু সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক মানুষ। বাদ্যযন্ত্রসহ নারী-পুরুষ ও যুবকরা এতে অংশ নেন। সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল ডুমুরিয়া সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক