কুষ্টিয়া শহরে অটোরিকশার ধাক্কায় প্রাণ গেল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তার
Published: 19th, February 2025 GMT
কুষ্টিয়া শহরে রাস্তা পার হওয়ার সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে শহরের এন এস রোডের মুঘল কুইজিন নামের একটি রেস্তোরাঁর সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ইশরাত জাহান লাবনী (৪০) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক আমানুর আমান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইশরাত জাহান কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পান্টি বাজার এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহিদ হোসেন জাফরের মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ইশরাত জাহান মেয়ের সঙ্গে কুষ্টিয়া শহরের কাটাইখানা মোড় এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতে শহরের এন এস রোডের মুঘল কুইজিন রেস্তোরাঁর সামনে থেকে রাস্তা পার হচ্ছিলেন ইশরাত জাহান। এ সময় মজমপুর রেলগেটের দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগতির ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা তাঁকে ধাক্কা দেয়। তিনি রাস্তায় পড়ে গিয়ে কানে ও মাথায় আঘাত পান। রক্তক্ষরণ হলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, রাত ৯টা ৫ মিনিটে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির আধা ঘণ্টার ভেতরে তাঁর মৃত্যু হয়। আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় নাক ও কান দিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।
এদিকে ইশরাত জাহান লাবনীর মৃত্যুর খবর শোনার পর হাসপাতালে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে স্বজনেরা স্থানীয় এক গণমাধ্যমকর্মীর ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এই নিয়ে নিহতের স্বজনদের সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের হট্টগোল বাধে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক আমানুর আমান বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। অর্থ ও হিসাব বিভাগ থেকে তাঁকে তথ্য ও জনসংযোগে সহকারী রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বুধবার তাঁর যোগদান করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি কোনো কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারছেন না বলে মুঠোফোনে জানিয়েছিলেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম বলেন, একজন নারী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। খবর শোনার পরেই হাসপাতালে এসেছেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইশর ত জ হ ন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।