‘সবকিছু দিচ্ছে, কিন্তু চাল কেন দিচ্ছে না’
Published: 20th, February 2025 GMT
পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে আর ১০ দিনের মতো বাকি। ইতিমধ্যে কেউ কেউ রোজার বাজার করতে শুরু করেছেন। আবার কেউ হিসাব-নিকাশ করে মাস শেষে শুরু করবেন। তাঁদের একজন চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ লিয়াকত আলী। পঞ্চাশোর্ধ্ব লিয়াকত আলী স্ত্রী আর এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন কাজীর দেউড়ির ব্যাটারি গলি এলাকায়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কাজীর দেউড়ি বাজারের পাশে কথা হয় লিয়াকত আলীর সঙ্গে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। বাজারের ব্যাগ হাতে পণ্যের জন্য প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন লিয়াকত আলী। গরমে কিছুটা হাঁপিয়ে উঠলেও ট্রাক আসার পর অনেকটা স্বস্তি দেখা যায় তাঁরা চোখে।
মোহাম্মদ লিয়াকত আলী বলেন, বাসার সামনেই ফার্মেসি রয়েছে তাঁর। তবে বর্তমানে ব্যবসা কিছুটা মন্দা। শরীরের কারণে সেভাবে দোকানে বসা হয় না। ছেলের একার আয়ে সংসার চালাতে বেগ পেতে হয়। সামনে রোজা তাই টিসিবির পণ্য নিতে এসেছেন সকাল সকাল। তবে ট্রাক আসতে দুপুর হয়ে যাওয়ায় দেরি হয়েছে। তবে পণ্য পাওয়ার পর তাঁর প্রশ্ন, ‘সবকিছু দিচ্ছে, কিন্তু চাল কেন দিচ্ছে না?’
নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের ২৪ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম নগরে ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। গত ৩১ ডিসেম্বরের পর এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। রমজান মাস উপলক্ষে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার এ কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি।
ক্রেতাদের যত অভিযোগচট্টগ্রাম নগরে প্রতিদিন ২০টি ওয়ার্ডের চার হাজার গ্রাহকের কাছে ট্রাকে করে তেল, ডাল, চিনি, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারবেন। সব মিলিয়ে এর মূল্য ৫৮৮ টাকা। প্রতি ট্রাকে বরাদ্দ ২০০ জনের। অথচ প্রায় প্রতিটি ট্রাকের পেছনেই ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষের সারি দেখা যায়।
আজ নগরের ১ থেকে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আমানবাজার, বালুছড়াবাজার, হিলভিউ, শুলকবহর, কাজীর দেউড়ি, কালামিয়া বাজারসহ ২০টি স্থানে পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। এদিন নগরের কাজীর দেউড়ি, সিরাজউদ্দৌলা সড়ক ও ঘাট ফরহাদবাগ এলাকা—এই তিন স্থানে পণ্য না পেয়ে অন্তত ১০০ জন করে ক্রেতা ফিরে গেছেন।
কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে কাউন্সিলর অফিস থেকে বিষয়গুলো জানিয়ে দেওয়া হতো। টোকেন দিয়ে পণ্য বিক্রি হলেও অনেক ক্রেতা আগে পণ্য নেওয়ার জন্য লাইন ভেঙে সামনে চলে যান। ধাক্কাধাক্কিতে অনেকে টোকেন পান না। এ কারণে বিশৃঙ্খলা, ধাক্কাধাক্কি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। আবার ট্রাকের বিক্রেতারা ক্রেতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।
জানতে চাইলে টিসিবি চট্টগ্রামের যুগ্ম পরিচালক মো.
নগরে এক সপ্তাহ ধরে টিসিবির কার্যক্রমে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা হলে অধিকাংশ ক্রেতাই চাল না দেওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ জানান। নগরের আন্দরকিল্লা এলাকার বাসিন্দা নুর হোসেন বলেন, রোজায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ছোলা ও চালের। কিন্তু এখনো চাল দেওয়া হচ্ছে না। একই দাবি ইপিজেড এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম আক্তারের। তিনি বলেন, আগে চাল দিলেও এখন দিচ্ছে না।
জানা গেছে, আগে ট্রাকে করে খোলাবাজারে চাল বিক্রি করত খাদ্য অধিদপ্তর। বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন টিসিবি ৩০ টাকা দরে এসব চাল বিক্রি করে। চলতি মাসে অনুমোদন না নেওয়ার কারণে চাল বিক্রি হচ্ছে না। এর বাইরে নগরে প্রতিদিন ২৫ টন ও প্রতি উপজেলায় ৩ টন করে ওএমএস দোকানের মাধ্যমে চাল বিক্রি করে খাদ্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন প্রথম আলোকে বলেন, এটি আন্তমন্ত্রণালয়ের বিষয়, তবে আমাদের চালের ঘাটতি নেই। অনুমোদন না থাকায় টিসিবিকে চাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। রোজায় ট্রাকে চাল থাকছে কি না, এটিও টিসিবির আওতায়। অনুমোদন নেওয়া হলে আমরা তাঁদের চাল দিতে পারব।
টিসিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তাঁরা পাননি। তবে গত সোমবার অনুষ্ঠিত ডিসি সম্মেলনে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার জানিয়েছেন, আগামী মার্চ ও এপ্রিল মাসে টিসিবির মাধ্যমে আরও ৫০ হাজার টন করে দুই মাসে ১ লাখ টন চাল বিতরণ করা হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।